গুপ্তধনের খোঁজে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়িতে আজ রোববার কোনো খননকাজ চালানো হয়নি। সেখানে কোনো গুপ্তধন আছে কি না, এ জন্য পেট্রোবাংলা বা ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ধাতু স্ক্যানার দিয়ে সেখানে গুপ্তধন খোঁজার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলেন। তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, এটি নিয়ে ভাবছেন। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে জানান।
পরবর্তী করণীয় কী, জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ওই বাড়ির দুটি কক্ষে সাড়ে চার ফুট গভীরে গর্ত করা হয়েছিল। আজ সেখানে যাওয়ার পর দেখা যায়, গর্ত করার পর বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। আরও গর্ত করলে ধসে পড়তে পারে। তাই বাড়িটি আর গর্ত করা হয়নি। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে কোনো গুপ্তধন বা ধাতব আছে কি না, তা যাচাই করতে বাপেক্স বা ভূতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাহায্য নেওয়া হবে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে শিগগিরই যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।
গুপ্তধন খোঁজার বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) কী করতে পারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির একজন বিজ্ঞানী প্রথম আলোকে বলেন, বাপেক্স তার অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাটির নিচে তেল বা গ্যাস আছে কি না, সেটা বের করতে পারে। কিন্তু ধাতব দ্রব্য আছে কি না, তা নির্ণয় করতে পারে না। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের কাছে থাকতে পারে। তারা এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাদন ফকির প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিরপুরের এই বাড়িতে গুপ্তধন আছে জানিয়ে ১০ জুলাই আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আমরা তাঁর খোঁজ করছিলাম। আজ তার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁকে ডাকা হয়েছে।’
গতকাল প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় খননকাজ চলার পরও রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়ি থেকে কোনো গুপ্তধন পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বাড়ি খননের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ারুজ্জামান। এরপরই বিকেল চারটা থেকে খননকাজ বন্ধ করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে মিরপুর ১০-এর সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধনের সন্ধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ারুজ্জামানসহ মিরপুর থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে মাটি খননকাজ শুরু করেন ২০ জন শ্রমিক। টিনশেডের ওই বাড়ির সাতটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষের প্রায় চার ফুট গভীর পর্যন্ত শাবল, কোদাল দিয়ে খনন করেন তাঁরা। কিন্তু ছয় ঘণ্টার খননকাজ চলার পর সেখান থেকে গুপ্তধন বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায়নি।
খননকাজ বন্ধ করার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির অবকাঠামো বেশ দুর্বল। মজবুত কাঠামোর ওপর এই বাড়ির ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়নি। এখানে খননকাজ করা হলে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ খননকাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাদন ফকির বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়ির মাটি খননকাজ চালানো হয়। কিছু না পাওয়ায় শনিবার বিকেল চারটার পর সেটি বন্ধ করা হয়।
গুপ্তধন পাওয়া গেলেও এর প্রতি কোনো দাবি নেই বলে জানান বাড়ির মালিক মনিরুল আলম। ঘটনাস্থলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১০ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। বাড়ি দেখাশোনার জন্য দুজন তত্ত্বাবধায়ক রাখা হয়। এ ছাড়া বাড়িটির কয়েকটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হবে জানিয়ে ভাড়াটেদের চলে যেতে বলা হয়। এরপর ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুজন লোক বাড়িটিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়কদের ঢোকার জন্য আর্থিক প্রলোভনও দেখান। পরে তাঁরা এই বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে জানান। তাঁদের মধ্যে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। মনিরুল আলম বলেন, ‘গুপ্তধন পাওয়া গেলে সরকারি কোষাগারে জমা হোক—এটাই আমি চাই। এর প্রতি আমার কোনো দাবি নেই।’