স্টাফ:: বাংলাদেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
শনিবার সংসদে বাংলাদেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, যাদের হাতে আটকে আছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যেই গত কয়েক বছর ধরে বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ চারগুণ বেড়েছে।
ঋণ কেন আদায় করা সম্ভব হয়না?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, খেলাপি ঋণ ফেরত পাবার ক্ষেত্রে সরকারের নমনীয় নীতির কারণেই ঋণ আদায় হয় না।
“যারা ঋণ খেলাপি তারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী, বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তাদের যোগাযোগ।
এখন সংস্কৃতিটা দাঁড়িয়েছে যে মানুষ ঋণ নেয় সেটা ফেরত দেবে না জেনেই। ফলে আমার মনে হয়, এই খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেই সেটা আদায় হচ্ছেনা।”
তিনি মনে করেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার বছর বছর যে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়, তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। বরং এটা তাদের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কারের মত হয়েছে।
যেমন মে মাসের ১৬ তারিখে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিশেষ নীতিমালা জারি করে, যেখানে বলা হয়েছে, বকেয়া ঋণের দুই শতাংশ টাকা জমা দিলে ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এরপর এক বছর ঋণ পরিশোধ না করে বাকি টাকা ১০ বছরের মধ্যে ফেরত দিলেই হবে।
এ নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়ের করা মামলাও স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে।
যদিও এই নীতিমালার ওপর হাইকোর্ট একটি স্থিতাবস্থা দিয়েছে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে, কিন্তু সকলে তা অনুসরণ করেনা।
“আমরা নিয়মিত নির্দেশনা পাঠাই। এমনকি পুনঃতফসিল করার জন্যও নীতিমালা আছে। এছাড়া অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেবার জন্য তো প্রত্যেক ব্যাংকের নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।”
মিঃ ইসলাম জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে এ বছরে জুনের প্রথম সপ্তাহে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
আদৌ কি উদ্ধার করা যাবে অর্থ?
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই বিপুল অর্থ আর কখনোই ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে না।
কারণ ঋণ আদায়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোন খেলাপির বিরুদ্ধে কোন কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই।
অন্তত এমন কোন উদাহরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মিঃ ইসলাম দিতে পারেননি।
ফলে এখন আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে অর্থ উদ্ধারের কোন আশা নেই, এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
“গত বছরও একশো জনের একটি তালিকা সংসদে পেশ করা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, আবার অর্থও উদ্ধার হয়নি। কিন্তু এবার যদি সংসদ সদস্যরা একটি উদ্যোগ নেন যে আগামী অর্থ বছরে এদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হলো তা জানাতে হবে, তাহলে হয়তো একটা ফল দেখা যাবে।”
“আমরা তো এর আগে বড় কোন খেলাপির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখিনি, ফলে এবার কি হবে তা এখুনি বলা যাচ্ছে না।”
হতাশা ছোট উদ্যোক্তারা
শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের যে ৩০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছেন তা জানার পর হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।
চামড়া শিল্পের একজন উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি বহ্নি বলছেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ জানার পর নিরুৎসাহিত হবেন ছোট উদ্যোক্তারা।
“ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যখন ঋণ চাইতে যায়, ব্যাংক আমাদের ঋণ দেয় না। আমাদের কাজের সঠিক পরিকল্পনা আছে, সঠিক সময়ে ঋণ ফেরত দেবার হিস্ট্রি আছে, অথচ ব্যাংক আমাদের ঋণ দেয় না। ঋণ দেয় যারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয় না তাদের।”
বাংলাদেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের এক চতুর্থাংশের মত।