রানীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি::জাতীয় অনলাইন দৈনিক সংবাদ সারাদিন এ পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম দুর্নিতীর সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার এক সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে ফেলাসহ হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র যুবলীগ নেতা আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে মেয়র আলমগীর সরকার তার নিজের ব্যবহৃত মুঠোফোনের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার রানীশংকৈল উপজেলা প্রতিনিধি খুরশিদ আলম শাওনকে এ ধরনের হুমকি দেয়।
অভিযুক্ত মেয়র আলমগীর সরকার রাণীশংকৈল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।
এ ঘটনায় রাত ৮টার দিকে সাংবাদিক খুরশিদ আলম শাওন রাণীশংকৈল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংবাদ সারাদিন অনলাইন নিউজ পোর্টালে “ ইঞ্জিনিয়ারের সাফাই রানীশংকৈলে জাইকার কাজে অনিয়মের অভিযোগ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে বলা হয়, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভার অর্ন্তগত জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি) অর্থায়নে নতুন রাস্তা নির্মানের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি কাজের হাত বদল, ল্যাব পরিক্ষা এড়িয়ে নিম্নমানের ইট দিয়ে সোলিং হচ্ছে প্রায় ৩ কোটি টাকার এই কাজে। অথচ, পৌরসভার মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ার সাফাই গাইছে এই ত্র“টি পূর্ণ কাজের ঠিকাদারের হয়ে।
জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার বরাদ্দে প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ গত সেপ্টেম্বর মাসে পায় সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার মির্জ্জা কনস্ট্রাকশন। কিন্তু তিনি আবার কাজটি করার দায়িত্ব দেন ঐ জেলার ঠিকাদার নাবিল কনস্টাকশনের প্রোপ্রাইটর সুইটকে। অভিযোগ উঠেছে, রাস্তা খুড়ে ঠিকমত রোলার না করে হাতে ধুরমুজ করে এতে ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যা জাইকার নিয়মবহির্ভূত। নিয়মনুযায়ী ইটের গুণগুত মান নির্ণয়ের জন্য ল্যাবটেস্ট করার বিধান থাকলেও তা করা হয় নি। ফলে ঠিকাদার নিম্ন মানের ইট দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তার খোয়া। ফলে কোন স্থায়িত্ব নেই খোয়াগুলোর। এছাড়াও কাজ শুরুর আগে সমস্ত বিবরণী দিয়ে সাইনর্বোড টাঙানোর কথা থাকলেও কোথাও তার অস্তিত্ব নেই। এছাড়াও ঠিকাদার নিজেও স্বীকার করে বলেছেন একটি ভাটার ইট খারাপ এসেছে।
এ সংবাদ প্রচারের জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র আলমগীর সরকার মুঠোফোনের মাধ্যমে আমাদের রানীশংকৈল প্রতিনিধি খুরশিদ আলম শাওনকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। শুধু তাই নয় মেয়র ওই সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দিবে এবং হত্যার হুমকি দেয় বলে সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার ওসি মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিক খুরশিদ আলম শাওন তিনি বলেন, রাস্তার কাজে অনিয়ম হচ্ছে; বিষয়টি অনুসন্ধান শেষে আমি একটি দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করেছি; তাই তিনি আমার হাত-পা ভেঙে ফেলাসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
রানীশংকৈল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব বলেন, এর আগেও মেয়র আলমগীর হোসেন স্থানীয় এক সাংবাদিককে মারপিট করেছিল। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল; পরবর্তীতে সংবাদকর্মীকে লাঞ্চিত করবে না মর্মে মেয়র আলমগীর আদালতে মুচলেকা দিয়ে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র আলমগীর সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিক শাওন ‘জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি) রাস্তার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ’ তুলে সংবাদ প্রকাশ করেছেন; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এজন্য আমি শাওনকে ফোন দিয়ে গালিগালাজ করেছি; কিন্তু হত্যার হুমকি দেইনি।
সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান মিঠু, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি মনসুর আলী, ঠাকুরগাঁও টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজ আমিন সরকার, ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল আহমেদ, রাণীশংকৈল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোবারক আলীসহ জেলার সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা অভিযুক্ত মেয়র আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলন করবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
সংবাদ সারাদিন কতৃপক্ষের নিন্দা ও প্রতিবাদঃ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সংবাদ সারাদিন এর রানীশংকৈল প্রতিনিধিকে হত্যার হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় পত্রিকার সম্পাদক এড.আজম রেহমান, নির্বাহী সম্পাদক সাইফুর রহমান বাদশা এক যুক্ত বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনসহ দায়ী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সংবাদ পত্রের অবাধ স্বাধীনতার এ সময়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সংবাদ কর্মীদের কন্ঠ রোধের চেষ্টা স্বাধীনতাহরণের অপচেষ্টা মাত্র। এরুপ অপচেষ্টাকারীরা অতীতে কখনোই রেহাই পায়নি এবং আগামীতেও রেহাই পাবেনা, তাই বিষয়টির সুষ্টু ও শান্তিপুর্ন সমাধানে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগি হবেন বলে আশা করি। কারন সংবাদ মাধ্যম কারো প্রতিপক্ষ নয়, বরং সকলের পক্ষ।