সারাদিন ঔষধি ডেস্ক:: আশ্চর্য গুণের সোনাপাতা: সোনা পাতার গুণ/ সোনা পাতার উপকারিতা জেনে নিন
বাংলা নাম: সোনা পাতা, সোনামুখী
আরবি নাম: সোনামাক্কী
ব্যবহার্য অংশ: পাতা, ফুল ও ফল। তবে পাতার ব্যবহারই বেশী।
হাদিসে সোনাপাতা সম্পর্কে বলা হয়েছে আসমা বিনেত উমাইস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল পাক (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি জুলাবের জন্য কী ব্যবহার কর? তিনি শিবরমের নাম বললেন। তখন রসুলে পাক (সা.) বললেন ‘এটা খুবই গরম।’ অতএব হজরত আসমা (রা.) পুনরায় আরজ করলেন, ‘আমি সোনাপাতা দ্বারা জুলাব নেই।’ তখন রসুলে পাক (সা.) এরশাদ করলেন, ‘যদি কোনো জিনিসের দ্বারা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যেত তবে তা সোনাপাতার দ্বারা পাওয়া যেত।’ তোমরা অবশ্যই সোনাপাতা ব্যবহার করবে, কেননা এটা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের শেফাদানকারী মহৌষধ।’ – ( আত-তিরমিযী, হাদিস নং ২০৩১)
পরিচিতি:
সোনাপাতা বীরুৎ জাতীয় পাতা। দেখতে অনেকটা মেহেদি পাতার মতো এবং হালকা একটা বুনো গন্ধ আছে এই ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদে। পাতার রং কাঁচা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ এবং শুকানো হলে হলুদাভ সোনালি বর্ণ হয়। অক্ষের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ মাথায় হলুদ রঙের ফুল ফোটে। ফুল সাদা বা গোলাপি রঙের হয়। ফলে শিমজাতীয় নলাকার বা চ্যাপ্টা হয়। ফলের ভিতরে আড়াআড়িভাবে বীজ থাকে। সুদান, সোমালিয়া, সিন্দু প্রদেশ, পাঞ্জাব ও দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যিকভাবে সোনাপাতার চাষ করা হয়। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনাপাতা পাওয়া যায়। আরব দেশের জঙ্গলে সোনাপাতা প্রচুর পরিমাণে জন্মে থাকে। গাছটি মুলত উষ্ণমন্ডলীয়। ফলে দেশ সমূহে বেশী জন্মে।
এর পাতা কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করতে চমৎকার কাজ করে। শরীরের ওজন কামায়, ও উচ্ছ রক্ত চাপ কামতে সাহাজভ করে।সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে কাজ করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়।
সোনাপাতার রাসায়নিক উপাদান
সোনা পাতায় আছে ১.৫-৩% হাইড্রোজায়ানথ্রাসিন গ্লাইকোসাইড, প্রধানত সেনোসাইড এ এবং বি যা রেইন-হায়ানথ্রোন এবং কম পরিমাণে সেনোসাইড সি এবং ডি যা রেইন-এলো-ইমোডিন-হেটেরোডায়ানথ্রোন, ন্যাপথলিন গ্লাইকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েড(কেম্পফেরল এবং আইসো-রামানিটিন এর ডেরিভেটিভ), ১০-১২% খনিজ উপাদান, ৭-১০% মিউসিলেজ(গ্যালাক্টোজ, এরাবিনোজ, রামনোজ এবং গ্যালাকটিউরোনিক এসিড), প্রায় ৮% পলিঅল (পিনিটল); সুগার(গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ) এবং রেজিন।
ঔষধী ব্যবহার
সোনা পাতায় বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলির কারণে এটা প্রধানত জোলাপ বা রেচক হিসেবে বেশী ব্যবহৃত হয়। কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করতে চমৎকার কাজ করে। সোনা পাতায় বিদ্যমান এনথ্রানয়েড রেচক হিসেবে উদ্দীপনা যোগায় এর কারণ হল সেনোসাইড এবং রেইন এনথ্রোন হজম প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। রেচক (Laxative effect) বা শীতলকারক হওয়ার ফলে বৃহদন্তে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় যা ইনটেস্টাইন্যাল উপাদান গুলোর ভলিউম এবং চাপ বৃদ্ধি করে। এতে কোলনের সঞ্চালন উদ্দীপিত হয়। ফলে খুব অল্প সময়ে এবং খুব সহজেই মল দেহ থেকে বাইরে নিষ্কাষিত হয়।
বিশ্ব হার্বাল গবেষণা ইন্সটিটিউট এই ভেষজ উদ্ভিদকে অত্যন্ত শক্তিশালী ভেষজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কমিশন ই(E) কোষ্ট-কাঠিন্য নিরাময়ের জন্য সোনাপাতা গ্রহণের অনুমতি দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মাঝে মধ্যে সংঘটিত কোষ্ট-কাঠিন্য দূর করার জন্য স্বল্প সময়ের চিকিৎসা হিসেবে সোনাপাতা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে সোনা পাতা ভেষজ হিসেবে সরাসরি ব্যবহারের চাইতে এর পাউডার নিয়মিত খেলে শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়।
সোনাপাতায় বিদ্যমান ইমোডিন বিভিন্ন পরিমাণে চিকিৎসায় ব্যবহা করা হয়। প্রদাহ নাশ করতে ১৫ মি.গ্রা./ কেজি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এন্টি সেপটিক ও এন্টি আলসার হিসেবেও এটা কাজ করে।
এন্হ্রাকুইনোন সাইটোটক্সিক এবং কোষ পুনরুদ্ধার-এ রিজেনারেশনে উদ্দীপনা জাগায়, ডিটক্সিফিকেশন এবং পরিষ্কারক হিসেবেও কাজ করে।
সোনা পাতার চা:সোনা পাতার চা খেতে সামান্য মিষ্টি এবং অধিক তিতা যদি কড়া করে বানানো হয়। তাই, সাধারণ চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
সোনা পাতা খাওয়ার নিয়ম:
প্রতিদিন ২০-৪০ মিলি গ্রাম রাতে পাতা এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
সকালে আবার আল্প পরিমান গরম পানি তাতে মিশিয়ে চায়ের মত পান করতে হবে। সাথে ৩-৪ টি পাহড়ি হরতকি গুরা কে দিলে ভাল হয়।
অথবা
রাতে আধা চা চামুচ বিডি হেলথ সোনাপাতা পাউডার আধা গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে ছেকে নিয়ে অল্প পরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে চায়ের মত পান করতে হবে। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে । বিডি হেলথ সোনাপাতা পাউডার কিনুন এবং যথা নিয়মে সেবন করে সুন্নত পালন করুন এবং বোনাস হিসেবে পান বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা।