ঢাকা ০৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

গুলিতে নিহিত আবু সাঈদের জন্য কাদছে পীরগঞ্জের মানুষ

নাজমুল হুদা, পীরগঞ্জ, রংপুর থেকে_ চিরনিদ্রায় শায়িত আবু সাঈদের কবরে ছায়া দিচ্ছে পিতরাজ গাছ। যে উঠানে আবু সাঈদ ঘুরে বেড়াতেন সেখানেই তার দাফন হয়েছে। প্রত্যন্ত এক গ্রামের মেধাবী সন্তানের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। শোকে ভেঙে পড়েছে সাঈদের পরিবার। সন্তানের মৃত্যুতে মা বাকরুদ্ধ। বাবা হাউমাউ করে কাঁদছেন। ভাইবোনদের চাপা কান্না। পাড়া-পড়শীদের মধ্যেও শোকের মাতম। কাঁদছে পীরগঞ্জ। তার গ্রামের প্রত্যেক মানুষ বলছেন, সাঈদ মেধাবী।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান। লেখাপড়া করেছেন কষ্ট করে। ভ্যান চালিয়ে অন্যের জমির শাক-সবজি হাটে নিয়ে গেছেন। সেগুলো বিক্রি করে কিনেছেন খাতা-কলম। স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করার। করবেন বড় চাকরি। সাঈদের বাড়ি পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে। সে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা মনোয়ারা বেগম চেয়ারে বসে কবরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনোয়ারা বলেন, ‘হামার ছোল বেশি ভালোবাসে মাইনষের ভালোবাসা। ছোলকে একাই কষ্ট করে পালছি। কতো কষ্ট করে বড় করছি। ছোলে হামাক বলে মা, কি চাকরি করিম। কলাম, তোমাক যা মনে চায়। আমি মূর্খ মানুষ বুঝি না। চাকরি হলে হামাক অনেক কিছু আনি দিবে। চাকরি নাই টাকা পাবে কনে।’
কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, ‘ছোল মোর কেবল পায়ে দাঁড়িয়ে উঠছিল। এরমধ্যে হারি গেল। বুক ফাটি চলছে। যায় মারছে তার ফাঁসি হবি?’
সাঈদের বাবা বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। শরীর হাড্ডিসার। সাঈদের কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বাবা মকবুল হোসেন বললেন, ‘ঈদের সময় ৩ দিন বাড়ি এসে থেকে গেছে। যাওয়ার সময় কইছে, আব্বা আমি যাচ্ছি। ওই যাওয়াই শেষ যাওয়া। বায়ি আইলো তবে লাশ হয়ে। লাশ হইয়া আইলো বাবায়। ছেলের সাথে হামার আর কথা হয় নাই। তিনি বলেন, ছেলে বহু কষ্ট করে পড়ছে। আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। জমি বন্ধক রেখে পড়তে টাকা দিয়েছিলাম। এখনো হামার পরিশ্রম করবার নাগে। না করলেও হয় না। সংসার চলে না।’
মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলে কইতো বাবা আমার জন্য চিন্তা কইরো না। চাকরি হবিই। সেই ছেলে এখন লাশ হয়ে বাড়িতে এলো। দুঃখ থুবার জায়গা নাই বাবা। ছেলে কোচিং করে নিজেই লেখাপড়া করেছে। বাড়িঘর করবো। সুখ ভোগ করে দেখাবি। তা পারলি না আমার বাবা। আমার ছেলে দেশ, দশের জন্য মরছে। ছেলেকে যে মারলো আমি তার ফাঁসি চাই।’
সাঈদের বোন সুমি বেগম বলেন, ভাইয়োক কসনু ভাই, মাইনষে বিসিএস করে। কনতো কি চাকরি এটা। কসে, বিসিএস মানে নিবন্ধন একটা। ওটাও চাকরির পরীক্ষা। বোন আমি চেষ্টা করি। হামরা বিশ্বাস করিছি হামার ভাইর হবি বিসিএস। হামার ভাই এমন কোনো পরীক্ষা নাই, দিয়ে টেকে না। হায়রে আমার ভাইয়ের মেধা। আমরা কতো আশা করছিনু ভাইয়োক নিয়ে। সব আশা হামাক কারেক নিলো। ভাই হামাক কতো আশা দেখালো। কইছিল হামরা মাস্টারের বোন হমু। হামার ভাই চোখে চশমা দিলে খালি মাস্টার মাস্টার নাগছিল। মনটা খুশিতে ভরছিল। হামার সেই ভাই হারে গেল। হায়রে পাপি তুই। হায়রে নিষ্ঠুর। এমন করে গুলি করলু।’
তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য হামার ভাই এটা করে নাই। হামার ভাই মেধায় চাকরি দিলুনে। অন্য মেধাবী ছাত্রদের জন্য করছে। নিজের বুক পাতি দিছে। হামরা যদি জানু হয় হামরা ভাই ওটা করুচ্ছে। হামরা যাইয়া বুক পাতি দিতুনে।’
বড় ভাই রমজান আলী জানান, আবু সাঈদ প্রাইমারিতে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। মাধ্যমিকে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন পেয়েছে। গোল্ডেন পাওয়ায় দুইটা ব্যাংক থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে সরকারি কলেজে পড়েছে। রমজান বলেন, আমাদের পরিবারে তারচেয়ে আর কেউ বেশি লেখাপড়া করেনি। ওর হাতে সব সময় বই থাকতো। সাঈদ বাবাকে বলতো, তুমি জমির চিন্তা করো ক্যা। জমি কি ভাত দিবে। আমি আছি তো। চাকরির জন্য একটা টাকা দেওয়া লাগবো না এটা নিশ্চিত থাকো। ওইদিন দুপুরে সাঈদের মৃত্যু সংবাদ পান রমজান। পরে ছুটে যান লাশ আনতে। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পরেও লাশ মর্গে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা চাইছিলাম লাশটা যেনো মর্গে না যায়। আমরা কিছুই চাই না, শুধু সাইদের লাশটা যেভাবে আছে সেভাবেই চাইছিলাম। কিন্তু সেটা আমাদের দেয়নি। সাঈদের মাথার পেছনে একটা গুলির আঘাত ছিল। পুলিশ ওটা এড়ানোর জন্য ডোম ঘরে নিয়ে গেছিলো। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার চাই। যে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করছে, যার নির্দেশে করছে, আল্লাহ যেনো তার সঠিক বিচার করে।
রুহুল আমিন আর আবু সাঈদ একই মেছে থাকতেন। সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র। একই ডিপার্টমেন্টের ৭ম ব্যাচের ছাত্র রুহুল আমিন। সম্পর্কে তারা জেঠাতো ভাই। রুহুল আমিন বলেন, সাঈদ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আমি নিজেই গিয়ে ওকে ভর্তি করাই। আমি যে মেছে ওই মেছেই আমার কাছে তুলে নেই। সে অনেক মেধাবী, নিষ্ঠাবান ছিল। স্বপ্নই দেখতো, ভালো একটা জায়গায় যাওয়ার। পরিবার ও দেশের জন্য কিছু করার। সব সময় ন্যায় ও নীতির পক্ষে ছিল। অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় নাই। এমনকি মেছের মিল (খাবার) কখনো বেশি নিতো না।
তিনি বলেন, সে যে মেধাবী, এই কোটা থাকলেও সে একটা চাকরি ম্যানেজ করতে পারতো। কিন্তু সে সকল মেধাবী ছাত্রদের কথা চিন্তা করে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছে। যাতে রিকশাচালক, দিনমজুর, ভ্যানচালকের সন্তানরাও পায় চাকরিÑ সেই আশা করেছিল সে।
আবু সাঈদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না বলেও জানান রুহুল।
করিম আর আবু সাঈদ একই বংশের। সম্পর্কে চাচাতো ভাই। করিমও বিলাপ করে বলেন, ভ্যানে করে মানুষের ক্ষেতের শাক-সবজি হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে যা টাকা লাভ হইছে তা দিয়ে খাতা- কলম কিনতো। খুব কষ্ট করছে। জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন আবু সাঈদ। ২০১০ সালে ওই স্কুল থেকেই বৃত্তি পেয়েছেন। এখনো স্কুলে বৃত্তি তালিকায় তার নাম ঝুলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজহার আলী। জন্মের পর থেকেই সাঈদকে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন আজহার আলী। তিনি বলেন, তার স্মরণ শক্তি ছিল প্রখর। যেকোনো টপিক বললে সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখতে পারতো। সে আমাদের স্কুল থেকে বৃত্তি পায়। পাস করার পর সে আমাদের পরামর্শে হাই স্কুলে ভর্তি হয়। এরপর ইন্টারে রংপুর কলেজ থেকে অনার্সে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
পীরগঞ্জের মদনখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মঞ্জু মিয়া বলেন, আমাদের এখান থেকে একটা প্রদীপ চলে গেল। আল্লায় বাঁচাই রাখলে তার মেধায় চাকরি হয়ে যেতো। তারা দরিদ্র। ছেলেটা যদি ভবিষ্যতে কিছু করতো তাহলে পরিবারটা চলতে পারতো।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ

গুলিতে নিহিত আবু সাঈদের জন্য কাদছে পীরগঞ্জের মানুষ

আপডেট টাইম ০৪:২৫:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪
নাজমুল হুদা, পীরগঞ্জ, রংপুর থেকে_ চিরনিদ্রায় শায়িত আবু সাঈদের কবরে ছায়া দিচ্ছে পিতরাজ গাছ। যে উঠানে আবু সাঈদ ঘুরে বেড়াতেন সেখানেই তার দাফন হয়েছে। প্রত্যন্ত এক গ্রামের মেধাবী সন্তানের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। শোকে ভেঙে পড়েছে সাঈদের পরিবার। সন্তানের মৃত্যুতে মা বাকরুদ্ধ। বাবা হাউমাউ করে কাঁদছেন। ভাইবোনদের চাপা কান্না। পাড়া-পড়শীদের মধ্যেও শোকের মাতম। কাঁদছে পীরগঞ্জ। তার গ্রামের প্রত্যেক মানুষ বলছেন, সাঈদ মেধাবী।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান। লেখাপড়া করেছেন কষ্ট করে। ভ্যান চালিয়ে অন্যের জমির শাক-সবজি হাটে নিয়ে গেছেন। সেগুলো বিক্রি করে কিনেছেন খাতা-কলম। স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করার। করবেন বড় চাকরি। সাঈদের বাড়ি পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে। সে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা মনোয়ারা বেগম চেয়ারে বসে কবরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনোয়ারা বলেন, ‘হামার ছোল বেশি ভালোবাসে মাইনষের ভালোবাসা। ছোলকে একাই কষ্ট করে পালছি। কতো কষ্ট করে বড় করছি। ছোলে হামাক বলে মা, কি চাকরি করিম। কলাম, তোমাক যা মনে চায়। আমি মূর্খ মানুষ বুঝি না। চাকরি হলে হামাক অনেক কিছু আনি দিবে। চাকরি নাই টাকা পাবে কনে।’
কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, ‘ছোল মোর কেবল পায়ে দাঁড়িয়ে উঠছিল। এরমধ্যে হারি গেল। বুক ফাটি চলছে। যায় মারছে তার ফাঁসি হবি?’
সাঈদের বাবা বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। শরীর হাড্ডিসার। সাঈদের কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বাবা মকবুল হোসেন বললেন, ‘ঈদের সময় ৩ দিন বাড়ি এসে থেকে গেছে। যাওয়ার সময় কইছে, আব্বা আমি যাচ্ছি। ওই যাওয়াই শেষ যাওয়া। বায়ি আইলো তবে লাশ হয়ে। লাশ হইয়া আইলো বাবায়। ছেলের সাথে হামার আর কথা হয় নাই। তিনি বলেন, ছেলে বহু কষ্ট করে পড়ছে। আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। জমি বন্ধক রেখে পড়তে টাকা দিয়েছিলাম। এখনো হামার পরিশ্রম করবার নাগে। না করলেও হয় না। সংসার চলে না।’
মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলে কইতো বাবা আমার জন্য চিন্তা কইরো না। চাকরি হবিই। সেই ছেলে এখন লাশ হয়ে বাড়িতে এলো। দুঃখ থুবার জায়গা নাই বাবা। ছেলে কোচিং করে নিজেই লেখাপড়া করেছে। বাড়িঘর করবো। সুখ ভোগ করে দেখাবি। তা পারলি না আমার বাবা। আমার ছেলে দেশ, দশের জন্য মরছে। ছেলেকে যে মারলো আমি তার ফাঁসি চাই।’
সাঈদের বোন সুমি বেগম বলেন, ভাইয়োক কসনু ভাই, মাইনষে বিসিএস করে। কনতো কি চাকরি এটা। কসে, বিসিএস মানে নিবন্ধন একটা। ওটাও চাকরির পরীক্ষা। বোন আমি চেষ্টা করি। হামরা বিশ্বাস করিছি হামার ভাইর হবি বিসিএস। হামার ভাই এমন কোনো পরীক্ষা নাই, দিয়ে টেকে না। হায়রে আমার ভাইয়ের মেধা। আমরা কতো আশা করছিনু ভাইয়োক নিয়ে। সব আশা হামাক কারেক নিলো। ভাই হামাক কতো আশা দেখালো। কইছিল হামরা মাস্টারের বোন হমু। হামার ভাই চোখে চশমা দিলে খালি মাস্টার মাস্টার নাগছিল। মনটা খুশিতে ভরছিল। হামার সেই ভাই হারে গেল। হায়রে পাপি তুই। হায়রে নিষ্ঠুর। এমন করে গুলি করলু।’
তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য হামার ভাই এটা করে নাই। হামার ভাই মেধায় চাকরি দিলুনে। অন্য মেধাবী ছাত্রদের জন্য করছে। নিজের বুক পাতি দিছে। হামরা যদি জানু হয় হামরা ভাই ওটা করুচ্ছে। হামরা যাইয়া বুক পাতি দিতুনে।’
বড় ভাই রমজান আলী জানান, আবু সাঈদ প্রাইমারিতে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। মাধ্যমিকে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন পেয়েছে। গোল্ডেন পাওয়ায় দুইটা ব্যাংক থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে সরকারি কলেজে পড়েছে। রমজান বলেন, আমাদের পরিবারে তারচেয়ে আর কেউ বেশি লেখাপড়া করেনি। ওর হাতে সব সময় বই থাকতো। সাঈদ বাবাকে বলতো, তুমি জমির চিন্তা করো ক্যা। জমি কি ভাত দিবে। আমি আছি তো। চাকরির জন্য একটা টাকা দেওয়া লাগবো না এটা নিশ্চিত থাকো। ওইদিন দুপুরে সাঈদের মৃত্যু সংবাদ পান রমজান। পরে ছুটে যান লাশ আনতে। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পরেও লাশ মর্গে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা চাইছিলাম লাশটা যেনো মর্গে না যায়। আমরা কিছুই চাই না, শুধু সাইদের লাশটা যেভাবে আছে সেভাবেই চাইছিলাম। কিন্তু সেটা আমাদের দেয়নি। সাঈদের মাথার পেছনে একটা গুলির আঘাত ছিল। পুলিশ ওটা এড়ানোর জন্য ডোম ঘরে নিয়ে গেছিলো। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার চাই। যে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করছে, যার নির্দেশে করছে, আল্লাহ যেনো তার সঠিক বিচার করে।
রুহুল আমিন আর আবু সাঈদ একই মেছে থাকতেন। সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র। একই ডিপার্টমেন্টের ৭ম ব্যাচের ছাত্র রুহুল আমিন। সম্পর্কে তারা জেঠাতো ভাই। রুহুল আমিন বলেন, সাঈদ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আমি নিজেই গিয়ে ওকে ভর্তি করাই। আমি যে মেছে ওই মেছেই আমার কাছে তুলে নেই। সে অনেক মেধাবী, নিষ্ঠাবান ছিল। স্বপ্নই দেখতো, ভালো একটা জায়গায় যাওয়ার। পরিবার ও দেশের জন্য কিছু করার। সব সময় ন্যায় ও নীতির পক্ষে ছিল। অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় নাই। এমনকি মেছের মিল (খাবার) কখনো বেশি নিতো না।
তিনি বলেন, সে যে মেধাবী, এই কোটা থাকলেও সে একটা চাকরি ম্যানেজ করতে পারতো। কিন্তু সে সকল মেধাবী ছাত্রদের কথা চিন্তা করে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করেছে। যাতে রিকশাচালক, দিনমজুর, ভ্যানচালকের সন্তানরাও পায় চাকরিÑ সেই আশা করেছিল সে।
আবু সাঈদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না বলেও জানান রুহুল।
করিম আর আবু সাঈদ একই বংশের। সম্পর্কে চাচাতো ভাই। করিমও বিলাপ করে বলেন, ভ্যানে করে মানুষের ক্ষেতের শাক-সবজি হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে যা টাকা লাভ হইছে তা দিয়ে খাতা- কলম কিনতো। খুব কষ্ট করছে। জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন আবু সাঈদ। ২০১০ সালে ওই স্কুল থেকেই বৃত্তি পেয়েছেন। এখনো স্কুলে বৃত্তি তালিকায় তার নাম ঝুলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজহার আলী। জন্মের পর থেকেই সাঈদকে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন আজহার আলী। তিনি বলেন, তার স্মরণ শক্তি ছিল প্রখর। যেকোনো টপিক বললে সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখতে পারতো। সে আমাদের স্কুল থেকে বৃত্তি পায়। পাস করার পর সে আমাদের পরামর্শে হাই স্কুলে ভর্তি হয়। এরপর ইন্টারে রংপুর কলেজ থেকে অনার্সে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
পীরগঞ্জের মদনখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মঞ্জু মিয়া বলেন, আমাদের এখান থেকে একটা প্রদীপ চলে গেল। আল্লায় বাঁচাই রাখলে তার মেধায় চাকরি হয়ে যেতো। তারা দরিদ্র। ছেলেটা যদি ভবিষ্যতে কিছু করতো তাহলে পরিবারটা চলতে পারতো।