নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাসহ আরো তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সবুজবাগ থানার রাজারবাগ কালীবাড়ী এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ অমিত সাহাকে গ্রেফতার করে। অমিত সাহা উগ্রবাদী হিন্দুসংগঠন ইসকনের সদস্য বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আবরারের রুমমেট মিজান ও ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ তোহাকেও গতকাল আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। আর তোহা আগে থেকেই এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে গাজীপুরের মাওনা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।
অমিত সাহা ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার উপআইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যায় অমিত সাহাও ছিলেন। শুধু তাই নয় এই বর্বর হত্যাকাণ্ডে তিনিই ছিলেন মূল চক্রান্তকারীর অন্যতম। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানিয়েছেন, আবরারকে নির্দয়ভাবে মারধরে নেতৃত্ব দেন অমিত সাহা। আবরার নির্যাতন কক্ষে অচেতন হয়ে পড়লে অমিত সাহা ‘সে নাটক করছে’ বলে ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করেছিলেন। অমিতই আবরারকে ফলো করে তার ফেসবুক আইডি চেক করা এবং ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে তাকে ‘শিবির’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।
ঘটনার পরপরই অমিত সাহার বিরুদ্ধে আবরার হত্যায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু চকবাজার থানায় দায়েরকৃত এজাহারে যে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয় অমিত সাহা সে তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। গত পাঁচ দিন ধরেই ঘটনার মূলচক্রী হিসেবে অমিতের নাম আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে অমিত সাহা ভারতে পালিয়ে গেছে। অমিত উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন ইসকনের সদস্য বলে জানা গেছে। ইসকন অখণ্ড ভারতের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানান দেশে ইসকন বিভিন্ন ইস্যুতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা যায়।
অমিত সাহাকে নিয়ে ধূম্রজালের মধ্যে আবরারের বাবাও গণমাধ্যমের কাছে তার ছেলে হত্যায় জড়িত অমিতকে গ্রেফতারের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যাকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত থাকুক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে নিশ্চয়তা দেন। এর এক দিন পরই অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো। এ নিয়ে আবরার হত্যায় জড়িত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
এ দিকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মিজানুর এবং আরাফাতেরও এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তদন্তকারী সংস্থা ডিবিও জানতে চাচ্ছে ঘটনার মোটিভটা কী? আসলে কি হত্যার জন্যই আবরারকে ডেকে নেয়া হয়েছিল, না কি অন্য কারণে হত্যা করা হয়েছেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ক্লিয়ার মোটিভ পেয়েছি। তবে এটা স্পষ্ট যে, অনেকগুলো ঘটনার সমষ্টিতে আবরার হত্যা। তদন্ত শেষ হলে মোটিভটা ক্লিয়ার করে বলব।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে তার বাবা ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়। নৃশংস ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে এজাহার দায়েরের আগেই ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে সোপর্দ করে ১০ জনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এজাহারের পর দ্রুততার সাথে আরো পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহার একটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর বাইরে যাদের নাম আসছে তাদের নামও উঠে আসছে। সেই সূত্র ধরে এজাহারে নাম নেই কিন্তু তদন্তে ও গ্রেফতারকৃত অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আরো কয়েকজন জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করি। যাদের নাম এজাহারে ছিল না। প্রথম গ্রেফতার ১০ জনের সাথে পরে গ্রেফতার তিনজনও রিমান্ডে রয়েছে। ডিবির কয়েকটি টিম কাজ করছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহার বহির্ভূত গ্রেফতাররা হচ্ছে অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন আরাফাত। প্রাথমিক তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।