সারাদিন ডেস্ক:: চকচকে টিভি পর্দায় অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় ক্যারিশমা দেখে মুগ্ধ হই আমরা। কিন্তু এই অভিনয় ঠিকঠাক পর্দায় তুলে আনতে কম পরিশ্রম করতে হয় না তাঁদের। পরিশ্রমের বড় অংশজুড়ে থাকে নানা সমস্যায় জর্জরিত শুটিংবাড়িতে শুটিং করা।
এ দেশের টেলিভিশনে প্রচারিত নাটকের বেশির ভাগ শুটিং হয় রাজধানীর উত্তরায়। মোটামুটি ১৩টি বাড়িতে হরদম চলে শুটিং। সকাল থেকেই এসব বাড়িতে লাইট-ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত হন পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সারা দিন, অনেক সময় মধ্যরাত অবধি চলে এই কর্মযজ্ঞ। দিনের দীর্ঘ সময় এই বাড়িতে থাকলেও এই বাড়ি নিয়েই অভিনয়শিল্পীদের আছে নানা ধরনের অভিযোগ। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক অভিযোগ করেছেন বাড়ির পরিবেশ ও নিয়মকানুন নিয়ে। তবে ভুক্তভোগী কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তাঁদের দেওয়া প্রধান সাতটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-১. বাথরুমসহ পুরো বাড়ি অপরিষ্কার, ২. মেকআপ রুমে ছারপোকা, ৩. প্রপস (শুটিংয়ের অনুষঙ্গ) সংকট, ৪. পর্যাপ্ত বিকল্প বিদ্যুৎব্যবস্থা না থাকা, ৫. একসঙ্গে একাধিক শুটিং ইউনিট ভাড়া, ৬. পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব ও ৭. সার্বিক নিরাপত্তার অভাব।
অভিযোগগুলো প্রসঙ্গে অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘সব কটি নিত্যদিনের ঘটনা। সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়ির অপরিচ্ছন্নতা। একটা বাড়িতে দিনের ১৫-১৬ ঘণ্টা সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন মানুষ অবস্থান করেন। তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকে মাত্র ২-৩টি টয়লেট। সেগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। আমরা অভিযোগগুলো নিয়ে বারবার শুটিংবাড়ির মালিক ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সমস্যাগুলোর সমাধান এখনো হয়নি।’
প্রপস প্রসঙ্গে এই শিল্পী জানান, শুটিংবাড়ির ধারণা সঠিক নয়। থাকার কথা ছিল স্টুডিও। যেখানে সেট থেকে শুরু করে যাবতীয় কিছু পরিচালকের তৈরি করে নেওয়ার কথা। বাড়ি হওয়ার ফলে এই বিষয়টি সমন্বয় হয় না। আর একসঙ্গে একাধিক শুটিং থাকায় এই সমস্যা আরও প্রকট হয় বলে জানান নাসিম।
অভিযোগগুলো নিয়ে কথা হয় শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খলিলুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলোর কিছু সত্য। আমরা প্রতিনিয়ত শুটিংবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি। একটা বাড়িতে এতগুলো মানুষ সারা দিন থাকলে নোংরা তো হবেই। এটা যে কারও বাড়িতেই হতে পারে।’
খলিলুর রহমান জানান, একটা শুটিংবাড়ির ভাড়া কমপক্ষে এক থেকে দেড় লাখ টাকা। কেয়ারটেকার, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ আনুষঙ্গিক খরচ আছে। সব মিলিয়ে মাস শেষে লাভের পরিমাণ খুব কম। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই একসঙ্গে দু-তিন ইউনিট ভাড়া দিতে হয়। প্রপস সংকটও একই কারণে। প্রযোজক ও পরিচালকেরা ভাড়া বাড়ালেই কেবল এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। অন্য বিষয়গুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
তবে সমস্যা যতই থাকুক, একটা পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পরিবেশে শুটিং করতে চান সবাই। দিন শেষে সেরা কাজটা দেওয়ার স্বার্থে যা খুব জরুরি বলে মনে করেন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকেরা।