অনলাইন ডেস্ক:: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক পিডির (প্রকল্প পরিচালক) হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ডিজি (মহাপরিচালক)। প্রকল্প পরিচালক ডিজিকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। এতে শঙ্কিত হয়ে ডিজি নিরাপত্তা চেয়ে ১২ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে আবেদন করেছেন। এছাড়া ডিজি ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার এবং পিডি ডা. মো. আজিজুল ইসলাম পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ-১) এটিএম মোস্তফা কামাল বলেন-দুর্নীতি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের দায়ে প্রকল্প পরিচালক ডা. আজিজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া মহাপরিচালকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। বিষয়গুলো বাছাই করে গুরুতর অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছি।
প্র্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়-অনিয়ম, দুর্নীতি, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৫ অক্টোবর ডা. আজিজুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। তবে প্রতিবারই তিনি তদবির করে তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি মন্ত্রণালয়ে সচিবের উপস্থিতিতেই সংস্থাটির মহাপরিচালকের সঙ্গে তর্কে জড়ান এবং তুচ্ছজ্ঞান করে কথা বলেন। সচিবের উপস্থিতিতে ডিজির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং আগে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।
ডা. আজিজুল ইসলাম তার বরখাস্ত প্রত্যাহারের জন্য সচিবের কাছে আবেদন করেন। নিয়ম অনুসারে কর্তৃপক্ষ হিসাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির মাধ্যমে এ আবেদন সচিবের কাছে পৌঁছানোর কথা। সেই হিসাবে ১২ অক্টোবর তার আবেদন মন্ত্রণালয়ে সচিবের কাছে পাঠানোর জন্য তিনি ডিজিকে চাপ দিতে থাকেন। এ সময় ডিজি অধিদপ্তরের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করছিলেন। ডা. আজিজুল ইসলাম ডিজির সঙ্গে কথা আছে বলে তাকে পরিচালকের কক্ষে বসতে বলেন। ডিজি সেখানে বসলে তার বরখাস্ত প্রত্যাহারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠনোর প্রস্তাব দেন। জবাবে ডিজি জানান, এ বিষয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। এ সময় ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, তার আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে এবং বিষয়টি তাদের জানাতে হবে বলে চ্যাঁচামেচি করতে থাকেন।
এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং উপপরিচালক ডা. আজিজুল ইসলামকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাদের চেষ্টা উপেক্ষা করে তিনি মহাপরিচালককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তিনি এ সময় ডিজিকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। পরিচালক প্রশাসন তাকে সীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে সতর্ক করলেও তিনি ডিজিকে ধাক্কা দেন। পরবর্তীতে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এগিয়ে এলে ডা. আজিজুল ইসলাম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ডা. মো. অজিজুল ইসলাম বলেন, ডিজিকে আমি লাঞ্ছিত করিনি। তার হাত ধরে ক্ষমা চাইতে চেয়েছি। এখন তিনি বলছেন আমি তাকে লাঞ্ছিত করেছি, হুমকি দিয়েছি। আমার পদোন্নতির সময় হয়েছে, সে কারণে আমার পেছনে একটা গ্রুপ লেগেছে। একজন ঠিকাদার আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে সে বিষয়ে কি বলবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।
অপরদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জমা হয়েছে। এছাড়া তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় পশুসম্পদ কর্মকর্তা হিসাবে এবং তার স্ত্রী ভেটেরিনারি সার্জন হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের ভাতার ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যাদের ভাতা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয় তারাই সচিব এবং দুদকের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা পশুসম্পদ দপ্তরের কর্মচারী মো. আব্দুল লতিফ আকন্দ বলেন, আমরা অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রতিকার পাইনি। এখন অবসরে চলে এসেছি। আমাদের টাকাতো আর পাব বলে মনে হয় না।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গিয়ে জানা গেছে ডিজি সাতক্ষীরা সফরে গেছেন। বুধবার আবার তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার একান্ত সচিব ডা. মো. সোহেল জানান তিনি বাহিরে আছেন। তবে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মচারী জানান তিনি অফিসেই আছেন। তার সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে কোন বিষয়ে কথা বলতে চাই তা জানিয়ে বার্তা (মেসেজ) দিলেও তিনি সাড়া দেননি।