জাকির হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: টানা তাপপ্রবাহের কারণে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশু রোগী আসার চাপ বেড়ে গেছে। ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১০৮ জন। একই বিছানায় দুই থেকে তিনজন করে রোগী রাখা হয়েছে। এছাড়া বহু শিশুর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে তাপপ্রবাহ চলছে। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
ঘূর্ণিঝড় ফণী আসার আগে গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ছুঁয়েছিল, যা ছিল এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদরা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে ‘মৃদু’, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে ‘মাঝারি’ এবং ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করেন।
গরমের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে ৮শ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, কক্ষ থেকে শুরু করে বারান্দা কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই। একে তো অসুস্থতা, অন্যদিকে গরমে অস্থির সবাই।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১০৮ জন শিশু রোগী। এরমধ্যে ৬৩ জন ডায়রিয়া, ২৭ জন নিউমোনিয়া ও ১৮ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গাংগর গ্রাম থেকে আসা শিউলী বেগম বলেন, তিনি ৪ মাস বয়সের ছেলে মাহিকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে আছেন। কিছুইতেই ছেলের ডায়রিয়া ঠিক হচ্ছে না। তার মতো অনেকেই হাসপাতালে পড়ে আছেন।
জেলা সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ি গ্রামের লাকি আক্তার বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানা হলে ২ বছরের মেয়ে জামিলাকে নিয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালে আছেন তিনি। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় মেঝেতেই ঠাঁই হয়েছে তাদের।
দেবীগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ রুনা আক্তার তার ২ মাসের ছেলে রিজনকে শিশু ওয়ার্ডের একটি বিছানায় অন্য দুই শিশুর সঙ্গে রেখেছেন। তার চিকিৎসা চলছে।
তিনি বলেন, “গত বৃহস্পতিবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডে বিছানা নেই। তাই বাধ্য হয়ে একটি বিছানায় অপর দুইজন শিশু রোগীর সাথে নিজের ছেলেকে রেখেছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে গরমে।”
সদর হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট সাজ্জাত হায়দার শাহীন বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছে।
“আমরা তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে পরামর্শ হচ্ছে গরমের এই সময়ে শিশুদের ঘন ঘন পানি খাওয়াতে হবে। গরমের ঘাম যেন কোনোভাবেই শিশুর গায়ে না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করছে তাদের মায়ের বুকের দুধ বেশি বেশি দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন আবু মো. খয়রুল কবির বলেন, সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করেছেন। জুন অথবা জুলাইয়ের মধ্যে ভবনটিতে হাসপাতালের সকল কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আর শিশু রোগীদের কষ্ট করতে হবে না।
“এখন আমরা যতটুকু পারছি শিশু থেকে শুরু করে সকল রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছি।”
তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে ৮শ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ৩শ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৭০ জন।।