ঢাকা ০৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেকায়দায় পড়ে সমঝোতায় রবি

সারাদিন ডেস্ক:: আদালতের আদেশ বিপক্ষে যাওয়ার পর বকেয়া কর রোববারের মধ্যে পরিশোধের অঙ্গীকার করেছে মোবাইল অপারেটর রবি। রবির অ্যাকাউন্ট জব্দে ‘বাধা নেই’
রবির অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশনা স্থগিত
রবির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে এনবিআরের চিঠি

তাদের এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রবির সব অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে ব্যাংকগুলোকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিউ)-কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, “রবির পক্ষ থেকে আমাদের অঙ্গীকারনামা দেওয়া হয়েছে, তারা ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব রোববার পরিশোধ করবে।”

প্রায় ১৯ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে রবির অ্যাকাউন্ট তিন দিনের জন্য জব্দ রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সব ব্যাংকে চিঠি পাঠায় এনবিআর।

সেখানে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল রবির করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে। সে সময় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির সবশেষ আর্থিক বিবরণী এবং সিম বিক্রির কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়।

সেই কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রবি অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট, কম প্রদর্শিত সিমের ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট এবং বিটিসিএল-কে প্রদত্ত সেবার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ মোট ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে।

এনবিআরের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয়।

এনবিআর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের আদেশ তিন দিনের জন্য স্থগিত করে দেয়। ফলে ব্যাংক আকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনাই বহাল থাকে।

কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, “তারা (রবি) যখন বুঝতে পেরেছে যে আইনি লড়াইয়ে আর পারবে না, তখনই টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। আমাদের কাজ সরকারের রাজস্ব আদায় করা; সে কাজটিই আমরা করছি।”

বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়, “এর আগে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর প্রতিষ্ঠান এ মর্মে অঙ্গিকারনামা দেন যে, অবলিম্বে সরকারি পাওনা পরিশোধ করবে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব পরিচালনযোগ্য (আনফ্রিজ) করার অনুরোধ করা হল।”

মতিউর রহমান বলেন, “রবির সিইও আমাকে বিদেশ থেকে এসএমএস করে বলেছেন, যে রাজস্ব পাওনা রয়েছে তা দ্রুতই সমধান করা হবে। এছাড়া সিএফও আমাকে চিঠি পাঠিয়েছেন, আজকে ব্যাংক হিসাব খুলে দিলে তারা রোববার টাকা দিয়ে দেবেন।”

এর বাইরেও বাকি সব টাকাই রবি পরিশোধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি রবি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারি পাওনা পরিশোধ করবে। পরবর্তী পাওনা যদি তারা সঠিকভাবে দিয়ে দেয়, তাহলে আইন অনুযায়ী যে সাপোর্ট পাওয়ার কথা তা তারা পাবে। আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আমরা আবার শক্ত অবস্থান নেব।”

রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর আগে দাবি করেছিল, কর ফাঁকির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাদের সঙ্গে ‘দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে’ এনবিআর অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের আদেশ এনবিআরের পক্ষে গেলে রবির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) সই করা অঙ্গিকারনামায় রোববার বকেয়া কর পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এর আগে প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রবিকে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছিল এনবিআর। সে সময়ও রবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ভিত্তিহীন’ অডিটের মাধ্যমে এনবিআর ‘অন্যায্য’ দাবি করছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

বেকায়দায় পড়ে সমঝোতায় রবি

আপডেট টাইম ০৭:৫৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মার্চ ২০১৮

সারাদিন ডেস্ক:: আদালতের আদেশ বিপক্ষে যাওয়ার পর বকেয়া কর রোববারের মধ্যে পরিশোধের অঙ্গীকার করেছে মোবাইল অপারেটর রবি। রবির অ্যাকাউন্ট জব্দে ‘বাধা নেই’
রবির অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশনা স্থগিত
রবির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে এনবিআরের চিঠি

তাদের এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রবির সব অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে ব্যাংকগুলোকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিউ)-কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, “রবির পক্ষ থেকে আমাদের অঙ্গীকারনামা দেওয়া হয়েছে, তারা ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব রোববার পরিশোধ করবে।”

প্রায় ১৯ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে রবির অ্যাকাউন্ট তিন দিনের জন্য জব্দ রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সব ব্যাংকে চিঠি পাঠায় এনবিআর।

সেখানে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল রবির করপোরেট অফিস পরিদর্শন করে। সে সময় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির সবশেষ আর্থিক বিবরণী এবং সিম বিক্রির কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়।

সেই কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রবি অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট, কম প্রদর্শিত সিমের ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট এবং বিটিসিএল-কে প্রদত্ত সেবার ওপর প্রযোজ্য অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ মোট ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছে।

এনবিআরের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২৭ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয়।

এনবিআর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের আদেশ তিন দিনের জন্য স্থগিত করে দেয়। ফলে ব্যাংক আকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনাই বহাল থাকে।

কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, “তারা (রবি) যখন বুঝতে পেরেছে যে আইনি লড়াইয়ে আর পারবে না, তখনই টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। আমাদের কাজ সরকারের রাজস্ব আদায় করা; সে কাজটিই আমরা করছি।”

বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়, “এর আগে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর প্রতিষ্ঠান এ মর্মে অঙ্গিকারনামা দেন যে, অবলিম্বে সরকারি পাওনা পরিশোধ করবে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব পরিচালনযোগ্য (আনফ্রিজ) করার অনুরোধ করা হল।”

মতিউর রহমান বলেন, “রবির সিইও আমাকে বিদেশ থেকে এসএমএস করে বলেছেন, যে রাজস্ব পাওনা রয়েছে তা দ্রুতই সমধান করা হবে। এছাড়া সিএফও আমাকে চিঠি পাঠিয়েছেন, আজকে ব্যাংক হিসাব খুলে দিলে তারা রোববার টাকা দিয়ে দেবেন।”

এর বাইরেও বাকি সব টাকাই রবি পরিশোধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি রবি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারি পাওনা পরিশোধ করবে। পরবর্তী পাওনা যদি তারা সঠিকভাবে দিয়ে দেয়, তাহলে আইন অনুযায়ী যে সাপোর্ট পাওয়ার কথা তা তারা পাবে। আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আমরা আবার শক্ত অবস্থান নেব।”

রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর আগে দাবি করেছিল, কর ফাঁকির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাদের সঙ্গে ‘দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে’ এনবিআর অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের আদেশ এনবিআরের পক্ষে গেলে রবির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) সই করা অঙ্গিকারনামায় রোববার বকেয়া কর পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এর আগে প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রবিকে আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছিল এনবিআর। সে সময়ও রবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘ভিত্তিহীন’ অডিটের মাধ্যমে এনবিআর ‘অন্যায্য’ দাবি করছে।