ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক জালাল উদ্দিনকে (৫০) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে রংপুর বিভাগীয় মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। ধর্মঘটের কারণে রংপুর বিভাগের আওতায় চার জেলার সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের প্রথম দিনে সকাল থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার অভ্যন্তরীণ ও দুরপাল্লার সকল রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় শ্রমিক নেতারা। কোন প্রকার মাইকিং বা আগাম প্রচারনা না করে এভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পরে সাধারণ মানুষ।
নিহত বাস চালক জালাল উদ্দিন (৫০) দিনাজপুর জেলার ১০ মাইল এলাকার বাসিন্দা।
ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী ও কর্মজীবি সাধারণ মানুষ। এমন উদাসীন ভাবে মটর পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের কয়েকদিন পরপর যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোগান্তিতে পড়া সাধারণ মানুষ।
ধর্মঘটের কারণে সময়মত কর্মস্থলে যেতে পারছে না অনেকেই। এমনি একজন আব্দুর রহমান ক্ষোভ নিয়ে বলেন, অন্যায় বা ন্যায় যে কোন প্রকার দাবি আদায় করার জন্য মানুষকে এভাবে জিম্মি করা এক প্রকার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে মটর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। কে ধর্মঘট ডাকলো আর কেন ডাকলো কিছু জানে না এরা। শুধু সাধারণ মানুষের ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও মটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার বলেন, রংপুর বিভাগীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসামিদের দ্রæত গ্রেফতারের দাবিতে ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্থির দাবিতে এই ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ৮টায় শ্যামলী পরিবহন সার্ভিসের যাত্রীবাহী একটি বাস কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট পার হয়ে শিকলবাহা (ভেল্লাপাড়া) ব্রিজ এলাকায় আসে। এ সময় ডিবি সদস্য পরিচয় দিয়ে আনুমানিক ৭ জন পুরুষ বাস থামান। এরপর তারা বাসে উঠে তল্লাশি শুরু করেন।
এক পর্যায়ে তারা ড্রাইভারকে হাতকড়া পরিয়ে বাস থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। পেটাতে পেটাতে আবারও তাকে বাসের ভেতরে এনে ইয়াবা বের করে দিতে বলে। ড্রাইভার তার কাছে কোনো ইয়াবা নেই জানালে ক্ষুব্ধ ডিবি সদস্যরা তাকে আবারও নামিয়ে রাস্তার পাশে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, রাস্তায় ফেলে লাথি মারা হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বাসের ভেতরে ফেলে ডিবি সদস্যরা দ্রুত চলে যায়। রাত আড়াইটার দিকে ড্রাইভার জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।