সংবাদ সারাদিন ডেস্ক::রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ইউএনও’র সিএ (কনফিডেন্সিয়াল অ্যাসিস্টেন্ট) আকমল হোসেন দীর্ঘ ১১ বছর ৩ মাস ধরে বাড়ি ভাড়া না দিয়েই সরকারি বাসা ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অদৃশ্য খুঁটির জোরে বাড়ি ভাড়ার প্রায় ১৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর আকমল হোসেন উপজেলা নির্বাহীর কার্যালয়ে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট পদোন্নতি পেয়ে সিএ কাম উচ্চমান সহকারী হিসেবে একই কর্মস্থলে যোগদান করেন তিনি।
কিন্তু সিএ আকমল ২০০৭ সালে যোগদানের পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই উপজেলা পরিষদ এলাকায় কর্মচারীদের জন্য নির্মিত সরকারি জোড়াবাড়ি বাসভবনের প্রথমতলার পূর্বপাশের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। তার মূল বেতন ২৬ হাজার ১২০ টাকা। ওই বেতনের ৪০ শতাংশ হিসাবে প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ পান ১০ হাজার ৪৪৮ টাকা। সরকারি বাড়িতে বসবাস করলে প্রতি মাসে বাসা ভাড়ার টাকা কেটে বেতন উত্তোলন করতে হয়। কিন্তু সিএ আকমল হোসেন যোগদানের পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১১ বছর ৩ মাস বেতন থেকে বাড়ি ভাড়ার টাকা জমা করেননি। এভাবে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১৪ লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। পাশাপাশি অদৃশ্য খুঁটির জোরে সিএ আকমল প্রায় একযুগ ধরে একই কর্মস্থলে থাকায় বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
একই সঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে কয়েক লক্ষাধিক টাকা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে সুদের ওপরে দিয়েছেন। এসব বিষয় ওই কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অন্যান্য স্টাফরা জানলেও হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করতে সাহস পান না কেউ।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুর রহিম বলেন, ইউএনও’র সিএ সরকারি বাসবভনে বসবাস করছেন এটা আমি জানতে পেরেছি। কিন্তু বাসাবাড়ি বরাদ্দ কমিটি থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো না হলে কারও বেতন থেকে বাড়ি ভাড়া কর্তন করতে পারি না। কারণ প্রতি মাসে হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া উপজেলা পরিষদের নির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে ব্যাংকে জমা করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে সিএ আকমাল হোসেন বলেন, আমি যে জোড়াবাড়ি ভবনে বসবাস করছি, সেটি পরিত্যক্ত হিসেবে রেজুলেশন আছে। তবে পরিত্যক্ত ভবনে অন্য স্টাফরা কিভাবে বসবাস করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকৌশলী সফিউল আলম বলেন, উপজেলা পরিষদে তৃতীয় শ্রেণির স্টাফদের জন্য নির্মিত জোড়াবাড়ি ভবনটি পরিত্যক্ত নয়। কারণ, ওই ভবনে আমার কার্যালয়ের সহকারী আ. কুদ্দুছসহ তিনজন বাসা বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ সিএ আকমল হোসেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিনা ভাড়ায় সরকারি বাড়ি ব্যবহার করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম নাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার কার্যালয়ের সিএ যোগদানের পর থেকে সরকারি বাড়িতে বসবাস করলেও নির্ধারিত বাড়ি ভাড়া সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছেন না তা এইমাত্র জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।