প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জাতীয় ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন তা মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ডাক দিয়েছেন তা মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের আগে তিনি যখন আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন, তখন তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো কি রাখতে পেরেছেন? একটাও রাখতে পারেননি। অর্থাৎ রাখেননি। তিনি বলেছিলেন, কোনো গ্রেফতার হবে না। নতুন কোনো মামলা হবে না। এর একটাও তারা রাখেননি। নির্বাচনের একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কথা ছিল তাও করেননি। একইভাবে আজকে যে কথাগুলো তিনি বলছেন, তাও কথার কথা। এগুলো তিনি সবসময় বলেন। আমরা তো নির্বাচনের ফলাফলই প্রত্যাখ্যান করেছি। সেখানে নতুন করে শপথ নেয়া বা সংসদে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমি শুনেছি। তার বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে তিনি একটা ‘গিলটি কনসেন্স’ থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। কেন জানি না তার মনে হয়েছে, নির্বাচনটা ঠিক হয়নি, একটা ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। সেই ব্যাখাটি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি কেন ভালো করতে পারলো না, কেন তারা (আওয়ামী লীগ) এত ভালো করলেন। সাধারণত আমরা কী দেখি? একটা নির্বাচনের পরে এই ধরনের কথা কেউ আনে না। যে প্রতিপক্ষ কেন পরাজিত হলো। উনি বিএনপির ব্যাপারে অনেকগুলো কথা বলেছেন, তার চিন্ত-ভাবনা থেকে। আসল প্রকৃত ঘটনাতে কেন কেউ যেতে চাচ্ছে না। কারণ ভয়ে, মিডিয়াও বলছে না। অন্যান্য সবাইও বলতে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন পলিটিক্যাল এরিনা থেকে যে সমস্ত বক্তব্য এসেছে, যেসব রিপোর্ট এসেছে, তাতে করে প্রমাণিত হয়ে গেছে এই নির্বাচন কোনো নির্বাচনই হয়নি। এটা জাতীর সঙ্গে কঠিন তামাশা হয়েছে জাতির সঙ্গে। যে কথাটি আমরা বারবার বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এই নির্বাচন বাংলাদেশের একটি বড় রকমের ক্ষতি করে দিয়েছে দীর্ঘস্থায়ীভাবে। এই নির্বাচনের ফলে মানুষের নির্বাচন প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে আস্থা চলে গেছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর থেকেও আস্থা চলে গেলও। এই নির্বাচনের ফলে রাষ্ট্রের ওপর থেকেও আস্থা চলে যাচ্ছে এ জন্য যে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন এজেন্সিকেও ব্যবহার করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। যেটা আওয়ামী লীগ করেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘শুধু আমি নই, দেশের সব সচেতন মানুষ মনে করে, এই নির্বাচন কোনো নির্বাচনই হয় নাই। যে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও সবদল নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছি। পুনরায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন দাবি করেছি। সেই নির্বাচনে জনগণ যেন তাদের রায় দিতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মূলকথা হচ্ছে (প্রধানমন্ত্রী) উনি যে ফিরিস্তিগুলো দিয়েছেন, উনার ইশতেহার এবং কাজের ফিরিস্তি দিয়েছেন, সেখানেও বিরাট রকমের গরমিল রয়েছে। আমরা এর আগেও বলেছি, যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে এটা পুরোপুরি একটা ধোকার উন্নয়ন। কিছু মানুষ অত্যন্ত ধনী হচ্ছে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে যে দেশে ধনীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে। আর গরিব আরও গরিব হচ্ছে। প্রতিটি দ্রব্যমূল্যে বেড়েছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিচে চলে যাচ্ছে। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। বিনিয়োগের কোনো নিরাপত্তা নেই। ব্যাংকে যারা টাকা রাখছেন, তারা দেখছেন বিভিন্নভাবে তাদের টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতি এমনভাবে বেড়েছে, যা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্নও করতে পারে না। পুরোপুরি একদলীয় শাসনব্যবস্থা চলছে। সেটা করার জন্য এই ধরনের নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।’
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।