স্টাফ রিপোর্টার:: ‘এসএসসি ক্যান্ডিডেট ২০২৩’ এই ফেসবুক গ্রুপের সদস্য প্রায় ২৭ হাজার। এই ওপেন গ্রুপে শনিবার রাতে একটি পোস্ট দেয়া হয়। মোটা দাগে পোস্টে বলা হয়, অর্থ দিলেই মিলবে প্রশ্ন এবং উত্তর। প্রশ্ন নিতে চাইলে শুরুতেই দিতে হবে ৫০ শতাংশ অর্থ। তবে এই পোস্টে ছিল না কোনো যোগাযোগ নম্বর। এই একই পোস্টের তথ্য দেয়া হয় অনেক শিক্ষার্থীর ম্যাসেঞ্জারেও। পোস্টটি করা হয় মাসুদ খান নামে একটি আইডি থেকে। আইডিটি ছিল লক করা। ফলে আইডি থেকে কোনো তথ্য মেলা সম্ভব হয়নি। এই আইডিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মেলেনি কোনো সাড়া। এরপর পোস্টটি ডিলিট করে আইডি ডিএকটিভ করে দেয়া হয়।
এমনিতেই গতবছরের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিব্রত সরকার। এবার সরকার চায় না কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে বারংবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন ব্যাংকিং নজরদারিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ফেসবুক ও হোয়াটসআপে চারটি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে। যেগুলো ইনএকটিভ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)কে তথ্য দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৯শে এপ্রিল খোলা দুটি পেজে বলা হয়েছে, প্রশ্ন কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্ন দেয়া হবে।
আরেকটি গ্রুপে অগ্রিম টাকা ছাড়াই প্রশ্ন ও উত্তর দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে কমন পড়লে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়। প্রশ্ন নিতে চাইলে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশনের ছবি চাওয়া হয়।
গতকাল শুরু হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সারা দেশে একযোগে সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয় ২৩ নির্দেশনা। শিক্ষামন্ত্রী গতকাল রাজধানীর বাড্ডা হাই স্কুলে পরিদর্শনে যান। এসময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সারা দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনিয়মের ঘটনা শোনা যায়নি। করোনা মহামারির পরবর্তী দুই বছর পর এবার পূর্ণ সিলেবাসে শতভাগ নম্বরে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়ার জন্য আমরা সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনিটরিং করবে। সুতরাং কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই। বিভিন্ন সময়ে ভুল প্রশ্ন বিতরণের ঘটনা বিভিন্ন কেন্দ্রে হয়ে থাকে। যাদের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবার যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা সজাগ রয়েছি।
তবে সরকারের দেয়া ২৩ নির্দেশনা কতোটুকু মানা হচ্ছে পরীক্ষাকেন্দ্রে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রী পরিদর্শন করা বাড্ডা হাই স্কুলেই মানা হয়নি নিয়ম। নির্দেশনায় বলা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করতে হবে কেন্দ্রে। দেরি হলে কারণসহ তার নাম রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গতকাল সরজমিন দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী দেরিতে প্রবেশ করলেও মানা হয়নি নির্দেশনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এই নিয়ম কেন মানা হয়নি সেটি জানতে চাওয়া হবে।
এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রে বিলম্ব করে প্রবেশ করলে অবশ্যই রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করে প্রবেশ করতে হবে। সেটি এখানে দেখা যায়নি। তবে কেন সেটি করা হয়নি আমরা তার কারণ জানতে চাইবো।
পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রমুখ।
আবার জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বক্তারমুন্সি ফাজিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। পরীক্ষার শুরুতে কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় ফেসবুকে প্রায় ১৪ মিনিটের একটি লাইভ ভিডিও করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া। পরে সমালোচনার মুখে ডিডিওটি ডিলিট করেন তিনি।
এদিকে প্রথম দিনে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে অংশগ্রহণ করেন ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৬২৭ জন পরীক্ষার্থী। আর অনুপস্থিত ছিলেন ১৭ হাজার ১৯২ জন। আর বহিষ্কার করা হয়েছে চার শিক্ষার্থীকে। শতকরা হারে সর্বাধিক অনুপস্থিত কুমিল্লা বোর্ডে ১.৪৮ শতাংশ। মোট অনুপস্থিতি হার ১.১৪। আর বহিষ্কৃত চার শিক্ষার্থীর তিন জনই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ও একজন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থী। প্রথম দিনে কোনো কক্ষ পরিদর্শককে বহিষ্কার করা হয়নি। দুই হাজার ২৩৪টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৭৩৯টি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করেন এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৩ জন। অনুপস্থিত ছিলেন দুই হাজার ৮৭২ জন, শতকরা হার ২.৪০। বহিষ্কার করা হয় ১১ পরীক্ষার্থীকে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ৭১৬টি কেন্দ্রে অংশ নেন দুই লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯৮ জন, অনুপস্থিত ১১ হাজার ৩৮৩ জন। শতকরা ৪.২৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী ছিলেন অনুপস্থিত আর বহিষ্কার করা হয় পাঁচ পরীক্ষার্থীকে। সর্বমোট ১১টি বোর্ড জানায়, পরীক্ষার পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। প্রথম দিন নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বাংলা প্রথম পত্র, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বাংলা-২ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে কোরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।