সারাদিন ডেস্ক:: ১৫ সালের পে-স্কেল সরকারী চাকরীজিবিদের মাঝে সৃষ্টি করেছে চরম বৈষম্য এবং অনাসৃষ্টি। একই স্কেলে একেকজনের জন্য একেকরকম বেতন ব্যবস্থা নিম্ন পদস্থদের চরমভাবে করেছে হতাশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কর্মচারীদের কাছে এটা একটা লজ্জাস্কর ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়। বেতন কমিশনে থাকা উচ্চপদস্থরা নিজেদের সুবিধা বাড়াতে গিয়ে নিম্নপদস্থদের করেছেন বঞ্চনার শিকার। বরং আগের সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে ঠান্ডা মাথায়। দেয়া হয়েছ শুভঙ্করের ফাকি। বঞ্চিত কর্মচারীরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন এই বেতন বৈষম্য দূরীকরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশায়।
২০0৯ সালের পে-স্কেলে নিয়ম ছিল, আট বছর চাকরি পূর্ণ হলে প্রথমবারের মতো গ্রেড উন্নীত হবে, যাকে টাইম স্কেল বলা হতো। ২০১৫ সালের পে-স্কেলে তা বাদ দিয়ে নিয়ম করা হয়- ১০ বছর চাকরির পর প্রথমবারের মতো গ্রেড পরিবর্তন হবে। ধরা যাক, একজন ১৮ নম্বর ধাপে চাকরি শুরু করেছেন। ১০ বছর অপেক্ষার পর তার বেতন বাড়বে ২০০ টাকা।
এটা কি চরম অপমান ও তামাশা বলা যায়। কর্মচারীদের গ্রেড পরিবর্তনে বেতন বাড়ে ২০০-৩০০ টাকা, আর কর্মকর্তাদের গ্রেড পরিবর্তনে বেতন বাড়ে ৬,০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। ২০ তম গ্রেড ৮২৫০/- আর ১০ তম গ্রেড ১৬০০০/- এই রেশিও মতে ১ম গ্রেডের বেতন হওয়ার কথা ৩২০০০/- কিন্তু সেটা হয়েছে ৭৮,০০০ টাকা।
৯ম গ্রেডে প্রারম্ভিক বেতন ২২,০০০/- তিন ধাপ পর হয় ৩৫,৫০০- বৃদ্ধির হার ৬১.৩৬%।
১৬তম গ্রেডে প্রারম্ভিক বেতন ৯৩০০/- তিন ধাপ পর হয় ১১,০০০/- বৃদ্ধির হার ১৮.২৮%।
২০তম গ্রেডে প্রারম্ভিক বেতন-৮২৫০/- তিন ধাপ পর হয় ৯,০০০/- বৃদ্ধির হার ৯.০৯%।
২০ গ্রেডের ৮,২৫০/- টাকা স্কেলের একজন কর্মচারী সব মিলিয়ে ১৪,৪৫০/- টাকা পায় যা দিয়ে বর্তমান বাজারে ০৬ (ছয়) সদস্যের পরিবারের পুরো মাসের যোগান দেওয়া অসম্ভব। ২০০ টাকার টিফিন ভাতায় এক মাস টিফিন খাওয়া সম্ভব হয়না। তাহলে এই প্রহসনের উত্তর কোথায়।
আবার একই ডিপার্টমেন্টের একই গ্রেডের একই পে-স্কেলের একটি পদের পদন্নোতি হচ্ছে অন্য পদের পদন্নোতি নেই। সারা জীবন একই পদে চাকুরী অথবা নামমাত্র পদোন্নতি নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন তারা। চাকুরী জীবনে যেমন চরমভাবে নিষ্পেষিত হচ্ছে উপরন্তু বেতন স্কেল না বাড়ায় তাঁর পেনশনও অনেক কম পান। অর্থাৎ বুড়ো বয়সের অবসর জীবনেও তাকে খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে ধুঁকে ধুঁকে। কিন্তু কেন এত বৈষম্য থাকবে? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি বাজরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অথচ দেশের জন্য যারা খাটছে তাদের সামান্য কটা টাকা বাড়তি দেয়াতে সরকার দেওলিয়া হয়ে যাবে উপরের গ্রেডের চাকরিজীবীরা হয়তো বলতে পারেন, নিচের দিকের গ্রেডগুলোতে জনবল বেশি। তাই তাদের বেশি বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। দেশের প্রতি তাদের এতই যদি মায়া থাকে, তাহলে নিজেদের গ্রেডগুলোর মধ্যকার পার্থক্য এত বেশি কেন?_
এমনিতেই উপরের দিকের গ্রেডে চাকরি করছেন, এরপর বেতন বৃদ্ধি যদি নিচের দিকের গ্রেডগুলোর চেয়ে দু’-তিন গুণ বেশি হতো, তবু কম হতো না। কিন্তু তাদের বেতন বাড়ে নিচের দিকের গ্রেড গুলোর চেয়ে ২০-২৫ গুণ বেশি। তাদের এত বেতন দিতে গেলে দেশের অর্থনীতির ওপর কি চাপ পড়ে না? এসব হচ্ছে বাহানা। নিজেরা বেতন কম নিয়ে দেশপ্রেমের কথা বললে তা সত্যিকার দেশপ্রেম হতো। প্রয়োজন ইতিবাচক চিন্তার। উচ্চস্তরের চাকরিজীবীদের মধ্যে অতি স্বল্প সংখ্যক আমলা নামের আকামের কামলাদের হিংসুটে থাবা থেকে দেশের অসহায় জনগণ ও নিম্নস্তরের কর্মচারীদের মুক্তি দিতে না পারলে দেশের সুষম উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তাই করমচারী সমন্বয় পরিষদের দাবী, সকল বিভাগের সকল পদের কর্মচারীদের পদন্নোতি থাকতে হবে, পদোন্নতির পদ না থাকলে ৫ (পাঁচ) বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। বৈষম্য কমাতে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। সমস্যা হলো, নিম্নস্তরের কর্মচারীদের চাপা কান্না শোনার মতো কেউ নেই। শোষিতজনের আর্তনাদে দরদী হওয়ার জন্য বর্তমানে কেউ নেই। একজন ছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নস্তরের কর্মচারীগণের দাবীর পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন।
সেই নেতা নেই, তর্জনীর সাবধানী সংকেত আর বজ্রকন্ঠের হুংকারও নেই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো নব্যযুগের মিরজাফররা। সেই মিরজাফরের দোষররা আজো কৌশলে অসহায় মানুষের রক্ত পান করে চলেছে। তাঁর কন্যা মজলূম মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হলেও সুবিধাভোগীরা চারপাশে এমন দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন যাতে মজলুমের কান্না তাঁর কানে পৌঁছাতে না পারে।
তাই বঞ্চিত মানুষের একতা যেমন প্রয়োজন তেমনি বঞ্চণার খতিয়ান মানবতার নেত্রী, উন্নয়নের কান্ডারী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নজরেও নেয়া প্রয়োজন।