পিত্তথলিতে জমে থাকা পাথর অপারেশনের জন্য গ্যাসট্রাইটিস ইনজেকশন সারজেলের পরিবর্তে অ্যানেস্হেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশন সারভেক পুশ করা হয় মরিয়ম সুলতানা মুন্নির শরীরে। এই কারণে গত ৮ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী।
এই ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামী ডা: তপন ও নার্স শাহানাজসহ ৩ আসামিকে ৮ দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ মুন্নির চাচা জাকিরের থানায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী ডাক্তার তপনসহ সবাই প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে ঢাকা মেডিকেলে লাইভ সাপোর্টে থাকা মুন্নির ঘটনা তদন্তে গঠিত ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি সোমবার গোপালগঞ্জ আড়াইশ বেড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার ফরিদুল ইসলামের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে ২ নার্সকে অপরাধী সাব্যস্ত করে এবং ডাক্তার তপনকে বাদ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইসচ্যান্সেলার প্রফেসার ড, খোন্দকার নাসির উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক মোখলেচুর রহমান সরকার মনগড়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মোশারেফ বিশ্বাসের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মরিয়ম সুলতানার পিত্তথলিতে জমে থাকা পাথর অপারেশনের জন্য গত ২০ মে গোপালগঞ্জ আড়াই,শ বেড হাসপাতালে ভর্তি হয়। সকল পরীক্ষা শেষে ডা: তপন কুমারের দেয়া প্রেসক্রিপশন মোতাবেক পরদিন মঙ্গলবার সকালে মুন্নিকে অপারেশনের জন্য অপরেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহানাজ গ্যাসট্রাইটিস ইনজেকশন সারজেলের পরিবর্তে অ্যানেস্হেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশন সারভেক পুশ করে। ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষনের মধ্যে মুন্নি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বেশ কিছুক্ষনের মধ্যে জ্ঞান ফিরে না আসায় মুন্নির অবস্থার অবনতি হয়। এক-পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্নিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। খুলনার চিকিৎসকরা অবস্থার বেগতিক দেখে মুন্নিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন মুন্নির অবস্থা আগের থেকে আরো বেশী অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মুন্নির বড় ভাই।
গোপালগঞ্জ আড়াই,শ বেড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: চৌধুরী ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রী মুন্নির জ্ঞান যেহেতু ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসেনি সেক্ষেত্রে তার জ্ঞান আর ফিরে আসবে বলেও মনে হচ্ছেনা। এমন হতে পারে জ্ঞানহীন অবস্থায় এক সময় সে মারা যাবে। তবে জ্ঞান ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে মুন্নি। থানার ওসি মো, মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মামলা দায়েরের পর পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা রোববার তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহানাজ বেগম ও কুহেলীকার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মুন্নিকে ভুল ইনজেকশন পুশের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে ডাক্তার তপনের বিরুদ্ধে কোন তথ্য মেলেনি। এদিকে মুন্নির বড় ভাই রুবেল হোসেন অভিযোগ করে বলেছে, টাকার বিনিময়ে ডাক্তার তপনকে এ ঘটনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সে জানায় গত ৮ দিন ধরে মুন্নির জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসক বলছে. উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্নিকে দেশের বাহিরে নেওয়া জরুরী। কিন্ত দেশের বাহিরে চিকিৎসা করানোরমত অর্থ আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইসচ্যান্সেলার প্রফেসার ড, খোন্দকার নাসির উদ্দিন স্যার ৪ জনকে মিলে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। কিন্ত মুন্নির চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। মুন্নিকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছে মুন্নির ভাই রুবেল।