ঢাকা ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনগণ বুঝে গেছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ দুর্যোগের দেশ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে এদেশে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ নেমে আসে। সরকারের সহযোগিতায় আমাদের দেশের জনগণ বুঝে গেছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। আমাদের জনগণ এখন অত্যন্ত সচেতন। যেকোনো দুর্যোগের আগে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঝাপিয়ে পড়ে দুর্যোগ কবলিত মানুষদের রক্ষা করার জন্য। দুর্যোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনা এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সিভিল মিলিটামি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় গ্রুপ (আরসিজি) এর চতুর্থ সেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রান্ড বল রুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের ১৫০জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আমেদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও উপেক্ষা করতে পারি না। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও অনেক ক্ষতি হয় দেশের।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের আঘাত ছিল ১৯৭০ সালের সাইক্লোনে। এ দুর্যাগে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এত বড় সাইক্লোনের পর, দুর্যোগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের বিষয়ে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আশা করি, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা অত্যান্ত জরুরি। পার্শ্ববর্তী দেশের এক্সপার্টদের সঙ্গে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পাহাড়ে ভূমিধসে উদ্ধার অভিযান নিহত সেনা সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অবদানের কারণে অনেক জান-মাল রক্ষা পেয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমরা টেকসই নীতি গ্রহণ করছি। দুর্যোগ প্রশমনের ক্ষেত্রে অসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর লোকজন যৌথভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমে বিশেষ করে অনুসন্ধানে, মৃতদেহ উদ্ধার অভিযানে, অন্যান্য কার্যক্রমে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্কাউট, আনসার-ভিডিপির সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক-সামরিক সমন্বয়ে পরিচালিত পর্যন্ত কার্যক্রম মানবিক সহায়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমরা বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ করেছি। এ পরিকল্পনার আওতায় আগামী একশ বছরের জন্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। নেদারল্যান্ড সরকার আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ আছেন। আমরা তাদের সঙ্গে ২১০০ আমাদের যে ডেল্টা প্লান তা বাস্তবায়ন করবো। এটা বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগ মোকাবেলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিগত কয়েক বছরে ২৩৬ কোটি টাকার সরঞ্জামাদি ক্রয় করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

জনগণ বুঝে গেছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম ০২:৩৮:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ দুর্যোগের দেশ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে এদেশে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ নেমে আসে। সরকারের সহযোগিতায় আমাদের দেশের জনগণ বুঝে গেছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। আমাদের জনগণ এখন অত্যন্ত সচেতন। যেকোনো দুর্যোগের আগে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঝাপিয়ে পড়ে দুর্যোগ কবলিত মানুষদের রক্ষা করার জন্য। দুর্যোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনা এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সিভিল মিলিটামি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় গ্রুপ (আরসিজি) এর চতুর্থ সেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রান্ড বল রুমে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের ১৫০জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আমেদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও উপেক্ষা করতে পারি না। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেও অনেক ক্ষতি হয় দেশের।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগের আঘাত ছিল ১৯৭০ সালের সাইক্লোনে। এ দুর্যাগে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এত বড় সাইক্লোনের পর, দুর্যোগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের বিষয়ে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আশা করি, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা অত্যান্ত জরুরি। পার্শ্ববর্তী দেশের এক্সপার্টদের সঙ্গে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

পাহাড়ে ভূমিধসে উদ্ধার অভিযান নিহত সেনা সদস্যদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অবদানের কারণে অনেক জান-মাল রক্ষা পেয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমরা টেকসই নীতি গ্রহণ করছি। দুর্যোগ প্রশমনের ক্ষেত্রে অসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর লোকজন যৌথভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমে বিশেষ করে অনুসন্ধানে, মৃতদেহ উদ্ধার অভিযানে, অন্যান্য কার্যক্রমে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো দুর্যোগে আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্কাউট, আনসার-ভিডিপির সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক-সামরিক সমন্বয়ে পরিচালিত পর্যন্ত কার্যক্রম মানবিক সহায়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমরা বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ গ্রহণ করেছি। এ পরিকল্পনার আওতায় আগামী একশ বছরের জন্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। নেদারল্যান্ড সরকার আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ আছেন। আমরা তাদের সঙ্গে ২১০০ আমাদের যে ডেল্টা প্লান তা বাস্তবায়ন করবো। এটা বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগ মোকাবেলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিগত কয়েক বছরে ২৩৬ কোটি টাকার সরঞ্জামাদি ক্রয় করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে।