তারা হলেন, তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারি তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান।
তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাসুম বিল্লাহ ও মুশফিকুর রহমানকে ৫ দিন করে এবং শাহানুর আলম ও ওমর ফারুককে ৩ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান।
এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রে যে ঘটনা ঘটে তাতে প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে এই ৫ জনকে দায়ী হিসাবে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে যশোরের পুলিশ সুপার মো. আশরাফ হোসেন এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। অনেকের সাথে কথা বলেছি। তাতে বিষয়টি পরিষ্কার, আটক এই ৫ জন দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাদের দায়িত্ব নিতেই হবে।
আমরা অভিযোগ পেয়েছি, অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত তাদের ডেকে নেয়া কিশোরদের মারপিট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কয়েক কর্মকর্তা। মারপিটের সাথে জড়িত ৭/৮ জন বন্দি কিশোরও জড়িত বলে পুলিশ সুপার বলেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এখানে যারা বন্দি আছে এদের অনেকেই হত্যা ও ধর্ষণের মত ঘটনার সাথে জড়িত। সংশোধিত হওয়ার জন্য তারা দীর্ঘদিন এখানে আছে। এদের একটি গ্রুপের সাথে কর্তৃপক্ষের ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। কর্মকর্তাদের অনুগত এই গ্রুপ দিয়েই ১৩ বন্দি কিশোরের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। সেই ৭/৮ জন কারা তা তদন্ত করে বের করা হবে।
প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রের ৫ কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় যে মামলা করা হয়েছে তা তদন্ত করবেন চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান। ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে, বলেন পুলিশ সুপার মো. আশরাফ হোসেন।
কেন বন্দি কিশোরদের ওপর নির্যাতন চালানো হলো- জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ৩ আগস্ট কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী নুরুল ইসলাম তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন হৃদয় নামে এক বন্দিকে। কিন্তু হৃদয় দেয়নি। সে বলে আগের দিন দুইশ’ জনের চুল কাটা হয়েছে। তাই সে ক্লান্ত, এখন না পরে চুল কেটে দেবে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে নুরুল ইসলাম কয়েক কিশোরের বিরুদ্ধে মাদক সেবন করার অভিযোগ দেন কেন্দ্রের পরিচালকের কাছে।
“হৃদয় ও পাভেল নামে দুই যুবকের মধ্যে সমকামীতারও অভিযোগ করে নুরুল ইসলাম। এতে ওই কিশোররা ক্ষুব্ধ হয়ে নুরুল ইসলামকে মারপিট করে। এতে তার হাত ভেঙে যায়। এরপর কেন্দ্রের কর্মকর্তা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হন ১৩ কিশোর নুরুল ইসলামের মারপিটের সাথে জড়িত।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে শোক দিবসের অনুষ্ঠান কীভাবে হবে এ লক্ষ্যে আলোচনা সভা শেষে কর্মকর্তারা ওই ১৩ কিশোরকে তাদের কাছে ডেকে নেন। সেইসাথে ডেকে আনেন তাদের অনুগত ৭/৮ বন্দি কিশোরকে। তাদের দিয়েই ওই ১৩ কিশোরকে মারপিট করা হয়। হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়।
নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এমনো ঘটনা ঘটেছে একজনকে জানালার ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে অপর পাশ থেকে দু’জন তাকে টেনে ধরে রাখে। এরপর পা থেকে কোমর পর্যন্ত বেদম পেটানো হয়। কর্তৃপক্ষের কয়েকজনের নির্দেশনা ছিলো, সেন্সলেস না হওয়া পর্যন্ত পেটানোর। বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগও আমরা পেয়েছি।
প্রেস ব্রিফিং-এ আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পূলিশ সুপার (ক) সার্কেল গোলাম রব্বানী, কোতয়ালি থানার ওসি মো মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক রকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, ৫ আসামিকে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। এছাড়া মামলার আরো ৫ সাক্ষির জবানবন্দী বিচারক ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা) সাক্ষীদের জাবনবন্দী নেয়া হচ্ছিল।