ঢাকা ১০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রানিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ২ দিনের প্রশিক্ষন সম্পন্ন পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ ডাক্তারের পদ শূন্য, দায়িত্বরত ৩ জন ৪ বিঘা জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ ১৫ বছর ধরে : সংঘর্ষে আহত অর্ধশত, ১৪৪ ধারা জারি গাজায় গনহত্যার প্রতিবাদে ঠাকুরগায়ের পীরগঞ্জে আল-হাসানার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন প্রতিবাদসভা আওয়ামীপন্থি ৯৩ আইনজীবীর আদালতে আত্মসমর্পণ, জামিন আবেদন আনন্দবাজারের প্রতিবেদন, ঢাকার প্রস্তাব দ্বিধায় দিল্লি সত্যের মুখোমুখি আসিফ নজরুল পীরগঞ্জে মাস ব্যাপী হস্ত কুটির শিল্প মেলার উদ্বোধন পীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদন সংখ্যালঘুদের দমিয়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা

লোকশানের আশংকা তবু গায়ে কাদা মেখে বোরো চাষে ব্যস্ততার কমতি নেই চাষিদের

আজম রেহমান,ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:: গায়ে হাতে কাদা মাখামাখির দৃশ্য চাারিদিকে। ধান নয় যেন সবুজ স্বপ্ন বোনেন কৃষক। লোকশানের আশংকা মাথায় নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে এখন বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো
চাষিরা। কল ও গরুর লাঙ্গল মই দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি
প্রস্তুত, কোথাও ডিপ টিউবওয়েল আবার কোথাও স্যালো মেশিনে পানি সেচ, বীজতলা  থেকে চারা উত্তোলন ও  রোপনের কাজে ব্যস্ত তারা। প্রায় প্রতি বছরই বোরো বা
আমন ধানের দাম না পাওয়ার অভিযোগ থাকে, তবুও থেমে থাকেনা রোপণ করার ও ফসল
তোলার উৎসবমুখর কর্মকান্ড। সময় সীমিত তাই কিছুটা কাড়াকাড়ি পড়ে রোপণের কামলা নিয়ে ,মজুরিও বাড়ে এ সময় তাই, কৃষি মজুরদের মধ্যেও উৎসব চলে।

শুক্রবার জেলা-উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এমন চির চেনা দৃশ্য চোখে পড়ে। ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছরের মতো সেই কাঁদা-মাটি গায়ে মাখার উৎসবমুখর পরিবেশটি দেখা যাচ্ছে। তবে অনেক কৃষকের
অনুযোগ, কৃষি সরঞ্জাম সহ কীটনাশক বিষ,ভিটামিন ও জৈব সারের দাম বেশি হওয়ায় বোরো ধান উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়াও শ্রমিকদের মজুরী বেশি হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না তারা।

জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাকী
জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হবে। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন চাল।

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল বাশার জানান,ফসল গাড়ার খরচ অনেক বেড়েছে কিন্তু বাজার আমাদের হাতে না। সরকারকে ধান দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না , সরকার যখন বেশি দামে ধান কেনে ততদিনে আমাদের কাছে ধান থাকে না আর থাকলেও ১ শ ঝামেলা নিয়ে আমরা গুদামে ধান দিতে পারিনা , সেখানে নাকি আবার লটারি হয়।
রুবেল, আওয়াল, জামাল সহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক জানান,গতবছর আমরা বোরো আবাদ করছি কিন্তু ধান বেচার সময় দাম পাইনি। অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে আমাদের।
বিষ,ভিটামিন ও জৈব ও রাসয়নিক সার তারপর বিঘা প্রতি মাটি কাটা, সেচ সব কিছুর খরচ দিয়ে আমাদের লোকশান হয়েছে। এবারো লাগাচ্ছি দেখি কি হয়। কৃষকরা জানালেন, বোরো ধান সেচ নির্ভর , ঠাকুরগাঁও সরকারি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের
গভীর নলকূপ প্রকল্পের আওতায়, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে খরচ আরো বাড়লো কৃষকের, তাই এবার ধানের দাম আরও না বাড়লে কৃষকের লসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে মজুরি বাড়ায় কৃষি শ্রমিকদের পরিবারে চলছে স্বস্তিকর ব্যস্ততা।
রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ক্ষেতমজুর নিমাই জানান, তারা দল বেঁধে চুক্তি নিয়ে ধান  রোপণ করেন, এতে মজুরি কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। তাই এসময়ে
কাজ করে আগামী কয়েক মাসের ধান-চাল কিনে রাখতে চান পরিবারের সবাই মিলে। গৌরিপুরের শাহানা বলেন, এই কাজ শেষ হবার পরই কিছুদিন গ্রামে কাজকর্মের আকাল পড়বে। এই অল্প কয়েকদিনের চায়না  (বোরো) ধান গাড়ার আয়ের আশায় তারা গত ১ মাস ধরে অপেক্ষা করেন। মজুররা সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা চান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতিমধ্যে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও বোরো
ধান উৎপাদনে বাম্পার ফলন আশা করা যায়।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রানিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ২ দিনের প্রশিক্ষন সম্পন্ন

লোকশানের আশংকা তবু গায়ে কাদা মেখে বোরো চাষে ব্যস্ততার কমতি নেই চাষিদের

আপডেট টাইম ১১:১৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০২০

আজম রেহমান,ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:: গায়ে হাতে কাদা মাখামাখির দৃশ্য চাারিদিকে। ধান নয় যেন সবুজ স্বপ্ন বোনেন কৃষক। লোকশানের আশংকা মাথায় নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের মাঠে মাঠে এখন বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো
চাষিরা। কল ও গরুর লাঙ্গল মই দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি
প্রস্তুত, কোথাও ডিপ টিউবওয়েল আবার কোথাও স্যালো মেশিনে পানি সেচ, বীজতলা  থেকে চারা উত্তোলন ও  রোপনের কাজে ব্যস্ত তারা। প্রায় প্রতি বছরই বোরো বা
আমন ধানের দাম না পাওয়ার অভিযোগ থাকে, তবুও থেমে থাকেনা রোপণ করার ও ফসল
তোলার উৎসবমুখর কর্মকান্ড। সময় সীমিত তাই কিছুটা কাড়াকাড়ি পড়ে রোপণের কামলা নিয়ে ,মজুরিও বাড়ে এ সময় তাই, কৃষি মজুরদের মধ্যেও উৎসব চলে।

শুক্রবার জেলা-উপজেলার বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে গিয়ে এমন চির চেনা দৃশ্য চোখে পড়ে। ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছরের মতো সেই কাঁদা-মাটি গায়ে মাখার উৎসবমুখর পরিবেশটি দেখা যাচ্ছে। তবে অনেক কৃষকের
অনুযোগ, কৃষি সরঞ্জাম সহ কীটনাশক বিষ,ভিটামিন ও জৈব সারের দাম বেশি হওয়ায় বোরো ধান উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়াও শ্রমিকদের মজুরী বেশি হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন না তারা।

জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বাকী
জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হবে। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন চাল।

সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক আবুল বাশার জানান,ফসল গাড়ার খরচ অনেক বেড়েছে কিন্তু বাজার আমাদের হাতে না। সরকারকে ধান দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না , সরকার যখন বেশি দামে ধান কেনে ততদিনে আমাদের কাছে ধান থাকে না আর থাকলেও ১ শ ঝামেলা নিয়ে আমরা গুদামে ধান দিতে পারিনা , সেখানে নাকি আবার লটারি হয়।
রুবেল, আওয়াল, জামাল সহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক জানান,গতবছর আমরা বোরো আবাদ করছি কিন্তু ধান বেচার সময় দাম পাইনি। অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে আমাদের।
বিষ,ভিটামিন ও জৈব ও রাসয়নিক সার তারপর বিঘা প্রতি মাটি কাটা, সেচ সব কিছুর খরচ দিয়ে আমাদের লোকশান হয়েছে। এবারো লাগাচ্ছি দেখি কি হয়। কৃষকরা জানালেন, বোরো ধান সেচ নির্ভর , ঠাকুরগাঁও সরকারি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের
গভীর নলকূপ প্রকল্পের আওতায়, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে খরচ আরো বাড়লো কৃষকের, তাই এবার ধানের দাম আরও না বাড়লে কৃষকের লসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে মজুরি বাড়ায় কৃষি শ্রমিকদের পরিবারে চলছে স্বস্তিকর ব্যস্ততা।
রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ক্ষেতমজুর নিমাই জানান, তারা দল বেঁধে চুক্তি নিয়ে ধান  রোপণ করেন, এতে মজুরি কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। তাই এসময়ে
কাজ করে আগামী কয়েক মাসের ধান-চাল কিনে রাখতে চান পরিবারের সবাই মিলে। গৌরিপুরের শাহানা বলেন, এই কাজ শেষ হবার পরই কিছুদিন গ্রামে কাজকর্মের আকাল পড়বে। এই অল্প কয়েকদিনের চায়না  (বোরো) ধান গাড়ার আয়ের আশায় তারা গত ১ মাস ধরে অপেক্ষা করেন। মজুররা সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা চান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতাফ হোসেন জানান, আমরা ইতিমধ্যে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও বোরো
ধান উৎপাদনে বাম্পার ফলন আশা করা যায়।