ইংল্যান্ডে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। আজ বা কাল বিলেতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা মাতবে ঈদের আনন্দে। তার আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট গোটা বাংলাদেশকে দিয়েছে ঈদের উপহার। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়েছে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই খুশির রেশ এখনো ১৮ কোটি বাঙালির মনে প্রাণে। শুধু কি তাই, বিলেতে এবার ঈদের খুশির অন্যতম উপলক্ষ মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তবে ক্রিকেটারদের সুখের মাঝেও আছে পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট। দেশের বাইরে প্রায়ই ঈদ করতে হয় প্রবাসী হয়ে। এবারো সফরটা আরো লম্বা। সেই ১লা মে দেশ ছেড়েছেন আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
সেখানে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে ইংল্যান্ডে। শুরু করেছেন বিশ্বকাপ মিশন। এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যু ছুটে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অনুমতি দিয়েছেন পরিবারকে সঙ্গে রাখার। সাকিব আল হাসান সফরে এসেছেন পরিবার নিয়েই। রোববার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে চলে এসেছেন লন্ডনে। আসবে মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকের পরিবার। তামিম ইকবাল এবারো পরিবারকে রাখছেন না সঙ্গে। তবে ঈদ যদি আজ হয় তাদের মাঠে থাকতেই হবে। আর কাল হলে তো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে লড়াই করতে হবে ঈদের আনন্দ ভুলে।
আজ বা কাল যে দিনই ঈদ হোক টাইগারদের সামনে থাকছে বিশ্বকাপে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ। তাই ঈদ পালন করতে হবে মাঠেই। আর সেই কারণে অধিনায়ক বলেছেন, ঈদ এখন তাদের ভাবনাতে নেই। অধিনায়ক বলেন, ‘এ বছর আমরা ঈদ ভাবনায় আনিনি। ঈদ হচ্ছে খেলার মধ্যে। খেলাটা উপভোগ করছি। আমাদের কাজই এখন এটা। কারও কারও পরিবার এসেছে ইংল্যান্ডে। আশা করি পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটবে। ঈদের চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ যে কাজে এসেছি সেটা ভালোভাবে শেষ করা।’ খেলার ভাবনা তো আছেই, সেই সঙ্গে তাড়া করে বেড়াচ্ছে নিউজিল্যান্ডে সেই ভয়াল ঘটনা। মসজিদের সেই হামলার কথা এখনো ভুলতে পারেনি বাংলাদেশ দলের সদস্যরা। তাই তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ এখন অনেক সতর্কতার সঙ্গে। যে কারণে ঈদের নামাজে যেতেও নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।
তবে ভাবনাতে না থাকলেও ঈদ বলে কথা। ঈদের দিন খেলা হবে শুনে লন্ডনের বাংলাদেশিদের অনেকেই ভীষণ খুশি। কারণ এখানে তো আর দেশের মতো ঈদ পালন করা যায় না। তবে খেলাকে কেন্দ্র করে অন্তত হাজার হাজার বাঙালি মেতে উঠতে পারবে ঈদের আনন্দে। মাঠে খেলা দেখতে আসা সুমন বেপারির পরিবার জানালেন আজ বা কাল যেদিনই ঈদ হোক তাদের সব আনন্দ থাকবে বাংলাদেশ দলকে ঘিরেই। তিনি বলেন, ‘যদি ৫ই জুন এখানে ঈদ হয় তাহলে তো মাঠেই ঈদের আনন্দ পালন করতে পারবো। সকালে নামাজ পড়েই চলে যাবো মাঠে। আর যদি ৪ঠা জুন হয় আমরা বাংলাদেশ দলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে যাব মাঠে।’
অবশ্য আগে থেকেই ঈদের কথা মাথায় রেখে ৫ই জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে দিবারাত্রির করেছেন আয়োজকেরা। বাংলাদেশ দলকে হয়তো সকালে ঈদের নামাজ পড়ে দুপুরে খেলতে যেতে হবে মাঠে। তার আগের দিন হলেও অনুশীলনে যেতে হবে দুপুরে। তবে অধিনায়ক কিন্তু ঈদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রেখেছেন মাঠের দিকেও। কারণও আছে যদি ঈদের দিন বা তার আগের দিন হেরে যায় তাহলে সব আনন্দই মলিন হয়ে যাবে টাইগার ভক্তদের। যদিও তার আগেই প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে টাইগাররা দিয়েছেন ঈদ উপহার। তবে ঈদের আগে হারের ভীষণ কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে টাইগারদের। এখনো হয়তো কারো কারো স্মৃতিতে আছে ২০০৩ বিশ্বকাপে ডারবানের ঈদুল আজহার দিন বাংলাদেশের কানাডার মতো দলের কাছে হেরেছিল। পরাজিত দলে ছিলেন বর্তমান দলের একজন তিনি মাশরাফি। তাই অধিনায়ক হিসেবে মাঠে মনোযোগ দিয়ে ভালো খেলতে চান। যেন জয় দিয়ে ঈদ আনন্দ উদ্যাপন করা যায়।
লন্ডনের বাঙালিপাড়া ছাড়া ঈদের রেশ অন্য কোথাও খুব একটা বোঝার উপায় নেই। বিশেষ করে ইস্ট লন্ডনে অনেকগুলো এলাকাতে এখন বেশ জোরেসোরে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ঈদের খেলা হলেও কি করবেন। বিশেষ করে তরুণ ভক্তরা। তিন বন্ধু ফয়সাল, হাবিবুল্লা, ও মাখন সরদার বলেন, ‘ঈদের আগে হোক আর পরে আমরা মাঠে থাকবো। বাংলাদেশের খেলা যদি ঈদের দিন হয় আমরা চাই মাঠে ঈদের উৎসব করতে।’