ঢাকা ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিনি একেবারেই ব্যতিক্রম

সারাদিন ডেস্ক::  ব্যারিষ্টার রফিক উল হক, তিনি অন্যরকম। একেবারেই ব্যতিক্রম। ইংরেজি রেয়ার শব্দটির বাংলা কি? বিরল। বোধকরি মানুষটিকে তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। ওয়ান ইলেভেনে মানুষটিকে চিনেছেন সকলে ভিন্নভাবে। টক শোতে, কোর্টের বারান্দায় নিয়মিত কথা বলেছেন তিনি। তার সরব পদচারনা আশা জাগাতো দেশের মানুষকে। যদিও শরীরে নানান জটিল রোগ বাসা বেঁধেছিল তখনই।

কিন্তু দমে যাননি তিনি। মনের জোরে তিনি ছিলেন বরাবরই সচল, সবাক, দাপুটে এক মানুষ।
ওয়ান ইলেভেন জমানায় হাই প্রোফাইল মামলাগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মুখেও বিতর্ক আর যুক্তি তর্কে তিনি ছিলেন অনড়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি করেছেন সাহসের সঙ্গে। মোকাবিলা করেছেন দৃঢ়চিত্তে। ওয়ান ইলেভেনের বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি দু নেত্রীর মামলা পরিচালনা করেছেন দৃঢ়চিত্তে, অকুতোভয়ে। যখন চারপাশে থমথমে পরিস্থিতি। সে সময় তিনি লড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সেই মামলাগুলো । সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায় দুই নেত্রী যখন কারাগারে তখন তাদের জন্য এই আইনি লড়াই সহজ ছিল না। কিন্তু কোর্টের বাইরে মাঠে এই তিনিই দুই নেত্রীর সমালোচনা করতেও পিছপা হননি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। তিনি আর কেউ নন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। সব চাপিয়ে তিনি নীরবে কাজ করেছেন মানুষের জন্য। নিজ গ্রাম গাজীপুরের চন্দ্রায় তার উপার্জিত অর্থে গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল। সপ্তায় সপ্তায় ছুটে যেতেন হাসপাতালে। মানুষের খোঁজখবর নেন। শেষ ক’বছর অসুস্থতাজনিত কারণে না যেতে পারলেও খোঁজখবর নিতেন নিয়মিত।
দেশের এক কঠিন পরিস্থিতিতে  গণতন্ত্রের পথে ফিরতে কাজ করেছেন নীরবে। সরব ছিলেন অন্যায় যে কেনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। টক শোতে যখনই বলেছি সুযোগ পেলে আসতেন। কথা বলতেন নিজের বিবেক সমঝে। আপসকামিতা দেখিনি কখনও।  একদিকে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নজরদারি অন্যদিকে দেশ, গণতন্ত্র, মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন। ক্রুশিয়াল এমন সব মুহুর্তেও মানুষটিকে দেখেছি অটল থাকতে। নির্ভয়ে কথা বলতে। ভীষণ মেধাবি, মেজাজি, সাহসী ও রসবোধ সম্পন্ন প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যারিষ্টার রফিক উল হক বর্তমানে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে আছেন হাসপাতালে।
৪৭/১ পুরানা পল্টন। ‘সুবর্ণা’-ছায়াঘেরা, শীতল, ছিমছাম একটি বাড়ি। এ বাড়িটিই মানুষটির আবাস। প্রখ্যাত এ আইনজীবী এক সময় প্রতিনিয়ত সরব ছিলেন আদালত আর মিডিয়ায়। এখন লড়ছেন হাসপাতালে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে পায়ে ব্যথা অনুভব করতেন। যে কারণে হুইল চেয়ারে যাওয়া-আসা করতে হয়।
২০১১ সালে প্রিয়তমা স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের মৃত্যুর পর থেকেই নিঃসঙ্গতা অনুভব করতেন। আর এখন বার্ধক্য যোগ হয়ে সেই নিঃসঙ্গতা আরো বেড়েছে।
প্রখ্যাত এই আইনজীবীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার এট ল’ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন।
১৯৯০ সালের ৭ই এপ্রিল থেকে ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিরল ঘটনা হচ্ছে এ দায়িত্ব পালন কালে তিনি কোন সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে, নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা তাঁকে পাশে পেয়েছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তাঁর জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়।  আর তার এই উদ্যোগকে বিরল বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তার সমসাময়িকরাও। ব্যতিক্রমি মানুষ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের জন্য প্রার্থনা। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। তার দৃপ্ত পদচারণা খুবই প্রয়োজন ঘুনে ধরা এই সমাজের জন্য।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

তিনি একেবারেই ব্যতিক্রম

আপডেট টাইম ০৬:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০২০

সারাদিন ডেস্ক::  ব্যারিষ্টার রফিক উল হক, তিনি অন্যরকম। একেবারেই ব্যতিক্রম। ইংরেজি রেয়ার শব্দটির বাংলা কি? বিরল। বোধকরি মানুষটিকে তা বললেও অত্যুক্তি হবে না। ওয়ান ইলেভেনে মানুষটিকে চিনেছেন সকলে ভিন্নভাবে। টক শোতে, কোর্টের বারান্দায় নিয়মিত কথা বলেছেন তিনি। তার সরব পদচারনা আশা জাগাতো দেশের মানুষকে। যদিও শরীরে নানান জটিল রোগ বাসা বেঁধেছিল তখনই।

কিন্তু দমে যাননি তিনি। মনের জোরে তিনি ছিলেন বরাবরই সচল, সবাক, দাপুটে এক মানুষ।
ওয়ান ইলেভেন জমানায় হাই প্রোফাইল মামলাগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মুখেও বিতর্ক আর যুক্তি তর্কে তিনি ছিলেন অনড়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি করেছেন সাহসের সঙ্গে। মোকাবিলা করেছেন দৃঢ়চিত্তে। ওয়ান ইলেভেনের বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি দু নেত্রীর মামলা পরিচালনা করেছেন দৃঢ়চিত্তে, অকুতোভয়ে। যখন চারপাশে থমথমে পরিস্থিতি। সে সময় তিনি লড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সেই মামলাগুলো । সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায় দুই নেত্রী যখন কারাগারে তখন তাদের জন্য এই আইনি লড়াই সহজ ছিল না। কিন্তু কোর্টের বাইরে মাঠে এই তিনিই দুই নেত্রীর সমালোচনা করতেও পিছপা হননি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। তিনি আর কেউ নন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী। সব চাপিয়ে তিনি নীরবে কাজ করেছেন মানুষের জন্য। নিজ গ্রাম গাজীপুরের চন্দ্রায় তার উপার্জিত অর্থে গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল। সপ্তায় সপ্তায় ছুটে যেতেন হাসপাতালে। মানুষের খোঁজখবর নেন। শেষ ক’বছর অসুস্থতাজনিত কারণে না যেতে পারলেও খোঁজখবর নিতেন নিয়মিত।
দেশের এক কঠিন পরিস্থিতিতে  গণতন্ত্রের পথে ফিরতে কাজ করেছেন নীরবে। সরব ছিলেন অন্যায় যে কেনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। টক শোতে যখনই বলেছি সুযোগ পেলে আসতেন। কথা বলতেন নিজের বিবেক সমঝে। আপসকামিতা দেখিনি কখনও।  একদিকে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নজরদারি অন্যদিকে দেশ, গণতন্ত্র, মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন। ক্রুশিয়াল এমন সব মুহুর্তেও মানুষটিকে দেখেছি অটল থাকতে। নির্ভয়ে কথা বলতে। ভীষণ মেধাবি, মেজাজি, সাহসী ও রসবোধ সম্পন্ন প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যারিষ্টার রফিক উল হক বর্তমানে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে আছেন হাসপাতালে।
৪৭/১ পুরানা পল্টন। ‘সুবর্ণা’-ছায়াঘেরা, শীতল, ছিমছাম একটি বাড়ি। এ বাড়িটিই মানুষটির আবাস। প্রখ্যাত এ আইনজীবী এক সময় প্রতিনিয়ত সরব ছিলেন আদালত আর মিডিয়ায়। এখন লড়ছেন হাসপাতালে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর থেকে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে পায়ে ব্যথা অনুভব করতেন। যে কারণে হুইল চেয়ারে যাওয়া-আসা করতে হয়।
২০১১ সালে প্রিয়তমা স্ত্রী ডা. ফরিদা হকের মৃত্যুর পর থেকেই নিঃসঙ্গতা অনুভব করতেন। আর এখন বার্ধক্য যোগ হয়ে সেই নিঃসঙ্গতা আরো বেড়েছে।
প্রখ্যাত এই আইনজীবীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার এট ল’ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন।
১৯৯০ সালের ৭ই এপ্রিল থেকে ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিরল ঘটনা হচ্ছে এ দায়িত্ব পালন কালে তিনি কোন সম্মানী নেননি। পেশাগত জীবনে তিনি কখনো কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তবে, নানা সময়ে রাজনীতিবিদরা তাঁকে পাশে পেয়েছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তাঁর জীবনের উপার্জিত অর্থের প্রায় সবই ব্যয় করেছেন মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবায়।  আর তার এই উদ্যোগকে বিরল বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন আইন অঙ্গনে তার সমসাময়িকরাও। ব্যতিক্রমি মানুষ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের জন্য প্রার্থনা। তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। তার দৃপ্ত পদচারণা খুবই প্রয়োজন ঘুনে ধরা এই সমাজের জন্য।