ঢাকা ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিইসি পরিবর্তনের দাবি কামাল হোসেনের

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বড় দল বিএনপি ইসির ভূমিকা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছে। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ইসিতে নালিশ জানিয়ে আসছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি নূরুল হুদা শনিবার বলেছিলেন, পুলিশ বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না।

তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি বলেছেন অত্যন্ত মারাত্মক কথা- ‘পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, আমাদের অধীনে আছে, যা করছে আমাদের নির্দেশেই করছে’- তাহলে যত গায়েবি মামলা, যত হয়রানি সব তাদের নির্দেশে হচ্ছে! তাহলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হল না। গ্রেপ্তার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “কোন লোকদের ধরানোর ব্যাপারে আপনি আদেশ দিচ্ছেন, ভেঙে বলুন, তথ্য সহকারে বলুন। যাতে আমরা এটা যাচাই করে দেখতে পারি যে আপনি যুক্তিসঙ্গত কারণে ধরাচ্ছেন, না কি সরকারের একজন সহায়ক হিসেবে করছেন। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, যেভাবে ধরপাকড় ও অন্তরীণ করা হচ্ছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। আমরা বলতে চাই, পাইকারি হারে গ্রেপ্তার বন্ধ করা দরকার। বিএনপি নেতা, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে, তার আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখান কামাল।

পুলিশকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। কামাল বলেন, “গণগ্রেপ্তার হচ্ছে। জেলখানা কীভাবে ভর্তি হয়ে গেছে, আমরা পরিসংখ্যান দেব। সেখানে লোক রাখারও সুযোগ নেই। এটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হতে পারে না। সরকারি দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন প্রটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গণভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন ও সরকারি অফিস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তারা আইন বহির্ভূতভাবে বিরোধী পক্ষে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি যারা নির্বাচন প্রার্থী হবেন তাদেরও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা যেন স্বল্প সময়ে জামিন পেতে না পারেন, সেজন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ৩ নতুন মুখ

জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আমলের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমসাআ আমিন ও একুশে টিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম গণফোরামে যোগ দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে নতুন যোগদানকারীদের স্বাগত জানান গণফোরাম সভাপতি কামাল। ২০০১ সালের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী আমিন বলেন, “আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, জেলা পরিষদেও দায়িত্ব পালন করেছি। একটা পর্যায়ে আমি সরে আসতে বাধ্য হই, সরে এসেছি। আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে প্লাটফর্ম দাঁড়িয়েছে, এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমি কাজ করতে পারব। এই নেতৃত্বের জন্য আমি গর্বিত। রেজা কিবরিয়া বলেন, “ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রতি আমি গর্বিত। আমার ড. কামাল হোসেনের সাথে সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমি যখন অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করতাম, তখন উনি সেখানে অধ্যাপনা করতেন। এখনই সময় সবাইকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দেশের ভবিষ্যৎ, কী রকম বাংলাদেশ চাই, সেই ধরনের বাংলাদেশের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।  আওয়ামী লীগের শাসনামলের সাড়ে ৯ বছরে দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেন রেজা।

সালাম বলেন, “২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বরে ইটিভি দখল হয়েছে। আজকে সেদিনটি। আমি আড়াই বছর যাবত জেলে ছিলাম। সত্যের জন্য এবং এই মিডিয়ার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে আমার এই অবস্থা। আমি মনে করি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে …. উনার দলের প্রতীকই বলে- উদীয়মান সূর্য … আমরা নতুন আলোর আশা। আশা করি পরিবর্তন হবে। এখন যে দুঃসহ অবস্থা, এর পরিবর্তন হবে। আমরা একটা সুন্দর দিন পাব। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

সিইসি পরিবর্তনের দাবি কামাল হোসেনের

আপডেট টাইম ১২:৩০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বড় দল বিএনপি ইসির ভূমিকা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছে। নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ইসিতে নালিশ জানিয়ে আসছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি নূরুল হুদা শনিবার বলেছিলেন, পুলিশ বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করছে না।

তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি বলেছেন অত্যন্ত মারাত্মক কথা- ‘পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, আমাদের অধীনে আছে, যা করছে আমাদের নির্দেশেই করছে’- তাহলে যত গায়েবি মামলা, যত হয়রানি সব তাদের নির্দেশে হচ্ছে! তাহলে তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হল না। গ্রেপ্তার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “কোন লোকদের ধরানোর ব্যাপারে আপনি আদেশ দিচ্ছেন, ভেঙে বলুন, তথ্য সহকারে বলুন। যাতে আমরা এটা যাচাই করে দেখতে পারি যে আপনি যুক্তিসঙ্গত কারণে ধরাচ্ছেন, না কি সরকারের একজন সহায়ক হিসেবে করছেন। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, যেভাবে ধরপাকড় ও অন্তরীণ করা হচ্ছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। আমরা বলতে চাই, পাইকারি হারে গ্রেপ্তার বন্ধ করা দরকার। বিএনপি নেতা, কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে, তার আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখান কামাল।

পুলিশকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। কামাল বলেন, “গণগ্রেপ্তার হচ্ছে। জেলখানা কীভাবে ভর্তি হয়ে গেছে, আমরা পরিসংখ্যান দেব। সেখানে লোক রাখারও সুযোগ নেই। এটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হতে পারে না। সরকারি দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন প্রটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কিন্তু বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গণভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন ও সরকারি অফিস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তারা আইন বহির্ভূতভাবে বিরোধী পক্ষে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি যারা নির্বাচন প্রার্থী হবেন তাদেরও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা যেন স্বল্প সময়ে জামিন পেতে না পারেন, সেজন্য বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ৩ নতুন মুখ

জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আমলের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমসাআ আমিন ও একুশে টিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম গণফোরামে যোগ দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে নতুন যোগদানকারীদের স্বাগত জানান গণফোরাম সভাপতি কামাল। ২০০১ সালের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী আমিন বলেন, “আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, জেলা পরিষদেও দায়িত্ব পালন করেছি। একটা পর্যায়ে আমি সরে আসতে বাধ্য হই, সরে এসেছি। আমি মনে করি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে প্লাটফর্ম দাঁড়িয়েছে, এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে আমি কাজ করতে পারব। এই নেতৃত্বের জন্য আমি গর্বিত। রেজা কিবরিয়া বলেন, “ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রতি আমি গর্বিত। আমার ড. কামাল হোসেনের সাথে সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমি যখন অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করতাম, তখন উনি সেখানে অধ্যাপনা করতেন। এখনই সময় সবাইকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দেশের ভবিষ্যৎ, কী রকম বাংলাদেশ চাই, সেই ধরনের বাংলাদেশের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।  আওয়ামী লীগের শাসনামলের সাড়ে ৯ বছরে দেশে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে বলে দাবি করেন রেজা।

সালাম বলেন, “২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বরে ইটিভি দখল হয়েছে। আজকে সেদিনটি। আমি আড়াই বছর যাবত জেলে ছিলাম। সত্যের জন্য এবং এই মিডিয়ার জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে আমার এই অবস্থা। আমি মনে করি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে …. উনার দলের প্রতীকই বলে- উদীয়মান সূর্য … আমরা নতুন আলোর আশা। আশা করি পরিবর্তন হবে। এখন যে দুঃসহ অবস্থা, এর পরিবর্তন হবে। আমরা একটা সুন্দর দিন পাব। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর উপস্থিত ছিলেন।