ঢাকা ০১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিস এর কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

আজম রেহমান সারাদিন ডেস্ক:: ডায়াবেটিস রোগকে চিকিৎসা পরিভাষায় ডায়াবেটিস মেলিটাস নামেও ডেকে থাকেন। এটি একটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এই রোগ হলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেড়ে যায়। এখন তো ঘরে ঘরে একজন করে ডায়াবেটিস রোগী। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ডায়াবেটিসের প্রকোপ যে আরো ভয়ানকভাবে বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তো প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ডায়াবেটিস মূলত দু’ধরনের হয়– টাইপ–১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিস।

যখন আপনার শরীর একেবারেই ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না তখন টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়। ইনসুলিন একপ্রকার হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ে (প্যানক্রিয়াস)-এ তৈরি হয়। আপনার পরিপাকতন্ত্র খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে আপনার রক্তে প্রেরণ করে। সাধারণত ইনসুলিন রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ নিয়ে যায় এবং কোষের ভেতর গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। তবে আপনার টাইপ–১ ডায়াবেটিস থাকলে আপনার শরীরে রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন ইনসুলিন থাকে না।
কিসের জন্য টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়?

টাইপ –১ ডায়াবেটিস কি কারণে হয় তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে ধারনা করা হয় যে এটি সাধারণত কোন ধরনের অটোইমিউন (টর্লমধববভলণ) জটিলতার কারণেই হয়ে থাকে। অটোইমিউন জটিলতা হল যখন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আপনার শরীরের ভেতরের কোন স্বাভাবিক কোষকে ক্ষতিকর মনে করে আক্রমণ করে। টাইপ–১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ধারনা করা হয় যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোন কারণে অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। এতে অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয় যে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক কি কারণে এটি হয় তা এখনো অজানা– তবে কিছু গবেষকেরা মনে করেন যে কোন প্রকার ভাইরাসজনিত সংক্রমণই এর জন্য দায়ী। যেহেতু টাইপ–১ ডায়াবেটিস সাধারণত একই পরিবারের অনেকেরই হয়, তাই এটি জিনগত কারণেও হতে পারে। আপনার বাবা–মা, ভাই–বোন কারো টাইপ–১ ডায়াবেটিস থাকলে আপনারও এতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৬%। নিকট আত্মীয়ের টাইপ–১ ডায়াবেটিস না থাকলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ০.৪%। অনেক সময় অগ্ন্যাশয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের (ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস) কারণেও টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়। অগ্ন্যাশয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের ফলে আপনার অগ্ন্যাশয় ফুলে যায়– যার ফলে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। ফলে রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হলে বারবার প্রস্রাবের চাপ, ক্ষিদে বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস অথবা বৃদ্ধি, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া এবং মাথা যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণগুলি দেখা যায়।
টাইপ–২ ডায়াবেটিসের প্রসঙ্গে কিছু জরুরি তথ্য পরিবেশন করা হল যা সবার জেনে রাখা জরুরি।

১. এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা অল্প বিস্তর মিষ্টি খেতেই পারেন। তাতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মিষ্টির দিকে ফিরেও তাকাবেন না।

২. অনেকে মনে করেন জিনগত কারণে টাইপ–২ ডায়াবেটিস হয়। এই কথা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। কারণ একাধিক কেইস স্টাডি করে দেখা গেছে বেশির ভাগ টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী তাদের জীবনযাত্রার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হন। খুব কম ক্ষেত্রেই জিনগত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

৩. সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে– যেসব নারীর পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রম আছে তাদের টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এমনটা হয় মূলতঃ কিছু হরমোনের পরিবর্তনের কারণে।

৪. মা যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজনের বাচ্চা প্রসব করেন তাহলে আগামী সময়ে গিয়ে তার টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এমনটা হয় মূলত হরমোনের পরিবর্তন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে।
৫. ঠিক সময়ে যদি টাইপ–২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু করা না হয় তাহলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধি এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই যথা সময়ে এই রোগের ট্রিটমেন্ট শুরু করাটা জরুরি। ৬ : ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করার পাশাপাশি রোগী যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখেন তাহলে অনেকাংশেই টাইপ–২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

ডায়াবেটিস এর কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

আপডেট টাইম ০৭:৩৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মার্চ ২০১৮

আজম রেহমান সারাদিন ডেস্ক:: ডায়াবেটিস রোগকে চিকিৎসা পরিভাষায় ডায়াবেটিস মেলিটাস নামেও ডেকে থাকেন। এটি একটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এই রোগ হলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেড়ে যায়। এখন তো ঘরে ঘরে একজন করে ডায়াবেটিস রোগী। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ডায়াবেটিসের প্রকোপ যে আরো ভয়ানকভাবে বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তো প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ডায়াবেটিস মূলত দু’ধরনের হয়– টাইপ–১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিস।

যখন আপনার শরীর একেবারেই ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না তখন টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়। ইনসুলিন একপ্রকার হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয়ে (প্যানক্রিয়াস)-এ তৈরি হয়। আপনার পরিপাকতন্ত্র খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে আপনার রক্তে প্রেরণ করে। সাধারণত ইনসুলিন রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ নিয়ে যায় এবং কোষের ভেতর গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়। তবে আপনার টাইপ–১ ডায়াবেটিস থাকলে আপনার শরীরে রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন ইনসুলিন থাকে না।
কিসের জন্য টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়?

টাইপ –১ ডায়াবেটিস কি কারণে হয় তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, তবে ধারনা করা হয় যে এটি সাধারণত কোন ধরনের অটোইমিউন (টর্লমধববভলণ) জটিলতার কারণেই হয়ে থাকে। অটোইমিউন জটিলতা হল যখন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আপনার শরীরের ভেতরের কোন স্বাভাবিক কোষকে ক্ষতিকর মনে করে আক্রমণ করে। টাইপ–১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ধারনা করা হয় যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোন কারণে অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। এতে অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয় যে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক কি কারণে এটি হয় তা এখনো অজানা– তবে কিছু গবেষকেরা মনে করেন যে কোন প্রকার ভাইরাসজনিত সংক্রমণই এর জন্য দায়ী। যেহেতু টাইপ–১ ডায়াবেটিস সাধারণত একই পরিবারের অনেকেরই হয়, তাই এটি জিনগত কারণেও হতে পারে। আপনার বাবা–মা, ভাই–বোন কারো টাইপ–১ ডায়াবেটিস থাকলে আপনারও এতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৬%। নিকট আত্মীয়ের টাইপ–১ ডায়াবেটিস না থাকলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ০.৪%। অনেক সময় অগ্ন্যাশয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের (ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস) কারণেও টাইপ–১ ডায়াবেটিস হয়। অগ্ন্যাশয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের ফলে আপনার অগ্ন্যাশয় ফুলে যায়– যার ফলে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। ফলে রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হলে বারবার প্রস্রাবের চাপ, ক্ষিদে বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস অথবা বৃদ্ধি, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া এবং মাথা যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণগুলি দেখা যায়।
টাইপ–২ ডায়াবেটিসের প্রসঙ্গে কিছু জরুরি তথ্য পরিবেশন করা হল যা সবার জেনে রাখা জরুরি।

১. এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা অল্প বিস্তর মিষ্টি খেতেই পারেন। তাতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মিষ্টির দিকে ফিরেও তাকাবেন না।

২. অনেকে মনে করেন জিনগত কারণে টাইপ–২ ডায়াবেটিস হয়। এই কথা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। কারণ একাধিক কেইস স্টাডি করে দেখা গেছে বেশির ভাগ টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী তাদের জীবনযাত্রার কারণে এই রোগে আক্রান্ত হন। খুব কম ক্ষেত্রেই জিনগত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

৩. সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে– যেসব নারীর পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রম আছে তাদের টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এমনটা হয় মূলতঃ কিছু হরমোনের পরিবর্তনের কারণে।

৪. মা যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজনের বাচ্চা প্রসব করেন তাহলে আগামী সময়ে গিয়ে তার টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এমনটা হয় মূলত হরমোনের পরিবর্তন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে।
৫. ঠিক সময়ে যদি টাইপ–২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু করা না হয় তাহলে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ওজন বৃদ্ধি এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই যথা সময়ে এই রোগের ট্রিটমেন্ট শুরু করাটা জরুরি। ৬ : ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করার পাশাপাশি রোগী যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখেন তাহলে অনেকাংশেই টাইপ–২ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।