ঢাকা ০৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে সুখবর দিলো বিটিআরসি ঠাকুরগাওয়ে ৩ দফা দাবীতে চাকুরীচ্যুৎ ও জেলবন্দি বিডিআর পরিবারের মানববন্ধন ৪৩তম বিসিএস: সহকারী কমিশনার হলেন ২৬৭ কর্মকর্তা টিসিবির ট্রাক সেল ফের চালুর দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির বিআরটিএ বন্ধের চিন্তা করা হবে: সড়ক উপদেষ্টা ‘শুল্ক ও করহার বাড়ানো অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী’ ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো: প্রেস সচিব জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা রুখতে ঐক্য জরুরি: ফখরুল খালেদার চিকিৎসায় সুবিধা দেওয়ায় কাতার ও যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ দিল বিএনপি চলচ্চিত্র তারকা প্রবীর মিত্রের শেষ বিদায়, ইসলামী রীতিতে দাফন

মরুভূমির ত্বীন এখন নবাবগঞ্জে

 হিলি প্রতিনিধি::খাদ্যশষ্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের জনপদ দিনাজপুর। জেলায় ধান চাষের পাশাপাশি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ফলের চাষ। প্রতিবছরই জেলায় দেখা মিলছে নানা প্রজাতির বিদেশ ফলের। এবার জেলার দক্ষিণের উপজেলা নবাবগঞ্জে চাষ শুরু হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন।

নতুন এই ফল চাষ শুরু করে এলাকায় মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে উপজেলার কৃষক মতিউর মান্নান। এই ফলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। শুধু ফল চাষই নয়, বাগানটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উত্তরবঙ্গে প্রথমবারের মতো এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে। এই উপজেলায় ৪ বিঘা জমিতে ৫ প্রজাতির ৯০০ ত্বীন ফলের গাছ লাগিয়েছেন কৃষক মতিউর মান্নান। ইতিমধ্যে বাগানের গাছগুলোতে ফলও আসতে শুরু করেছে।

বাগান দেখতে আসা রোকন ও জুলহাজ বলেন, আমরা শুধু ফেসবুক, টিভিতে দেখি ত্বীন ফল। পবিত্র কোরআনেও এই ফলে নাম আছে। আজ বাগানে এসে বাস্তবে ফলটি দেখতে পেরে আমাদেরকে অনেক ভালো লাগলো।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে চাষ শুরু হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন

তারা বলেন, ফলগুলো দেখতে ডুমুর আকৃতির। গাছে অনেক ফল ধরেছে। এই ফলটি আমাদের এলাকায় প্রথম চাষ হচ্ছে। ফলের বাগান দেখে আমাদের এরকম বাগান করার ইচ্ছে হচ্ছে। আমরা বাগান দেখার পাশাপাশি মতিউর মান্নানের কাছ থেকে এই ফল চাষের পদ্ধতি সর্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম। আমরা ভবিষতে এরকম বাগান করবো।

বাগানের শ্রমিক লাবলুসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমরা ১০ জন ত্বীন ফলের বাগানে কাজ করছি। করোনায় কোনো কাজকর্ম ছিলো না। মতিউর ভাই ত্বীন ফলের বাগান করায় এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এখানে কাজ করে আগের থেকে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। মতিউর ভাইয়ের মতো এলাকায় আরো যদি কেউ বাগান তৈরি করে, তাহলে আরো বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

ফলচাষি মতিউর মান্নানের ত্বীন ফলের বাগানে

ত্বীন ফলচাষি মতিউর মান্নান বলেন, করোনা মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আর এ সময় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি। এরপর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। পরে ছোট বোনের পরামর্শে গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা এনে গেলো বছরের অক্টোবর মাসে ৪ বিঘা পতিত জমিতে চাষ শুরু করি।

বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভয় পেলেও চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করায় আমি খুব খুশি। দুই-একটি করে ফল পাকতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজার ফলটি চাহিদা অনেক, দামও ভালো। প্রতিকেজি ফল বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে।

দেখতে অনেকটা ডুমুরের মতো হলেও ত্বীন ফল খেতে সুস্বাদু

তিনি আরও বলেন, বাগান সম্প্রসারণ করতে ইতিমধ্যে আমি গাছে কলম করতে শুরু করেছি। কলমগুলো করে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবো।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে গাজীপুরের পর প্রথমবারের মতো আমাদের এলাকায় এই ফলের চাষ শুরু করেছে কৃষক মতিউর মান্নান। ত্বীন ফলটি মরুভূমি এলাকার বেশি পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়াও এর ঔষধি অনেক গুণাবলি রয়েছে। কেউ যদি এই ফলের বাগান নতুন করে তৈরি করতে চায় আমাদের কৃষি অফিস তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মতিউর নামের ওই কৃষককে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে সুখবর দিলো বিটিআরসি

মরুভূমির ত্বীন এখন নবাবগঞ্জে

আপডেট টাইম ০৫:৪৭:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১
 হিলি প্রতিনিধি::খাদ্যশষ্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের জনপদ দিনাজপুর। জেলায় ধান চাষের পাশাপাশি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ফলের চাষ। প্রতিবছরই জেলায় দেখা মিলছে নানা প্রজাতির বিদেশ ফলের। এবার জেলার দক্ষিণের উপজেলা নবাবগঞ্জে চাষ শুরু হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন।

নতুন এই ফল চাষ শুরু করে এলাকায় মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে উপজেলার কৃষক মতিউর মান্নান। এই ফলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। শুধু ফল চাষই নয়, বাগানটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারের।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উত্তরবঙ্গে প্রথমবারের মতো এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে। এই উপজেলায় ৪ বিঘা জমিতে ৫ প্রজাতির ৯০০ ত্বীন ফলের গাছ লাগিয়েছেন কৃষক মতিউর মান্নান। ইতিমধ্যে বাগানের গাছগুলোতে ফলও আসতে শুরু করেছে।

বাগান দেখতে আসা রোকন ও জুলহাজ বলেন, আমরা শুধু ফেসবুক, টিভিতে দেখি ত্বীন ফল। পবিত্র কোরআনেও এই ফলে নাম আছে। আজ বাগানে এসে বাস্তবে ফলটি দেখতে পেরে আমাদেরকে অনেক ভালো লাগলো।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে চাষ শুরু হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন

তারা বলেন, ফলগুলো দেখতে ডুমুর আকৃতির। গাছে অনেক ফল ধরেছে। এই ফলটি আমাদের এলাকায় প্রথম চাষ হচ্ছে। ফলের বাগান দেখে আমাদের এরকম বাগান করার ইচ্ছে হচ্ছে। আমরা বাগান দেখার পাশাপাশি মতিউর মান্নানের কাছ থেকে এই ফল চাষের পদ্ধতি সর্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম। আমরা ভবিষতে এরকম বাগান করবো।

বাগানের শ্রমিক লাবলুসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমরা ১০ জন ত্বীন ফলের বাগানে কাজ করছি। করোনায় কোনো কাজকর্ম ছিলো না। মতিউর ভাই ত্বীন ফলের বাগান করায় এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এখানে কাজ করে আগের থেকে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। মতিউর ভাইয়ের মতো এলাকায় আরো যদি কেউ বাগান তৈরি করে, তাহলে আরো বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

ফলচাষি মতিউর মান্নানের ত্বীন ফলের বাগানে

ত্বীন ফলচাষি মতিউর মান্নান বলেন, করোনা মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আর এ সময় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি। এরপর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। পরে ছোট বোনের পরামর্শে গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা এনে গেলো বছরের অক্টোবর মাসে ৪ বিঘা পতিত জমিতে চাষ শুরু করি।

বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভয় পেলেও চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করায় আমি খুব খুশি। দুই-একটি করে ফল পাকতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজার ফলটি চাহিদা অনেক, দামও ভালো। প্রতিকেজি ফল বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে।

দেখতে অনেকটা ডুমুরের মতো হলেও ত্বীন ফল খেতে সুস্বাদু

তিনি আরও বলেন, বাগান সম্প্রসারণ করতে ইতিমধ্যে আমি গাছে কলম করতে শুরু করেছি। কলমগুলো করে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবো।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে গাজীপুরের পর প্রথমবারের মতো আমাদের এলাকায় এই ফলের চাষ শুরু করেছে কৃষক মতিউর মান্নান। ত্বীন ফলটি মরুভূমি এলাকার বেশি পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়াও এর ঔষধি অনেক গুণাবলি রয়েছে। কেউ যদি এই ফলের বাগান নতুন করে তৈরি করতে চায় আমাদের কৃষি অফিস তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মতিউর নামের ওই কৃষককে সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে।