গাইবান্ধা প্রতিবেদক::গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গোপন দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি ১১০টি (খাস) পুকুর ইজারা দেওয়ার অভিযোগে রিট আবেদনের ভিত্তিতে ১৬ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ওই দরপত্র প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও, ভূমি কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং মৎসজীবী সমিতির আট সভাপতিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই রুল জারি করা হয়। এ ছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বিবাদীদের আদেশ দেওয়া হয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৬টি মৎসজীবী সমিতির পক্ষে সাপমারা মৎসজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ ম-লের রিট আবেদনের পর গত ৩০ এপ্রিল শুনানি হয়।
শুনানিতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিল দ্বৈত বেঞ্চ বিবাদীদের বিরুদ্ধে রুল জারির আদেশ দেন। গত ৮ মে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত আদেশের কপি গাইবান্ধা পৌঁছেছে।
নীতিমালা উপেক্ষা, অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্যে সরকারি ১১০টি পুকুর ইজারার অভিযোগে গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট আবেদন (নং ৪৪৯৯/১৯) দাখিল করা হয়। গোপন প্রক্রিয়ায় তড়িঘড়ি পুনঃদরপত্রে পুকুরগুলো প্রভাবশালী মহল ও অমৎসজীবী সমিতিকে দেওয়া ইজারা ‘অবৈধ’ দাবি করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং আটটি মৎসজীবী সমিতির সভাপতিকে মামলায় বিবাদী করা হয়। অনিয়ম ও গোপনে ১১০টি পুকুর ইজারার অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃ বর্মণ বলেন, নীতিমালা মেনেই দরপত্র আহ্বান করা হয়। বন্দোবস্ত কমিটির সিন্ধান্ত ও সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই পুকুর লিজ দেওয়া হয়েছে। গোপন ও অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন। মৎসজীবীদের অভিযোগের (রিট আবেদন) পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের দেওয়া নির্দেশ মেনেই রিটের জবাব দাখিল করা হবে।
রিট আবেদনকারী আবদুল লতিফ ম-ল বলেন, আমাদের না জানিয়ে গোপনে দরপত্র আহ্বান করে ১২১টি পুকুরের মধ্যে ১১০টি পুকুর লিজ সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। গেজেটে একটি সমিতি দুটির বেশি পুকুর পাবে না উল্লেখ থাকলেও তা লঙ্ঘন করে ১০-১১টি করে পুকুর লিজ দেওয়া হয় একটি সমিতিকে। অথচ এ উপজেলায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সমিতি আছে ৪০ থেকে ৪১টি। এ ছাড়া যেসব সমিতিকে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হয় সেই সমিতিগুলোর সভাপতি/সম্পাদক মৎসজীবী নয়। এসব সমিতির সভাপতি কেউ স্কুলের শিক্ষক, কেউ সাবেক জনপ্রতিনিধি আবার কেউ সম্পদশালী। দৃশ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করে এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেও কোনও প্রতিকার পাইনি। আজও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো হুমকি ও পুকুর দখলের আতঙ্কে আছি আমরা। গোপন দরপত্র বাতিল ও নতুন করে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করি।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুকিতুর রহমান রাফি বলেন, প্রকাশ্যে দরপত্র আহ্বান না করে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হয়। পুকুর লিজে নীতিমালা মানা হয়নি। ইউএনও ও বন্দোবস্ত কমিটি মনগড়া সিদ্ধান্তে নয়টি সমিতিকে ১১০টি পুকুর নামমাত্র রাজস্বে লিজ দেয়। এতে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনি কমিশন বাণিজ্যে পকেট ভারী হয়েছে প্রশাসন ও একটি প্রভাবশালী মহলের। দৃশ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কারণে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রকৃত মৎসজীবীদের অবস্থা বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ১২১টি পুকুর ইজারা দিতে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রশাসন। ৬ মার্চ সেই দরপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ায় ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ পরিস্থিতিতে দরপত্র স্থগিত করে পরবর্তী সময়ে ২৪ মার্চ পুনঃদরপত্র আহ্বান করে। সেই দরপত্রে ৩ এপ্রিল ১১০টি পুকুর লিজ দেওয়া হয়।