জাতির জনক আমাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, সেই পাকিস্থানী বৈষম্যের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমারা পিওন আর কেরানি ছাড়া আর কিছু হতে পারবো না। আমাদের সামনে যাবার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিলো তারা। যুগ যুগের বিমাতাসুলভ আচরণ, চরম বৈষম্য, নিস্পেশন থেকে হয় মুক্তি নয় মৃত্যু – এছাড়া কোন পথ খোলা ছিলো না। মৃত্যুকে আলিংগন করার দুঃসাহসী অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন জাতির পিতা। মরণ কে বরন করার সাহস জাতি হিসেবে আমরা পিতা মুজিবের কাছ থেকেই পেয়েছি। সেই যুদ্ধে আমরা জিতেছি, স্বাধীনতা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পাকিস্থানীদের বৈষম্যমুলক মনোভাবের অনুকরনে একটি কুচক্রী মহল সরকারের সাম্যভিত্তিক স্বদিচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে দেয়নি কোনদিন। সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা এই অপশক্তি সু-কৌশলে সমাজে সেই পাকিস্থানি ভাব ধারার বৈষম্যের সুক্ষ্ণ সুচনা করে রেখেছে যার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতার পর কোন সরকারই বেড়িয়ে আসতে পারেনী । ভয়াবহ আয় বৈষম্য আর দ্রব্যমূল্যের সহজাত উর্ধগতিতে সমাজের একটা বিড়াট অংশ আজ বুক চেপে কাঁদছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনী আজ বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মতো, লম্বা হচ্ছে নিম্নবৃত্তের তালিকা, লম্বা হচ্ছে উচ্চবিত্তের তালিকা। একটি অফিসের অফিস সহায়ক/পরিচ্ছন্নতা কর্মি বা সিকিউরিটি গার্ড যার শিক্ষাগত যোগ্যতা অস্টম শ্রেনী পাশ,বেতন ২০ তম গ্রেডে ৮২৫০৳। ১৯ থেকে ১১ তম গ্রেডের প্রায় সকল পদের নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় উচ্চমাধ্যমিক, ডিপ্লোমা পাশ / স্নাতক পাশ যাদের বেতন ৮৫০০৳ – ১২৫০০৳’র মধ্যেই ঘুরপাক খায়।
একজন অস্টম শ্রেনী পাশ ও একজন স্নাতক পাশ ব্যক্তির বেতন ব্যবধান মাত্র ৪২৫০৳। এর মধ্যে প্রাথমিক /মাধ্যমিকের সকল শিক্ষক রা অন্তর্ভুক্ত। বাহ !! খুব সুন্দর, রাষ্ট্রের কাছে এমন সাম্যই তো আমরা কামনা করি। এই সাম্যের সুচনা দিয়ে ২০ গ্রেডের বেতন কাঠামো রচনা করা হলেও গলদ শুরু হয় ১০ম গ্রেড থেকে। এখানেই মূলত বিশেষ গোষ্টির মনোভাবের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে, ১০ ম গ্রেডের মূল বেতন ১৬০০০৳, অর্থাৎ ১১ থেকে ১০ গ্রেডের বেতন পার্থক্য ৩৫০০৳। যেখানে প্রথম ৯ টি গ্রেডের মোট প্রার্থক্য ৪২৫০৳ সেখানে এই একটি গ্রেডেই ডিফারেন্স ৩৫০০৳। অথচ এই গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ হয় খুবই অল্প সংখ্যক পদের। এবার আসেন ক্যাডার / নন-ক্যাডার সার্ভিসের প্রথম শ্রেনীর এলিট ক্লাবে। গ্রেড ৯, বেতন ২২০০০, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/স্নাতকোত্তর সাথে বিসিএস পরীক্ষা। যোগদানের সাথে সাথেই দুটি ইনক্রিমেন্ট, কখনো কখনো একটি, নিয়মিত পদোন্নতি, উচ্চতর গ্রেড, উচ্চ ট্রেনিং ও আনুতোষিক ভাতা, বিভিন্ন কায়দাকানুনে ৩য় থেকে ১ম গ্রেডের সুপার এলিট ক্লাবে ঢুকার সুযোগ তো থাকছেই। ১০ম গ্রেডের সাথে বেতন পার্থক্য ৬০০০৳। যেখানে ১২তম ও ১৩ গ্রেডের বেতন পার্থক্য মাত্র ৩০০৳।
১৯ থেকে ১১ গ্রেডের প্রিয় স্নাতক / ডিপ্লোমাধারী অভাগাদের একটা বিড়াট অংশজুরে রয়েছে ব্লক পোস্টধারী গিনিপিগ প্রজাতি যাদের কোন পদোন্নতির সুযোগ নেই। সমগ্র চাকুরি জীবনে রয়েছে দুটি মাত্র উচ্চতর গ্রেড, সেটিও বন্ধ আছে ২০১৫ সাল থেকে। আপনি মামলা করলে পাবেন, কিন্তু আপনার নির্ভেজাল সাধারন সহকর্মী যিনি আদালত পাড়া ভয় পান, তিনি পাবেন না। এমন বিরল মারপ্যাচের বেতন স্কেল পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে বলে মনে হয় না।
১-২০ গ্রেডের বেতন প্রার্থক্য অসমহারে নির্ধারন করা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মীদের মধ্যে তফাৎ সৃষ্ঠি করা হয়েছে বিস্তর। মূলত ৮ম পে কমিশনে সরকারি পেশাজীবীদের দু’টি বিশেষ শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে। একটি এলিট(elit) শ্রেনী আরেকটি হচ্ছে ড্রেগস(Dregs) শ্রেনী।
“এখন থেকে সরকারি চাকুরীতে শ্রেনী প্রথা বিলুপ্ত করা হইলো ” এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের পে-কমিশনের প্রজ্ঞাপনটি মূলত তিন শ্রেনী ভেংগে এলিট শ্রেনী আর ড্রেগস শ্রেনীর জন্ম দিয়েছে, বাড়িয়েছে বৈষম্য, অসন্তোষ।
পিতা মুজিবের সেখানো পথে এই মহা বৈষম্য দুর করার যুদ্ধে আমরা যেতে চাইনা কারন আমরা বিশ্বাস করি অতি দ্রুতই তাঁর সুযোগ্য কন্যা, মানবতার মা, তাঁর সন্তানদের এই বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করবেন, খুব দ্রুতই বেতন সংস্কারের চুরান্ত নির্দেশনা দিবেন।
লেখক-১১-২০ গ্রেডের সরকারী চাকুরিজীবি অধিকার আদায় ফোরামের পীরগঞ্জ উপজেলার সদস্য সচিব।
সংবাদ শিরোনাম
আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু নিলজ্জ বৈষম্য মুক্তি ঘটেনি-মুকুল হোসেন
- সংবাদ সারাদিন ডেস্ক :
- আপডেট টাইম ০১:৫৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯
- ১৬৪ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ