ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ড. মো. হারুনুর রশীদ পরিচালিত সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া বুধা’ মুক্তি পেয়েছে ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে না করলে চাকরিচ্যুতির নোটিশ!

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ::টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত এক সহকারী শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহ করার নির্দেশনামূলক পাক্কা নোটিশ জারি করেছেন প্রধান শিক্ষক। আর এমন নোটিশকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে। আর ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে না করলে চাকরিচ্যুত করার কথাও বলা হয়েছে।

লিখিত নোটিশে বলা হয়, আপনি গত ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দুধর্ম) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর অবগত হলাম আপনি অবিবাহিত। পরবর্তী সময়ে আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিবাহ করার জন্য। কিন্তু যোগদানের কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও আপনি বিবাহ করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে পাক্কা নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এদিকে নোটিশ পাওয়ার দুদিন পর শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। লিখিত জবাবে তিনি জানান, আমার অভিভাবকেরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন; কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গাত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্ত্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা বিয়ে করাবেন বলে জানিয়েছেন।

রনি প্রতাপ অভিযোগ করেন, এমন জবাব প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের পছন্দ হয়নি। তিনি স্কুলের সব স্টাফকে ডেকে নিয়ে সবার সামনে সাফ বলে দিয়েছেন নির্দিষ্ট কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে না করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

এদিকে হয়রানির ভয়ে শিক্ষক রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনো কারো কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। কিন্তু বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের দস্তখত জাল করে চেকের মাধ্যমে স্কুলের বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চলমান সরকারি তদন্তে যাতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাক্ষী না দেই সেজন্য আমাকে বিয়ের নামে চাপাচাপি ও হয়রানি করা হচ্ছে।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, রনি প্রতাপ ভালো শিক্ষক। তাকে নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন তোলেনি। অথচ দুটি সরকারি তদন্তে মিথ্যা সাক্ষী দিতে না চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে এমন লজ্জাজনক নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রনি প্রতাপের স্বভাব চরিত্র নিয়ে স্কুল সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে সহশিক্ষা চলমান রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে কোনো অবিবাহিত টিচার থাকলে নানা অসুবিধা হতেই পারে। নানা অনৈতিক কিছু ঘটতেও পারে। এজন্য তাকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর স্কুলের সাবেক সভাপতির (বর্তমান সভাপতি থাকা সত্ত্বেও) স্বাক্ষর করা দুটি চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করাটা নিয়মসিদ্ধ হয়নি বলে জানান তিনি। তবে চলমান সরকারি তদন্তের সঙ্গে রনি প্রতাপের নোটিশের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা জানান, ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। এভাবে নোটিশ করার এখতিয়ার কোনো প্রধান শিক্ষকের নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলমান। এমন নোটিশ হয়তো তারই অংশ।

 

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে না করলে চাকরিচ্যুতির নোটিশ!

আপডেট টাইম ০৮:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ::টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত এক সহকারী শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহ করার নির্দেশনামূলক পাক্কা নোটিশ জারি করেছেন প্রধান শিক্ষক। আর এমন নোটিশকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় চলছে। আর ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে না করলে চাকরিচ্যুত করার কথাও বলা হয়েছে।

লিখিত নোটিশে বলা হয়, আপনি গত ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দুধর্ম) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর অবগত হলাম আপনি অবিবাহিত। পরবর্তী সময়ে আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিবাহ করার জন্য। কিন্তু যোগদানের কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও আপনি বিবাহ করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহের কার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে পাক্কা নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এদিকে নোটিশ পাওয়ার দুদিন পর শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। লিখিত জবাবে তিনি জানান, আমার অভিভাবকেরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন; কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গাত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। তাছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্ত্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করেন না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকরা বিয়ে করাবেন বলে জানিয়েছেন।

রনি প্রতাপ অভিযোগ করেন, এমন জবাব প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের পছন্দ হয়নি। তিনি স্কুলের সব স্টাফকে ডেকে নিয়ে সবার সামনে সাফ বলে দিয়েছেন নির্দিষ্ট কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে না করলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

এদিকে হয়রানির ভয়ে শিক্ষক রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনো কারো কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। কিন্তু বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের দস্তখত জাল করে চেকের মাধ্যমে স্কুলের বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চলমান সরকারি তদন্তে যাতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাক্ষী না দেই সেজন্য আমাকে বিয়ের নামে চাপাচাপি ও হয়রানি করা হচ্ছে।

স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, রনি প্রতাপ ভালো শিক্ষক। তাকে নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন তোলেনি। অথচ দুটি সরকারি তদন্তে মিথ্যা সাক্ষী দিতে না চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে এমন লজ্জাজনক নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রনি প্রতাপের স্বভাব চরিত্র নিয়ে স্কুল সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে সহশিক্ষা চলমান রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে কোনো অবিবাহিত টিচার থাকলে নানা অসুবিধা হতেই পারে। নানা অনৈতিক কিছু ঘটতেও পারে। এজন্য তাকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর স্কুলের সাবেক সভাপতির (বর্তমান সভাপতি থাকা সত্ত্বেও) স্বাক্ষর করা দুটি চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা উত্তোলন করাটা নিয়মসিদ্ধ হয়নি বলে জানান তিনি। তবে চলমান সরকারি তদন্তের সঙ্গে রনি প্রতাপের নোটিশের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজনীন সুলতানা জানান, ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। এভাবে নোটিশ করার এখতিয়ার কোনো প্রধান শিক্ষকের নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলমান। এমন নোটিশ হয়তো তারই অংশ।