ঢাকা ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

যে কারণে জোরালো নয় সংসদীয় কমিটির ভূমিকা

কাজী সোহাগ :: মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রকল্পে নয়ছয়ের ঘটনা রোধে জোরালো ভুমিকা নেই সংসদীয় কমিটিগুলোর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জোরদার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, নিজ নিজ এলাকায় পাটপণ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার মতো দায়সারা সুপারিশেই সীমাবদ্ধ কমিটিগুলোর কর্মকা-। মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির কোন ইস্যু কমিটির বৈঠকের এজেন্ডাতেও স্থান পায় না খুব একটা। এসব কমিটির সভাপতি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশিরভাগ আগের বারের সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তাই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংসদ ও সংসদীয় কমিটি নিয়ে পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ পরিস্থিতিতে সংসদীয় কমিটিগুলোকে ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে মনে করছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হতে অন্যতম বাধা আগের মন্ত্রীদের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া। এতে স্বার্থের দ্বন্দ্বের সুযোগ তৈরি হয়।
এটাকে পরিহার করা উচিত। নাহলে সংসদীয় কমিটি এখন যেমন কাগুজে বাঘ হিসেবে আছে ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে গত সরকারের মন্ত্রীদের। এগুলো হচ্ছে-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, শিল্প মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আফছারুল আমিন, কৃষি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ চুমকি। টিআইবি জানিয়েছে, এককেন্দ্রিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কারণে কমিটির কার্যক্রমও রাষ্ট্র-সংসদের সব কার্যক্রমের মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

এছাড়া কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে বলেও মনে করে টিআইবি। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান বা সাবেক কোনো মন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি বা সদস্য পদ না দেয়ার বিধান, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংবেদনশীল বিষয় ছাড়া কমিটির সভা সংসদ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার এবং কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বা অন্য স্বার্থের বিষয়টি পুরোপুরি যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কমিটিকে ব্যবহার করছেন। কমিটির সিদ্ধান্তের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হয় না। কমিটিতে দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত তুলনামূলকভাবে কম।
তবে এ নিয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মানবজমিনকে তিনি বলেন,এটা আসলে নির্ভর করে কমিটির সদস্যদের উপর। সভাপতি একা কোন বিষয় চেপে যেতে পারেন না। কমিটির সদস্যরা তো মুখ খুলতে পারেন। তারা প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন,আমার মন্ত্রণালয়ে বয়স্কভাতা ও নীতিমালা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করতে সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার কমিটিতে এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অন্য কমিটিতে কেন হয় না তা বলতে পারবো না। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকা- সমীক্ষার উদ্দেশ্যে সংসদ-সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় কমিটি। পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই এ ধরনের সংসদীয় কমিটি রয়েছে। এ কমিটিগুলো  জাতীয় সংসদ সদস্যদের কার্যত কর্মব্যস্ত রাখে।
নিজেদের তারা সংসদের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন এবং নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকেন। কমিটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজেদের সম্পাদিত কর্মকা-ের ব্যাখ্যা দেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকা-ের উপর নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তব চিত্র সম্পর্কে নিজেদের ওয়াকিবহাল রাখার সুযোগ পান। হিসাব ও সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে আর্থিক কমিটিগুলো সরকারের আর্থিক ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করে। একইসঙ্গে অনুমোদিত রীতিনীতি অনুযায়ী সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে কিনা তাও যাচাই করে। সংসদ নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কাগজে-কলমে সংসদীয় কমিটির এসব কাজ করার কথা থাকলেও আসলে এসবের কিছুই হয় না। তারা জানান, সংসদীয় কমিটিগুলোতে মন্ত্রী সদস্য হিসেবে থাকেন। এতে শুরু হয় মন্ত্রী ও সভাপতির মধ্যে মনকষাকষি।
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিরা চান কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে মন্ত্রীরা সংসদীয় কমিটিগুলোকে সুপারিশকারী সত্তার অতিরিক্ত কিছু হিসেবে দেখতে চান না। মন্ত্রী ও কমিটির সভাপতির মনকষাকষি অনেক সময় প্রকাশ্য রূপ নেয়। এতে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যকারিতা আগেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া, এসব কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বিরত থাকে। ফলে দিন দিন সুপারিশের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব সুপারিশ হারিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটির বৈঠকের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। প্রসঙ্গত জাতীয় সংসদ বরাবরই কমিটি কাঠামো বিন্যাস করে আসছে। প্রথম সংসদের অধীনে ১৪টি কমিটি গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় সংসদে কমিটির সংখ্যা ছিল ৫১, স্বল্প মেয়াদী তৃতীয় সংসদে ৬ এবং চতুর্থ সংসদে ৪৮ টি। সময়ের পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় কার্যপরিধি বৃদ্ধির কারণে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সংখ্যা পঞ্চম সংসদের অধীনে ৫৩ এবং সপ্তম সংসদে ৪৮-এ দাঁড়ায়। একইসঙ্গে উপ-কমিটির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তম সংসদ গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর প্রধান ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগণ।
সপ্তম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনেই কার্যপ্রণালী বিধিতে একটি সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সবগুলোতেই মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ-সদস্যদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে কার্যকরভাবে জবাবদিহিতা আদায়ে কমিটিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। অষ্টম সংসদে স্থায়ী কমিটির সংখ্যা ছিল ৪৮ এবং ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত এ সংসদে ১৩১ টি উপ-কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ও উপ-কমিটি অক্টোবর ২০০১ থেকে জুলাই ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে যথাক্রমে ১১৫৭ এবং ৪২১ টি সভায় মিলিত হয়। এই সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত কমিটি ১২ টি প্রতিবেদন পেশ করে। ২০০৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার পর সংসদে দলীয় প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে সংসদের সমন্বয়ে ৪৮ টি কমিটি গঠন করা হয়।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ

যে কারণে জোরালো নয় সংসদীয় কমিটির ভূমিকা

আপডেট টাইম ০৫:২২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০১৯
কাজী সোহাগ :: মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রকল্পে নয়ছয়ের ঘটনা রোধে জোরালো ভুমিকা নেই সংসদীয় কমিটিগুলোর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জোরদার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, নিজ নিজ এলাকায় পাটপণ্য মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার মতো দায়সারা সুপারিশেই সীমাবদ্ধ কমিটিগুলোর কর্মকা-। মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির কোন ইস্যু কমিটির বৈঠকের এজেন্ডাতেও স্থান পায় না খুব একটা। এসব কমিটির সভাপতি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশিরভাগ আগের বারের সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তাই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংসদ ও সংসদীয় কমিটি নিয়ে পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ পরিস্থিতিতে সংসদীয় কমিটিগুলোকে ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে মনে করছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হতে অন্যতম বাধা আগের মন্ত্রীদের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া। এতে স্বার্থের দ্বন্দ্বের সুযোগ তৈরি হয়।
এটাকে পরিহার করা উচিত। নাহলে সংসদীয় কমিটি এখন যেমন কাগুজে বাঘ হিসেবে আছে ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকে ৫০টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে গত সরকারের মন্ত্রীদের। এগুলো হচ্ছে-প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, শিল্প মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আফছারুল আমিন, কৃষি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ চুমকি। টিআইবি জানিয়েছে, এককেন্দ্রিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কারণে কমিটির কার্যক্রমও রাষ্ট্র-সংসদের সব কার্যক্রমের মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

এছাড়া কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে বলেও মনে করে টিআইবি। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান বা সাবেক কোনো মন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি বা সদস্য পদ না দেয়ার বিধান, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংবেদনশীল বিষয় ছাড়া কমিটির সভা সংসদ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার এবং কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বা অন্য স্বার্থের বিষয়টি পুরোপুরি যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কমিটিকে ব্যবহার করছেন। কমিটির সিদ্ধান্তের একটি বড় অংশ বাস্তবায়িত হয় না। কমিটিতে দুর্নীতি সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত তুলনামূলকভাবে কম।
তবে এ নিয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মানবজমিনকে তিনি বলেন,এটা আসলে নির্ভর করে কমিটির সদস্যদের উপর। সভাপতি একা কোন বিষয় চেপে যেতে পারেন না। কমিটির সদস্যরা তো মুখ খুলতে পারেন। তারা প্রশ্ন করতে পারেন। উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন,আমার মন্ত্রণালয়ে বয়স্কভাতা ও নীতিমালা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করতে সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমার কমিটিতে এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অন্য কমিটিতে কেন হয় না তা বলতে পারবো না। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকা- সমীক্ষার উদ্দেশ্যে সংসদ-সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় কমিটি। পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই এ ধরনের সংসদীয় কমিটি রয়েছে। এ কমিটিগুলো  জাতীয় সংসদ সদস্যদের কার্যত কর্মব্যস্ত রাখে।
নিজেদের তারা সংসদের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন এবং নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকেন। কমিটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজেদের সম্পাদিত কর্মকা-ের ব্যাখ্যা দেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকা-ের উপর নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তব চিত্র সম্পর্কে নিজেদের ওয়াকিবহাল রাখার সুযোগ পান। হিসাব ও সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে আর্থিক কমিটিগুলো সরকারের আর্থিক ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করে। একইসঙ্গে অনুমোদিত রীতিনীতি অনুযায়ী সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে কিনা তাও যাচাই করে। সংসদ নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কাগজে-কলমে সংসদীয় কমিটির এসব কাজ করার কথা থাকলেও আসলে এসবের কিছুই হয় না। তারা জানান, সংসদীয় কমিটিগুলোতে মন্ত্রী সদস্য হিসেবে থাকেন। এতে শুরু হয় মন্ত্রী ও সভাপতির মধ্যে মনকষাকষি।
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিরা চান কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে মন্ত্রীরা সংসদীয় কমিটিগুলোকে সুপারিশকারী সত্তার অতিরিক্ত কিছু হিসেবে দেখতে চান না। মন্ত্রী ও কমিটির সভাপতির মনকষাকষি অনেক সময় প্রকাশ্য রূপ নেয়। এতে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যকারিতা আগেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া, এসব কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বিরত থাকে। ফলে দিন দিন সুপারিশের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব সুপারিশ হারিয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, কমিটির বৈঠকের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে না। প্রসঙ্গত জাতীয় সংসদ বরাবরই কমিটি কাঠামো বিন্যাস করে আসছে। প্রথম সংসদের অধীনে ১৪টি কমিটি গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় সংসদে কমিটির সংখ্যা ছিল ৫১, স্বল্প মেয়াদী তৃতীয় সংসদে ৬ এবং চতুর্থ সংসদে ৪৮ টি। সময়ের পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় কার্যপরিধি বৃদ্ধির কারণে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সংখ্যা পঞ্চম সংসদের অধীনে ৫৩ এবং সপ্তম সংসদে ৪৮-এ দাঁড়ায়। একইসঙ্গে উপ-কমিটির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তম সংসদ গঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর প্রধান ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগণ।
সপ্তম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনেই কার্যপ্রণালী বিধিতে একটি সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সবগুলোতেই মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ-সদস্যদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে কার্যকরভাবে জবাবদিহিতা আদায়ে কমিটিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। অষ্টম সংসদে স্থায়ী কমিটির সংখ্যা ছিল ৪৮ এবং ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত এ সংসদে ১৩১ টি উপ-কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ও উপ-কমিটি অক্টোবর ২০০১ থেকে জুলাই ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে যথাক্রমে ১১৫৭ এবং ৪২১ টি সভায় মিলিত হয়। এই সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত কমিটি ১২ টি প্রতিবেদন পেশ করে। ২০০৯ সালের ২৫শে জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার পর সংসদে দলীয় প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে সংসদের সমন্বয়ে ৪৮ টি কমিটি গঠন করা হয়।