আজম রেহমান,সারাদিন ডেস্ক:সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে ৩-০তে। এ নিয়ে ১২ বার ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার শন উইলিয়ামেসের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ে তুলেছিল ২৮৬ রান; সিরিজে তখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর। পরের ইনিংসেই তা হয়ে গেল অতীত। এই মাঠে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ জিতল ৪৭ বল বাকি রেখেই।
ইমরুল ও সৌম্যর জোড়া সেঞ্চুরিতে পিষ্ট হয়েছে জিম্বাবুয়ের বোলিং। দুজনের জুটিতে দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ২২০ রান এসেছে কেবল ১৮০ বলেই।
এই ম্যাচের আগেই হুট করে দলে যোগ করা হয়েছিল সৌম্য সরকারকে। তাকে রানে ফেরানোয় টিম ম্যানেজমেন্টের মরিয়া চেষ্টার আরেকটি ধাপ। এবার হতাশ করেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। চোখধাঁধানো সব স্ট্রোকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন যেন ২০১৫ সালের দিনগুলিতে। খেললেন ৯২ বলে ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
ইমরুল সিরিজ শুরু করেছিলেন ১৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংস দিয়ে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন মাত্র ১০ রানের জন্য। ক্যারিয়ারে প্রথমবার টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন এই ম্যাচে। সেখানেই না থেকে আবারও পৌঁছলেন তিন অঙ্কের তৃপ্তির ঠিকানায়।
একটি চূড়ায়। গড়েছেন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ইকবালের ৩১২ রান ছাড়িয়ে ইমরুল থামলেন ৩৪৯ রানে।
এমন দাপুটে রান তাড়ার শুরুটা ছিল প্রথম বলেই উইকেট হারিয়ে। লিটন দাসকে এলবিডব্লিউ করে দেন কাইল জার্ভিস।
সেই ধাক্কাকে চাপ হয়ে চেপে বসতে দেননি ইমরুল ও সৌম্য। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটেছেন দুজন। শুরুতে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন ইমরুল। তার যখন ৬০, সৌম্য তখন সবে ৪০ পেরিয়েছেন। কিন্তু পরে চার-ছক্কার ঝড়ে আগে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান সৌম্যই।
২০১৫ সালের এপ্রিলে, ক্যারিয়ারের দশম ম্যাচে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন সৌম্য। দ্বিতীয়টির দেখা পেলেন ৩৫তম ম্যাচে। সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৯৪ বলে। এ দিন লাগল মাত্র ৮১ বল। ৯ চার ও ৬ ছক্কার ইনিংস শেষে একটু গড়বড়, সীমানায় ধরা পড়ে ফিরলেন ১১৭ রানে।
আগের ম্যাচে যে ভুল করেছিলেন ইমরুল, এ দিন আর সেই পথে পা বাড়াননি। ৯৯ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরিটায় অবশ্য একটু আক্ষেপ মিশে থাকল এবারও। ফিরতে পারলেন না দলের জয় সঙ্গে নিয়ে। ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১১৫ করে তিনিও ফিরেছে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায়।
মুশফিক আর মিঠুন পাড়ি দিয়েছেন বাকি পথ। মুশফিকের ছক্কায় শেষ হয়েছে ম্যাচ।
ইমরুল-সৌম্যর ব্যাটিং তাণ্ডবের আগে ম্যাচের নায়ক ছিলেন উইলিয়ামস। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন আশা জাগানিয়া স্কোরে। উইকেটে গিয়েছিলেন তৃতীয় ওভারে। ২ উইকেট হারিয়ে তখন নড়বড়ে জিম্বাবুয়ে। বাকি পুরো সময় উইকেটে থেকে মাঠ ছেড়েছেন হার না মেনে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে অপরাজিত ১২৯ রানে।
আগেই সিরিজ জিতে যাওয়া বাংলাদেশ এ দিন একাদশে পরিবর্তন আনে তিনটি। ওয়ানডে অভিষেক হয় আরিফুল হকের, একাদশে ফেরেন সৌম্য সরকার ও আবু হায়দার।
নতুন বল হাতে পান আবু হায়দার ও সাইফ উদ্দিন। দুজন শুরুতেই কাঁপিয়ে দেন জিম্বাবুয়েকে। সাইফের প্রথম আর ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড ওপেসার সিফাস জুয়াও। পরের ওভারে আবু হায়দারের বল স্টাম্পে টেনে আনেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ৬ রানে জিম্বাবুয়ে হারায় ২ উইকেট। প্রথম ৫ ওভারের মধ্যে টানা ২২ বলে কোনো রান নিতে পারেনি তারা।
টেইলর ও উইলিয়ামসের জুটি শুরুর ধাক্কাকে পাত্তাই দেয়নি একদম। সাইফ উদ্দিনের এক ওভারে দুটি চারে পাল্টা আক্রমণের শুরু করেছিলেন উইলিয়ামস। পরে তিনি দায়িত্ব নেন উইকেট আগলে রাখার। টেইলর এগোতে থাকেন দারুণ সব শট খেলে।
আরিফুল-সৌম্যদের বাজিয়ে দেখতে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার ৫ পেসারে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। তবে শুরুর সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি অন্য পেসাররা। নাজমুল অপুকে স্পিন আক্রমণে এনেও খুব একটা লাভ হয়নি শুরুতে। তার প্রথম ৩ ওভার থেকে আসে ২১ রান।
তবে সাফল্য আসে অপুর স্পিনেই। দারুণ খেলতে থাকা টেইলর উইকেট বিলিয়ে এলেন বাজে এক শটে। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল স্লগ করতে গিয়ে বল তুলে দিলেন আকাশে। ভাঙল ১৩২ রানের জুটি। আগের ম্যাচে ৭৩ বলে ৭৫ করেছিলেন টেইলর। এবার করলেন ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭২ বলে ৭৫।
ততক্ষণে জিম্বাবুয়ের ড্রেসিং রুম ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। উইকেটে গিয়ে প্রথম বলেই সিকান্দার রাজার ছক্কায় থাকল সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন। ৮৪ রানের জুটি জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গেল ৪২ ওভার পেরিয়ে।
আগের ম্যাচে ৪৯ রানে আউট হওয়া রাজা এবারও হাতছাড়া করেছেন ফিফটি। অপুর ফুলটসে সীমানায় ক্যাচ দিয়েছেন ৪০ রানে।
জিম্বাবুয়ে দারুণ একটি জুটি পেয়ে যায় এরপরও। উইলিয়ামস রানের গতি বাড়িয়েছেন ততক্ষণে। মাশরাফির পরপর দুই বলে বিশাল দুটি ছক্কা মেরে চমকে দেন পিটার মুর। বাংলাদেশ অধিনায়কের ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। পঞ্চম উইকেটে ৬২ রানের জুটি আসে মাত্র ৪৩ বলে।
উইলিয়ামস ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১২৪ বলে। অপরাজিত থেকে যান ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১৪৩ বলে ১২৯ রানে।
জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ সেটিকে সাদরে গ্রহণ করে রচনা করেছে চ্যালেঞ্জ জয়ের নতুন গল্প।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৮৬/৫ (মাসাকাদজা ২, জুয়াও ০, টেইলর ৭৫, উইলিয়ামস ১২৯*, রাজা ৪০, মুর ২৮, চিগুম্বুরা ১*; আবু হায়দার ১/৩৯, সাইফ ১/৫১, আরিফুল ০/১৭, মাশরাফি ০/৫৬, সৌম্য ০/১৬, নাজমুল ২/৫৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৪০)।
বাংলাদেশ: ৪২.১ ওভারে ২৮৮/৩ (লিটন ০, ইমরুল ১১৫, সৌম্য ১১৭, মুশফিক ২৮*, মিঠুন ৭*; জার্ভিস ১/৪৭, এনগারাভা ০/৪৪, টিরিপানো ০/৩৩, রাজা ০/৪৭, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১/৭১, উইলিয়ামস ০/৪৩, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১/৩)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার
ম্যান অব দা সিরিজ: ইমরুল কায়েস