ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী:: এক যুগেরও বেশি সময় আগে একটি উপজেলায় চাকরি করেছিলাম। সেই উপজেলায় ম্যালেরিয়া মশা প্রতিরোধক নেট (মশারি) বিতরণ শেষে একজন এনজিও কর্মকর্তা এসে বললেন, স্যার একশত সাতাশিটি মশারি বিতরণ করা হয়েছে, এই তালিকায় স্বাক্ষর করেন। আমি তাকে পরদিন বিকালে আসতে বললাম। উপজেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে আমার স্বাক্ষরসহ ওই বিতরণ তালিকাটি তিনি তার প্রধান অফিসে প্রেরণ করবেন। পরদিন সকাল বেলা নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে তালিকাভুক্ত পরিবার যাচাই করতে গিয়ে তালিকাভুক্ত প্রথম ষোলটি পরিবারের মধ্যে মাত্র দুইটি পরিবার মশা প্রতিরোধক নেট প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলো। আর বাকিরা পায়নি বলে জানালো। আমি আর কষ্ট করে বাকিগুলো দেখিনি এবং সেই তালিকাটিতেও স্বাক্ষর করিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং স্বাস্থ্য কাঠামোকে গণমুখী করে গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনায় স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে একজন চিকিৎসককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেন। উপজেলা ও কোনো কোনো ইউনিয়নে স্বাস্থ্য স্থাপনা তৈরি করে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলো। এ এক যাদুকরী ঐতিহাসিক ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণের পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল এবং পরে ২০০৬ থেকে ২০২০ সালে এ দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশাল প্রাপ্তি ঘটেছে। আমাদের প্রাইমারি হেলথ কেয়ার আর ইপিআই বিশ্বের নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে। পোলিও নির্মূল হয়েছে। ম্যালেরিয়া প্রায় নির্মূলের পথে। আমরা টিবি এবং এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। ধনুষ্টংকার-হাম এগুলো কদাচিৎ দেখা যায়। কমিউনিটি ক্লিনিক আজ পুরো বিশ্বের রোল মডেল। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু হ্রাসে এমডিজির সফল বাস্তবায়নের পর এসডিজির সঠিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কর্মসূচি চলমান। কিডনি, হৃদরোগ, নিউরোসার্জারি চিকিৎসার উন্নতি কিংবা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা আমাদের অংহকারের বিষয়। অনেকগুলো সরকারি মেডিকেল কলেজসহ চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী বিস্ময়। সর্বোপরি ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য খাতে মানসম্মত বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা দেশের চাহিদার ষাট ভাগ পূরণ করছে। এগুলোসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসংখ্য মৌলিক বিষয় সংযোজিত হয়েছে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশ আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
কষ্ট নিয়েই বলতে হয় মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক দুর্বলতা ও সমম্বয়হীনতা দেখিয়েছে, যা আমাদের নতুন করে ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতরে যারা প্রধান প্রধান পদে দায়িত্বে ছিলেন তাদের অদূরদর্শিতা, অক্ষমতা, দুর্নীতি আর দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি অবজ্ঞা চূড়ান্তভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। কোটারি স্বার্থ সংরক্ষণ, নিজেদের ব্যক্তিগত ‘ইগো’ বাস্তবায়ন আর দুর্নীতিকে আশকারা দিয়ে তারা সরকারকেই শুধু বিব্রতই করেননি, দেশের মানুষকেও প্রতারিত করেছেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও অসম্ভব টেকনিক্যাল বটে। বিগত কয়েক বছর শুধু কেনাকাটাই যেন ছিল মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। জেলায় জেলায় সিভিল সার্জন অফিস কিংবা ছোট-বড় হাসপাতালগুলোতে কী কী কেনাকাটা হবে, কোথায় স্থাপনা নির্মাণ হবে, এগুলোতেই মন্ত্রণালয় ব্যস্ত ছিল। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেনাকাটার চাহিদা হাসপাতাল কিংবা সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ঠিক করে দিতেন না, করে দিতেন মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের ঠিকাদাররা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই কেনাকাটা নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের না দিতে পারায় অনেক ব্যবস্থাপক ওএসডি কিংবা বদলি হয়েছেন। অনেকে ওপর মহলের টেলিফোনে কাজ দেয়ার পর আজ দুর্নীতির মামলায় জেলে কিংবা বিচারের অপেক্ষায় আছেন। যার হুকুমে কাজটি হলো তিনি বা তারা ধোয়া তুলসীপাতা। লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও যে মন্ত্রণালয় সেটি আমলে নেয় না কিংবা অভিযোগ খতিয়ে দেখে না, সেই মন্ত্রণালয় দিয়ে সরকার ও জনগণের কতটুকু সফলতা হবে তা সময়ই বলে দিলো।
টাঙ্গাইলের দুটি উপজেলায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে যিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও প্রকল্পগুলো সেখানে আলোর মুখ দেখেনি, সেই কীর্তিমান ব্যক্তি ঘুরে-ফিরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বছরের পর বছর বড় পদে বহালতবিয়তে আছেন। তার হাত ধরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটুকু অগ্রসর হবে আজকের সময়ই তা বলে দিচ্ছে। অধিদফতরের অবস্থা আরও নাজুক। দীর্ঘদিন এমআইএসে কাজ করা বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক আজ অধিদফতরের প্রধান ব্যক্তি। ইউনিয়ন সাবসেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সিভিল সার্জন কার্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজের কোনো ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন কিংবা ওই সকল স্থাপনার কোনো স্তরে কাজ না করে একজন শিক্ষক বাংলাদেশের সমুদয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোথায় কী প্রয়োজন, তা কীভাবে নির্ণয় করবেন? অফিসে বসে কম্পিউটার টিপে দিয়ে সেই এনজিও কর্মকর্তার মত মশারি বিতরণ সম্ভব, বড় বড় উন্নয়নের স্ক্রিপ্ট লেখা সম্ভব, কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি কীভাবে সম্ভব বোঝা মুশকিল। তার অফিসে একজন কর্মচারী হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে গেল, আর অফিস প্রধানের কক্ষের বাহিরে লেখা ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ – বিষয়টি হাস্যকর নয় কি? ৮-১০ বছর এমআইএসের প্রধান কর্তা হয়েও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এ মুহূর্তে কত জন চিকিৎসক কাজ করছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটিও তিনি জাতিকে জানাতে পারেননি। এমআইএসের শত কোটি টাকা কী কী কাজে লাগানো হলো তার খবরও কেউ জানে না। অধিদফতরের নবনিয়োগপ্রাপ্ত আরেকজন প্রধান কর্তা অনৈতিকভাবে তার পদ আঁকড়ে ধরে আছেন বলে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ থাকার পরও সেটির তদন্ত না করে তাকে সেই পদে রহস্যজনকভাবে বহাল রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনিও দিব্যি সাধু সেজে বসে আছেন। অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক পুরো চাকরি জীবনে মাত্র কয়েকমাসের জন্য একটি জেলার ডিসিএস ছিলেন, তাও সেই সময়টুকুতে তিনি কি কাজ করেছেন তা অনেকেই জানেন না। দেশের কোনো হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনার কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই। তিনি বাংলাদেশে কয়েকশ’ হাসপাতালের কী দেখভাল করবেন? গবেষণা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক এপিডেমিওলজির একজন অধ্যাপক। তার কাজ গবেষণা ও অধ্যাপনা। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তিনি কী জানেন আর তিনি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উন্নয়নের হাজার কোটি টাকার কী পরিকল্পনা করবেন?
পুরো অধিদফতরজুড়ে পরিচালক পদে বিভিন্ন প্রি-ক্লিনিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল বিষয়ের অধ্যাপকরা দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অধ্যাপক তার নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান রাখেন এবং তার চাকরিকালে সংগত কারণেই রোগী দেখা, শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়া কোনো জটিল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সাথে তিনি জড়িত থাকেন না। অধ্যাপকরা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করবেন, গবেষণা করবেন, প্রয়োজনে মেডিকেল কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ক্যাডার কম্পোজিশন আর অগার্নোগ্রামের বিন্যাস অনুযায়ী সেখানে মাত্র দু’একটি পরিচালক পদ ছাড়া সকল পদই মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পরিচালক পদে আসার কথা। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কাজ করে যারা পর্যায়ক্রমে মাঠের সকল হাসপাতালে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কাজ করছেন, তাদের মধ্য থেকেই চৌকস ও যোগ্য কর্মকর্তার অধিদফতরের পরিচালক পদে আসার কথা। আর তাতে করেই পুরো মাঠের চিত্র ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে আগেকার সময়ের নিবিড় সম্পর্ক মিলিয়ে একজন পরিচালক হয়ে উঠতে পারেন যথার্থ মানের। বিসিএস নিয়োগ বিধিমালার ক্যাডার শিডিউল তছনছ করে দিয়ে অধিদফতরে মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তাদের আর্শীবাদপুষ্ট ‘মাইম্যান’দের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এমনিভাবে পরিচালকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা বসেন তাদের অধিকাংশ হয় নিষ্ক্রিয় অথবা প্রান্তিক পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েন।
সমসাময়িক করোনাভাইরাসের ছোবল মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও আইইডিসিআর সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে দাবি করে আসছিল। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার আগে কোন কোন হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড ছিল, কোথায় কোথায় আইসিইউ ছিল, কত শয্যার আইসিইউ ছিল, কোন হাসপাতালে ফ্লু-কর্নার স্থাপন করা হবে, কোন হাসপাতালে ট্রায়াজ সিস্টেম হবে, ডায়ালাইসিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ জটিল রোগের রোগীরা কোন হাসপাতালে কীভাবে চিকিৎসা নেবেন, কতজন ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার কোভিড মোকাবিলার ট্রেনিং নিয়েছিলেন, চিকিৎসা সুরক্ষা সরঞ্জাম কোথায় ছিল, এগুলো ব্যবহারের ট্রেনিং কখন দেওয়া হলো, কতটা টেস্টিং ল্যাবরেটরি ছিল- তা আমরা কেউ জানি না। সেই মশারি বিতরণের মতো এগুলো কি শুধু খাতা কিংবা কম্পিউটার শিটে লিখে রেখে প্রস্তুতির খবর দেয়া হয়েছিল?
২০০০ কিট নিয়ে আইইডিসিআর যে হিরোইজম দেখালো তা কিসের ভিত্তিতে? তারা আজ কোথায়? তাদের কাজ তো গবেষণা করা, তারা তো রিসার্চ ল্যাবরেটরি, সার্ভিস ল্যাবরেটরি নয়। নিপসম, সিডিসি কোথায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে রোগ নির্ণয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে আজও অধিদফতরের কোনো কোনো পরামর্শক মিডিয়াকে বলেন, রোগ নির্ণয় এত জরুরি নয়। এরা কারা? তাহলে আজ ৫০টি ল্যাব তৈরি করেও বলা হচ্ছে কেন আরও ল্যাব লাগবে? গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তাড়াহুড়ো করে আজ ২০০৯ সালের মডেলের আরটি-পিসিআর মেশিন কেন কেনা হচ্ছে? কারা এগুলো কেনার পরামার্শ দিচ্ছে? কোনো কোনো হাসপাতাল সেই মেশিন না নিতে চাইলে অনুরোধ করা হয়, যেন সেগুলো আপাতত রেখে দেয়া হয়। কেন তা বলা হচ্ছে? ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও মাস্ক নিয়ে এত কেলেঙ্কারি হলো কেন? কেন তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় পরিচালককে ওএসডি এবং বদলি করা হলো? মাস্ক কেলেঙ্কারি তদন্তের রিপোর্ট কোথায়? পরিচালক বদলি করতে সময় লাগে না, তবে এ তদন্তে ক্ষমতাশালী মন্ত্রণালয়ের এত সময়ক্ষেপণ কেন? এত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থকর্মী, আক্রান্তের দায় ভার কে নেবে? বাংলাদেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের কথা অধিদফতরের বুলেটিনে বলতে লজ্জা কেন?
মনিষীরা বলেন, একটা খারাপ সময়ও অনেক ভালো আগামীর প্রস্তুতির সুযোগ করে দেয়। করোনাকালের সমাপ্তি শেষে জগৎ সংসার আলোকিত হবেই। সেই আলোকিত বাংলাদেশে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আর কোনো দুর্নীতি দেখতে চাই না, দুর্নীতির পক্ষে না থাকার কারণে কোনো কর্মকর্তার শাস্তিমূলক বদলি বা ওএসডি দেখতে চাই না। আমরা কম্পিউটারে ছাপাকৃত রিপোর্টের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজও দেখতে চাই, আমরা সরকারের চিন্তা ও চেতনার সাথে আনুগত্যশীল কর্মকর্তাদের মন্ত্রণালয়ের ও অধিদফতরের প্রধান পদে দেখতে চাই। আমরা অধিদফতরে দক্ষ, সৎ, মাঠ পর্যায়ের কর্মীকে দায়িত্বশীল পরিচালক পদে দেখতে চাই। আমরা অধ্যাপকদের অধ্যাপনার পদ ও অধিদফতরের যে পদে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী তাদের থাকার কথা সেই পদে দেখতে চাই। বিজ্ঞ আদালত কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিরুদ্ধে যারা কাজ করে ধৃষ্টতা দেখান তাদের আমরা কোথাও দেখতে চাই না। মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের সবজান্তা কর্মকর্তাদের নিষ্ফল প্রয়াসের দায়ভার চিকিৎসক সমাজ কিংবা জাতি নিতে চায় না। সরকারের চেতনাবিরোধী ব্যর্থ ব্যক্তিদের দায়ভার জননন্দিত সরকার বহন করবে কেন? স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বক্ষেত্রে ক্যাডার কম্পোজিশনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন চাই।
আমরা স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি চাই, হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রচুর পরিমাণে জনবল নিয়োগ করে জনগণের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্যোগ দেখতে চাই। রাজাকার সন্তান, লুটেরা, নীতিবিবর্জিত আর অক্ষম ব্যক্তিদের হাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখতে চাই না। আমরা কর্মস্থলে নিরাপত্তা চাই, দ্রুত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন চাই, নবীন চিকিৎসকদের ক্যারিয়ার প্লানিং চাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার ক্ষেত্র চাই। আমরা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলার অবসান চাই। প্রশাসনের ব্যর্থতার দায়ভার চিকিৎসকরা বহন করবে কেন? ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা জীবন দিয়েছি, আগামী দিনের সকল প্রয়োজনে আমরা সাহসিকতার সাথে লড়তে চাই। আর ভৎর্সনা নয়, আমরা আমাদের কাজের যোগ্য মর্যাদা চাই।
বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতার মত মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারণী সর্বোচ্চ পদে চিকিৎসকদের পদায়িত হতে দেখতে চাই। কর্মক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থ কিংবা সরকারের চিন্তা ও চেতনাবিরোধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোথাও দেখতে চাই না। যোগ্য দক্ষ স্বাস্থ্য প্রশাসকদের অধিদফতরে দেখতে চাই। সকল দুর্নীতির বিচার চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনকল্যাণমুখী হবেই। তিনিই এদেশের সকল আশা আকাঙ্ক্ষার শেষ বাতিঘর।
লেখক
মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদফতর