পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোথাও গেরুয়া শিবিরের তরফে রোববার কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। তবে টুইট করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর যারা ইস্তাহার বানিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ অনেক কষ্টে মনে করলেন; বললেন, ‘সত্যিই ভুলে গিয়েছিলাম।’
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিস্মৃত প্রায় বাঙালি কাদম্বিনীর নাম মনে করিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র পাশ করা প্রথম বাঙালি মেয়ে কাদম্বিনী, সারা জীবন সমাজজীবনে প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। কিন্তু নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে তিনি ভোট প্রতিশ্রুতির যুদ্ধে জায়গা পেয়ে যান।
বাংলার নির্বাচনী ইস্তাহারে ‘কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তহবিল’-এর কথা বলে বিজেপি। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। জিতলে প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি। প্রতিটি ব্লকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। গোটা প্রকল্পের শিরোনামে থেকে যাবেন কাদম্বিনী। বিজেপি-র নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। সেই সঙ্গে কাদম্বিনীও যেন বিস্মৃতির অতলে।
বাঙালি নারীর অধিকারের লড়াইয়ে কাদম্বিনীর ভূমিকা নানাভাবে আলোচিত। অনেক সামাজিক বাধা ডিঙিয়ে শুধু ডাক্তারি পাশ করেননি, ডাক্তারিও করেছেন। মহিলাদের উজ্জীবিত করেছেন স্বাবলম্বী জীবনের জন্য। পরিবারও সামলেছেন এর মধ্যে। ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তথাকথিত হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তার বিরোধ বেধেছে। উগ্র হিন্দুরা তাকে ‘স্বৈরিণী’ বলে ব্যঙ্গচিত্র পর্যন্ত ছেপেছে। এমন এক মেয়ের নাম নীলবাড়ির লড়াই-এর নির্বাচনী ইস্তাহারে এসে যায়। ২১ মার্চ কলকাতায় সেই ইস্তাহার প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আলাদা করে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও উচ্চারণ করেছিলেন।
রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভোটারদের মনে রাখা, আর ভোট মিটে গেলে ভুলে যাওয়ার অভিযোগ সনাতন। বাম থেকে বিজেপি – সব জমানাতেই হাটে-মাঠে-বাটে সাধারণের এ অভিযোগ শোনা যায়। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি! বিজেপি ইস্তাহার কমিটির অন্যতম সদস্য রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, ‘মনে ছিল। কিন্তু সে ভাবে পালন করার কথা ভাবা হয়নি। আসলে চারদিকে এত গোলমাল, কর্মীরা ঘরছাড়া। তার মধ্যে আলাদা করে কোনও অনুষ্ঠান করার কথা ভাবা হয়নি।’
ওই কমিটির আর এক সদস্য রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত যেন আনন্দবাজার অনলাইনের ফোন পেয়েই কাদম্বিনীর জন্মদিনের কথা জানলেন। বললেন, ‘আমি এখন কিছু মন্তব্য করব না।’ আর এক সদস্য বিজেপি-র তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জবাব, ‘রাজ্য দলের নেতাদের প্রশ্ন করুন। ওই কমিটির প্রধানের কাছে জানতে চান।’ ওই কমিটির প্রধান চিকিৎসক সুভাষ সরকার এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শোনা যায়, চিকিৎসক সাংসদের ইচ্ছাতেই কাদম্বিনী জায়গা পেয়েছিলেন ভোটের ইস্তাহারে। রোববার বারংবার ফোন করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা জানিয়েছেন, ‘করোনা পরিস্থিতির জন্য কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না।’
বিজেপি এমন গা বাঁচানো যুক্তি দিলেও রোববারই ভার্চুয়াল মাধ্যমে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’। সেখানে অন্যতম বক্তা টিভিতে ‘প্রথমা কাদম্বিনী’ ধারাবাহিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করা শোলাঙ্কি রায়। বাঙালি সমাজে কাদম্বিনীর গণপরিচয়টা শুরু হয় বছর খানেক আগে। দু’টি টিভি ধারাবাহিকের দৌলতে বাঙালির বৈঠকখানায় জায়গা পেয়েছিলেন দেশের প্রথম মহিলা লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসক। রোববার পশ্চিমবঙ্গে গুগলের ডুডলেও রয়েছে কাদম্বিনী স্মরণ।