ঢাকা ০১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ড. মো. হারুনুর রশীদ পরিচালিত সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া বুধা’ মুক্তি পেয়েছে ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকের কান্না, ২মন ধানে ১কেজি গরুর মাংস

জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা চরমভাবে হতাশ। ২ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৩৬০ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ টন আর এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ টন হচ্ছে।

দাম কম থাকার কারণে অধিকাংশ কৃষক গত বছর ধান বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলার চন্দরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমি এ বছর ২৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রায় ১২শত মণ ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমার পরিবারে বছরে ৪০ মণ ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়।

বাকি ধান আমি বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে ৬ শত টাকা করে বস্তা মোটা ধান বিক্রি হয়। আমার প্রতি বস্তা ধান উৎপাদন করতে ৬ শত থেকে ৭ শত টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধানে দেড় থেকে ২ শত টাকা লস হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্টপুর (তাজপুর)গ্রামের জবাইদুর রহমান বলেন, শনিবার কাতিহার বাজারে গিয়ে ৬শত টাকা বস্তা মোটা ধান বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৬০০ টাকা করে। এখানে বস্তা ধান বিক্রি করলে ১ কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। শুনেছি সরকার ১০৪০ টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হব।

৮নং দৌলতপুর ইউনিয়নের আঃলীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য সব উপাদন সময় মতো পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিদের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম তাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পরে লাভবান হতে পারে ।

তবে ধানের দাম বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার দুপুরে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার প্রিয়াঙ্কা হোটেলের সামনে ও ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কের খোঁচাবাড়ি এলাকায় ধান ছিটিয়ে এ বিক্ষোভ করেন কৃষকেরা। এ সময় ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ঠাকুরগাঁও সদর থানা সিপিবির সভাপতি আহসানুল হাবিব বাবু, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, কৃষক সমিতির নেতা এরশাদুল ও সাইফুল প্রমুখ।

সমাবেশে কৃষকেরা বলেন, বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ ধান ৩০০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ৬০০-৬৫০ টাকা। এভাবে ধানের দাম প্রতিবার কম পাওয়ায় আমরা লোকসানে পড়ি। বর্তমানে ৮ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা ধানের মণ বিক্রি করতে হয় আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর ধান চাষ করব না। এ সময় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধানের বিক্রয় মূল্য উৎপাদন খরচের থেকে কম হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক সঙ্কট ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান একাধিক কৃষক জানান।

 

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকের কান্না, ২মন ধানে ১কেজি গরুর মাংস

আপডেট টাইম ১০:৪৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯

জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা চরমভাবে হতাশ। ২ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৩৬০ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ টন আর এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ টন হচ্ছে।

দাম কম থাকার কারণে অধিকাংশ কৃষক গত বছর ধান বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলার চন্দরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমি এ বছর ২৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রায় ১২শত মণ ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমার পরিবারে বছরে ৪০ মণ ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়।

বাকি ধান আমি বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে ৬ শত টাকা করে বস্তা মোটা ধান বিক্রি হয়। আমার প্রতি বস্তা ধান উৎপাদন করতে ৬ শত থেকে ৭ শত টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধানে দেড় থেকে ২ শত টাকা লস হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্টপুর (তাজপুর)গ্রামের জবাইদুর রহমান বলেন, শনিবার কাতিহার বাজারে গিয়ে ৬শত টাকা বস্তা মোটা ধান বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৬০০ টাকা করে। এখানে বস্তা ধান বিক্রি করলে ১ কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। শুনেছি সরকার ১০৪০ টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হব।

৮নং দৌলতপুর ইউনিয়নের আঃলীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য সব উপাদন সময় মতো পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিদের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম তাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পরে লাভবান হতে পারে ।

তবে ধানের দাম বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার দুপুরে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার প্রিয়াঙ্কা হোটেলের সামনে ও ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কের খোঁচাবাড়ি এলাকায় ধান ছিটিয়ে এ বিক্ষোভ করেন কৃষকেরা। এ সময় ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ঠাকুরগাঁও সদর থানা সিপিবির সভাপতি আহসানুল হাবিব বাবু, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, কৃষক সমিতির নেতা এরশাদুল ও সাইফুল প্রমুখ।

সমাবেশে কৃষকেরা বলেন, বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ ধান ৩০০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ৬০০-৬৫০ টাকা। এভাবে ধানের দাম প্রতিবার কম পাওয়ায় আমরা লোকসানে পড়ি। বর্তমানে ৮ টাকা কেজি দরে ৩২০০ টাকা ধানের মণ বিক্রি করতে হয় আমাদের। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আর ধান চাষ করব না। এ সময় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধানের বিক্রয় মূল্য উৎপাদন খরচের থেকে কম হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক সঙ্কট ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান একাধিক কৃষক জানান।