ঢাকা ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরগুনায় রিফাত হত্যা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়ন বন্ড নিহত

বরগুনা প্রতিনিধি, ২ জুলাই ২০১৯:: বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আজ ভোর  সোয়া ৪টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হত্যাকা-ের পর থেকেই নয়ন বন্ড পলাতক ছিলেন।

নিহত সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভূক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এছাড়া আটক নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশী রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেপ্তার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দু’টি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাইচেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬শে জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জনসম্মুখে স্ত্রীর সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারী সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে লড়াই করেও তাদের থামাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ২৭ শে জুন হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাত শরীফের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

বরগুনায় রিফাত হত্যা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়ন বন্ড নিহত

আপডেট টাইম ০১:৪১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০১৯
বরগুনা প্রতিনিধি, ২ জুলাই ২০১৯:: বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আজ ভোর  সোয়া ৪টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হত্যাকা-ের পর থেকেই নয়ন বন্ড পলাতক ছিলেন।

নিহত সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভূক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এছাড়া আটক নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশী রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেপ্তার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দু’টি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাইচেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬শে জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জনসম্মুখে স্ত্রীর সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারী সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে লড়াই করেও তাদের থামাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ২৭ শে জুন হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাত শরীফের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ।