সারাদিন ডেস্ক:: নতুন মন্ত্রিসভার আকার হচ্ছে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট। এর মধ্যে মন্ত্রী ২৪ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৯ জন ও উপমন্ত্রী হচ্ছেন ৩ জন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। এর আগে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, তাদের নাম জানাতে রোববার বিকেল ৫টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট পেয়েছে মাত্র সাতটি আসন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিরা ছাড়া গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নেন।
জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট, টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন শেখ হাসিনা।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশভাগের ৯ ভাগ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
বঙ্গভবনে সোমবার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। রোববার দুপুর থেকে শপথ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা ফোন করছেন সংশ্লিষ্টদের। এর আগে গণভবন থেকে বেলা দেড়টার দিকে তালিকা নিয়ে সচিবালয়ে ফেরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এর আগে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, তাদের নাম জানাতে রোববার বিকেল ৫টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোন পেয়েছেন যারা
বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ শিং, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য দীপু মনি, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ।
এছাড়া চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, রংপুরের সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি, বর্তমান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বর্তমান কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম শপথ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ফোন পেয়েছেন।
টেকনোক্র্যাট কোটায় শপথ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন মোস্তাফা জব্বারও।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনোদের বেশির ভাগই রাখা হচ্ছে না। ৪৬ সদস্যের মন্ত্রিসভায় অধিকাংশই হচ্ছেন নতুন মুখ। এমনকি হেভিওয়েট মন্ত্রীরাও বাদ যাচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোটের অন্য কোনো দলের কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না নতুন মন্ত্রিসভায়।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। শপথ নেয়া পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা বহাল থাকবে। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যের। তবে নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট চারমন্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়।