ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

একজন অধ্যক্ষ, ফোনালাপ ফাঁস, শক্তির উৎসসন্ধান

আমি কিন্তু শুয়োরের বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার ছেলে লাগবে না। আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁইড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে- ছড়িয়ে পড়েছে, সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে, এই সুন্দর-বিশুদ্ধ-মাধুর্যমণ্ডিত-সুষমাময় কথারাশির ফাঁসিতে যে কাউকে ঝুলানোর সক্ষমতা রাখেন একজন অধ্যক্ষ।

নাহ, তিনি অবশ্য কাউকে ফাঁসি দেন না। তিনি গুলি মেরে খুলি উড়িয়ে দেয়ার সমান প্রতাপশালী। আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো (… বাচ্চা) যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশ ছাড়া করব।

কে একজন বললেন, নারী তার নিরাপত্তার জন্য পিস্তল রাখতেই পারেন। কিন্তু যিনি একজন শিক্ষক, তার মুখের বুলি, এরকম পিস্তলের গুলির মতো সুস্থ খুলি উড়িয়ে দিতে পারে, এ কথা কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়!

মানুষ এরকমটা আগে দেখে নাই, কানে শোনে নাই। এখন অবশ্য দেখতে দেখতে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। হজম করে ফেলি খুব সহজেই। কিছুদিন পর ভুলে যাই, উগড়ে দেই। তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি শিক্ষার হার বেড়েছে, আমরা শিক্ষিত হয়েছি। অথচ, বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বজাধারী হয়ে যারা বসে আছেন, তাদের মুখের কথা শুনে মনে হয় আমরা গিয়ে ঠেকেছি একবারে তলানিতে, জাহান্নমের চৌরাস্তায়।

বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় বড় কার্যকলাপ দেখান শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, ঢাবি, কেউ পিছিয়ে নেই। শিক্ষার্থীরা ভুল করলে প্রবীণদের মতো গম্ভীরভাবে আমরা নাহয় আক্ষেপ ঝাড়তে পারি, তোমাদের স্কুলে (বড় স্কুলসহ) কি টিচাররা কিছু শিখায় নাই? কিন্তু আপনি এই অধ্যক্ষ ম্যাডামদের কি বলবেন? কিভাবে আক্ষেপ ঝাড়বেন?

এই অধ্যক্ষ মহোদয় তো জানালেন, সচিব বলেছে মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার আমি বোর্ডেই থাকি। উনি বলছে, তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে। মন্ত্রী যাকে এতো ভালোবাসে তাকে নিয়ে আপনি কিছু বলবেন না। আপনাকে চুপ থাকতে হবে। এই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ। তার হাত যে অনেক প্রসারিত সেটিও তিনি জানিয়েছেন, আমার দল আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।

এতক্ষণ আমরা যে আলাপ করলাম, সেখানে মনে হতে পারে ব্যাপাটা কি? ব্যাপার দিয়ে আপনি কি করবেন? আপনার চিন্তিত হওয়া প্রয়োজন একজন অধ্যক্ষের ক্ষমতা নিয়ে। এখন কার কাজ কে করছে বলা মুশকিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভারকেও আপনার ভয় পেতে হবে। অধ্যক্ষ কি ড্রাইভারের চেয়ে কম শক্তিবান কোনো আসন? অধ্যক্ষের এই আসন বেশ পোক্ত। চেয়ারম্যানের চেয়ার, আরএফএল চেয়ার!

ভর্তি বাণিজ্য এসব প্রতিষ্ঠানের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অন্দরমহল নিয়ে কথা বলা বারণ। আমরা বলি কি, আলোর পথে আসেন। স্কুল কলেজ খুলে দেন। এইসব মগজগুলোকে অন্যকাজে ব্যস্ত থাকতে দিন, ভালো কাজে, শিক্ষার কাজে, দীক্ষার কাজে। পদ্মা সেতু ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেলে জোড়া দিতে পারবো। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। কিন্তু, মগজে যে আত্মিক সংকট বাসা বেঁধেছে, সে বাসায় এখনই ঢিল ছুড়ে ভাঙতে হবে। নয়তো, পরিত্রাণ কোথাও নেই।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ

একজন অধ্যক্ষ, ফোনালাপ ফাঁস, শক্তির উৎসসন্ধান

আপডেট টাইম ০১:২৪:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১

আমি কিন্তু শুয়োরের বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার ছেলে লাগবে না। আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁইড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে- ছড়িয়ে পড়েছে, সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে, এই সুন্দর-বিশুদ্ধ-মাধুর্যমণ্ডিত-সুষমাময় কথারাশির ফাঁসিতে যে কাউকে ঝুলানোর সক্ষমতা রাখেন একজন অধ্যক্ষ।

নাহ, তিনি অবশ্য কাউকে ফাঁসি দেন না। তিনি গুলি মেরে খুলি উড়িয়ে দেয়ার সমান প্রতাপশালী। আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো (… বাচ্চা) যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশ ছাড়া করব।

কে একজন বললেন, নারী তার নিরাপত্তার জন্য পিস্তল রাখতেই পারেন। কিন্তু যিনি একজন শিক্ষক, তার মুখের বুলি, এরকম পিস্তলের গুলির মতো সুস্থ খুলি উড়িয়ে দিতে পারে, এ কথা কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়!

মানুষ এরকমটা আগে দেখে নাই, কানে শোনে নাই। এখন অবশ্য দেখতে দেখতে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। হজম করে ফেলি খুব সহজেই। কিছুদিন পর ভুলে যাই, উগড়ে দেই। তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি শিক্ষার হার বেড়েছে, আমরা শিক্ষিত হয়েছি। অথচ, বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বজাধারী হয়ে যারা বসে আছেন, তাদের মুখের কথা শুনে মনে হয় আমরা গিয়ে ঠেকেছি একবারে তলানিতে, জাহান্নমের চৌরাস্তায়।

বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় বড় কার্যকলাপ দেখান শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, ঢাবি, কেউ পিছিয়ে নেই। শিক্ষার্থীরা ভুল করলে প্রবীণদের মতো গম্ভীরভাবে আমরা নাহয় আক্ষেপ ঝাড়তে পারি, তোমাদের স্কুলে (বড় স্কুলসহ) কি টিচাররা কিছু শিখায় নাই? কিন্তু আপনি এই অধ্যক্ষ ম্যাডামদের কি বলবেন? কিভাবে আক্ষেপ ঝাড়বেন?

এই অধ্যক্ষ মহোদয় তো জানালেন, সচিব বলেছে মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার আমি বোর্ডেই থাকি। উনি বলছে, তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে। মন্ত্রী যাকে এতো ভালোবাসে তাকে নিয়ে আপনি কিছু বলবেন না। আপনাকে চুপ থাকতে হবে। এই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ। তার হাত যে অনেক প্রসারিত সেটিও তিনি জানিয়েছেন, আমার দল আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।

এতক্ষণ আমরা যে আলাপ করলাম, সেখানে মনে হতে পারে ব্যাপাটা কি? ব্যাপার দিয়ে আপনি কি করবেন? আপনার চিন্তিত হওয়া প্রয়োজন একজন অধ্যক্ষের ক্ষমতা নিয়ে। এখন কার কাজ কে করছে বলা মুশকিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভারকেও আপনার ভয় পেতে হবে। অধ্যক্ষ কি ড্রাইভারের চেয়ে কম শক্তিবান কোনো আসন? অধ্যক্ষের এই আসন বেশ পোক্ত। চেয়ারম্যানের চেয়ার, আরএফএল চেয়ার!

ভর্তি বাণিজ্য এসব প্রতিষ্ঠানের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অন্দরমহল নিয়ে কথা বলা বারণ। আমরা বলি কি, আলোর পথে আসেন। স্কুল কলেজ খুলে দেন। এইসব মগজগুলোকে অন্যকাজে ব্যস্ত থাকতে দিন, ভালো কাজে, শিক্ষার কাজে, দীক্ষার কাজে। পদ্মা সেতু ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেলে জোড়া দিতে পারবো। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। কিন্তু, মগজে যে আত্মিক সংকট বাসা বেঁধেছে, সে বাসায় এখনই ঢিল ছুড়ে ভাঙতে হবে। নয়তো, পরিত্রাণ কোথাও নেই।