সারাদিন ডেস্ক::কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই কি ভবিষ্যতের চিকিৎসক? ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? কিডনি রোগ কি প্রতিরোধযোগ্য? এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি কিডনি বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজির (আইএসএন) প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট অধ্যাপক ডা. বিবেকানন্দ ঝা’র সাথে। অধ্যাপক ডা. বিবেকানন্দ ঝা ভারতের জর্জ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের নির্বাহী পরিচালক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস মার্টিন ফেলো। সম্প্রতি তার বাংলাদেশ সফরকালে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শুভার্থী কর-
শুভার্থী কর: প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, আপনি আইএসএন’র সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। আপনি কি আমাদের পাঠকদের উদ্দেশে আইএসএন’র কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলবেন?
বিবেকানন্দ ঝা: ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি পৃথিবীর সব কিডনি বিশেষজ্ঞদের শীর্ষ সংগঠন। এখানে কিডনি বিশেষজ্ঞ আছেন, বিজ্ঞানীরা আছেন। আমরা ইদানিং সিদ্ধান্ত নিয়েছি- অন্যান্য পেশাজীবী যেমন নার্স, টেকনিশিয়ানদেরও আইএসএন’র অন্তর্ভুক্ত করতে। কারণ তারাও কিডনি স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই আইএসএন এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে সারাবিশ্বের কিডনি বিশেষজ্ঞরা জড়ো হয়ে বিশেষত নিম্ন আয় বা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে কিডনি রোগীদের সেবার মান কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করে। আইএসএন স্বল্পোন্নত দেশের কিডনি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর সাথে উন্নত দেশের কিডনি চিকিৎসা কেন্দ্রের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়। এটি আমাদের আইএসএন সিস্টার সেন্টার প্রোগ্রাম। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের কিডনি বিশেষজ্ঞদের উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। যাতে তারা নিজেদের দেশে ফিরে কিডনি রোগীদের উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে। উন্নত দেশ থেকে আমরা অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত দেশে প্রশিক্ষক এনে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। যাতে স্বল্পোন্নত দেশের নাগরিকরা তাদের স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই উন্নত সেবা পান। আইএসএন’র কন্টিউিয়িং মেডিকেল এডুকেশন বা সিএমই এর মাধ্যমেও আমরা জ্ঞান বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শুভার্থী কর: তাহলে আমাদের বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও কি আইএসএন’র মাধ্যমে উন্নত দেশ থেকে একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারবেন?
বিবেকানন্দ ঝা: অবশ্যই। বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকজন আইএসএন’র প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে আমাদের যেসব সহকর্মী কিডনি বিশেষজ্ঞ আছেন, ভবিষ্যতেও তাদের সহায়তা করতে আইএসএন প্রস্তুত থাকবে।
শুভার্থী কর: বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়টি জেনে খুব ভালো লাগল। সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দেবেন?
বিবেকানন্দ ঝা: অগ্রাধিকার বলতে, প্রথমেই আমি ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজির দারুণ সব কর্মকাণ্ডকে সুন্দরভাবে সচল রাখার চেষ্টা করব। আইএসএন’র একটি বিশেষত্ব হলো, এটি জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি অনেক মানবিক দায়-দায়িত্ব পালন করে। যেমন বিভিন্ন দেশের সরকারের সাথে, জাতিসংঘের সাথে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আলোচনা করে স্বল্পোন্নত দেশের কিডনি রোগীদের সেবার মান বাড়ানোর ব্যাপারে নিয়মিত উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে কিডনি রোগের প্রকোপ বেশি এবং আগামী ১৫-২০ বছরে এ হার বাড়তেই থাকবে। গবেষণা আরও বলছে, ২০৪০ সাল নাগাদ কিডনি রোগ হবে পৃথিবীতে মৃত্যুর পঞ্চম কারণ। তাই আমি আমার মেয়াদকালে কিডনি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিভিন্ন দেশের সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করব এবং কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করব।
শুভার্থী কর: তাহলে আপনার কাছ থেকে আমাদের পাঠকরা জানতে পারলেন, কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের দেশের মানুষ এ রোগ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিতে পারেন?
বিবেকানন্দ ঝা: কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্যই নিয়মগুলো প্রযোজ্য। যেসব কারণে এ রোগ হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন- হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন। যারা রোদে কাজ করেন, যেমন- কৃষক, দিনমজুর তারা সহজেই পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। উৎস সম্পর্কে না জেনে কোন হারবাল বা ভেষজ গ্রহণ না করা, ধূমপান, সাদা জর্দা বর্জন করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা- এগুলো সাধারণ নিয়মাবলী। কেউ যদি মনে করেন, তার শরীরে কোন অসুবিধা হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে বা নিকটস্থ হাসপাতালে যাবেন এবং চেকআপ করাবেন।