ম্যাচ শেষে মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের কথাও ভোলেননি মাশরাফি।
৩২২ তাড়া করতে নেমে ৫১ বল হাতে রেখেই জয়! বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় এই জয়ের মূল কারিগর অবশ্যই সাকিব আল হাসান। অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংসই শুধু খেলেননি, লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে ১৮৯ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে তবেই ফিরেছেন। তবে মাশরাফি বিন মুর্তজার চোখে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার নায়ক আরেকজন। তিনি মোস্তাফিজুর রহমান।
মাঝের ওভারগুলোয় বাংলাদেশি বোলাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কিছুটা চেপে ধরেছিলেন। তবে উইকেটে এসেই চাপ কাটাতে শুরু করেছিলেন শিমরন হেটমায়ার। শুরু থেকেই ছিলেন বিস্ফোরক মেজাজে। মাত্র ২৫ বলে তুলে নিয়েছিলেন ফিফটি। হেটমায়ারের ব্যাটে চড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন রানের পাহাড় গড়ার অপেক্ষায়। ৩৯ ওভার শেষে ২৪০ রানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে তখন সাড়ে তিন শও অসম্ভব মনে হচ্ছিল না।
ঠিক সে মুহূর্তেই প্রেক্ষাপটে হাজির মোস্তাফিজ। ৪০তম ওভারে তাঁর হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। আস্থার পূর্ণ প্রতিদানও দিলেন মোস্তাফিজ। ক্রমেই বিপদজনক হয়ে ওঠা হেটমায়ারকে ফেরালেন ঠিক ৫০ রানেই। ডিপ মিড উইকেটে অনেকটা দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন তামিম ইকবাল।
তবে হেটমায়ার ফিরলেও বাংলাদেশ তখনো শঙ্কামুক্ত ছিল না। আন্দ্রে রাসেল যে তখনো নামেনইনি! মোস্তাফিজ নিজের সেরাটা দিয়েছেন এখানেই। প্রথম বলে খোঁচা মারার চেষ্টা করেও ব্যাটে না লাগায় বেঁচে গিয়েছিলেন রাসেল। তবে দ্বিতীয় বলে আর বাঁচতে পারেননি। নিজের ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠা কাটার মেরে রাসেলকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন উইকেটের পেছনে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাকি কাজটুকু সেরেছেন মুশফিকুর রহিম। ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে মহা গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট তুলে নিয়ে মোস্তাফিজই তখন বাঁধ দিয়েছেন রানবন্যায়। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ৩২১–এর বেশি করতে পারেনি, সেটির পেছনে বড় অবদানও মোস্তাফিজের এই ওভারটির।
ম্যাচশেষে সবাই সাকিব-বন্দনায় মাতলেও মাশরাফি তাই ভোলেননি মোস্তাফিজের ওই ওভারটিকে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে বললেন, ‘মোস্তাফিজের ওই ওভারটিই (৪০তম ওভার) টার্নিং পয়েন্ট ছিল।’
তবে এমন পারফরম্যান্সের পর চাইলেও সাকিবের প্রশংসা না করে থাকা সম্ভব নয়। মাশরাফিও তাই সাকিবকে কুর্নিশ জানাতে দ্বিধাবোধ করলেন না, ‘সাকিব বরাবরের মতোই দলের জন্য খেলেছে। প্রতি ম্যাচেই সে নেমে এমন কিছু করেছে, এক কথায় অনবদ্য। আশা করছি, দলের বাকিরাও সবাই এ রকম পারফর্ম করে ওকে যোগ্য সঙ্গ দেবে।’
আগের ম্যাচগুলো বাইরে বসে থাকার পর আজই প্রথম সুযোগ পেয়েছেন লিটন দাস। সুযোগটা কী দারুণভাবেই না লুফে নিলেন! মূলত ওপেনার হলেও এ ম্যাচে খেলতে হয়েছে পাঁচ নম্বরে। নিজের স্বাভাবিক পজিশনে না নেমেও বিশ্বকাপ অভিষেকেই খেলেছেন ৬৯ বলে ৯৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। মাশরাফির কণ্ঠে তাই লিটনের জন্যও আলাদা করে প্রশংসা ঝরল, ‘গত দুই ম্যাচে মুশফিক ভালো ব্যাট করেছে, আজ লিটন অসাধারণ খেলেছে। সাধারণত, সে টপ অর্ডারে ব্যাট করে, ওর জন্য পাঁচে নামাটা তাই কঠিন ছিল। কিন্তু ও মানিয়ে নিয়েছে এবং পারফর্মও করেছে।’
ইনিংস বিরতির সময়ই দেখা গিয়েছিল, ড্রেসিংরুমে বসে শুশ্রূষা নিতে হচ্ছিল মাশরাফিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস চলার সময়ই মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। ঠিক কী সমস্যা হচ্ছিল, সেটি পরিষ্কার করে বলেননি মাশরাফি। তবে সমস্যাটা যে হ্যামস্ট্রিংয়ের কারণেই, সেটি স্বীকার করেছেন। তবে মাঠ থেকে উঠে গেলেও পর্যাপ্ত বিকল্প বোলার থাকায় চাপ নেননি মাশরাফি। আজ আসলে চাপহীন ক্রিকেট খেলেছে গোটা বাংলাদেশ দলই। আর নির্ভার বাংলাদেশ যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটি তো আজ হাড়ে হাড়েই টের পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ!