আজম রেহমান::ফ্রান্সের প্যারিসে ওয়ান প্লানেট সামিটে নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে এই সম্মেলন হচ্ছে। আজ এখানে ওয়ান প্লানেট সামিটে উচ্চপর্যায়ের সভায় এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যদিও এই ঝুঁকির জন্য আমরা দায়ী নই।
তিনি বলেন, আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রশমন ও অভিযোজন করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এর আগে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্ব নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এমন পর্যায়ে বেঁধে রাখার উদ্যোগে নেওয়া হবে, যাতে তা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারপূরণ এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, একমাত্র দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে নিরাপদ করতে পারি। আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার ও কর্মকান্ড শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় জিডিপি’র ১ শতাংশ ব্যয় করে আসছে।
সকল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ কর্মকান্ডে ওয়াটার সাসটেইনেবিলিটি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তাঁর অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষায় ৫০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার জনগণকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভাঙন এবং লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষায় সবুজ বেষ্টনি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমি এসব এলাকায় বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে বনায়ন ২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ফলে বিদ্যমান বনভূমি ২২ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, পার্টনারদের সমর্থনসহ আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এই টার্গেট পূরণে আমরা প্রচেষ্টা জোরদার করব।
এসময় রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আগমনের ফলে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের ওপর মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবিক কারণে আমরা কক্সবাজারে ১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর বনভূমির উপর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। প্রলম্বিত এই উদ্বাস্তু সমস্যা ওই অঞ্চলে আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে সেখানে পরিবেশ সুরক্ষা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছে।
এ শীর্ষ সম্মেলনে একশ’ বিশ্ব নেতাসহ বেসরকারি সংগঠন, ফাউন্ডেশন এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রায় ২ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ওয়ান প্লানেট সামিটে আসা নেতৃবৃন্দের সম্মানে এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।