ঢাকা ০৭:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
পীরগঞ্জে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ভ্যান চালকের চালকের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা ঠাকুরগাঁও জেলা আ.লীগের সভাপতি হলেন বাবলু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ঠাকুরগাঁওয়ে শহীদ জায়া’রা ভিক্ষাবৃত্তি করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে ৬ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার পীরগঞ্জে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় র‌্যালী পীরগঞ্জে দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা ছাদে অবৈধ রেস্তোরাঁ, সিলিন্ডারে লিকেজ: ল্যাবএইড হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা অকটেনে ৪ টাকা, পেট্রোলে ৩ টাকা, ডিজেলে ৭৫ পয়সা কমল মজুতদারি-কালোবাজারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে সিআইডির ১২ টিম যেভাবে রক্ষা পেয়েছিল ৭ই মার্চের ভাষণের ভিডিও

ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি::গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সকাল ও দুপুরে গ্রামেগঞ্জে এমনকি শহরের পথে ঘাটে মানুষের জনসমাগম ছিল খুবই কম। রবিবার বেলা ১২টার পর কিছুক্ষণের জন্য রোদ উঠলেও ইতিমধ্যেই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ সময়ের বৃষ্টিকে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে শহরে ডুবে গেছে বড়মাঠের সবজি বাজার, পথ ঘাট, নিম্ন এলাকার বাড়িঘর, ট্রেজারি অফিসে যাওয়ার জনবহুল সড়কসহ অন্যান্য সড়ক। এছাড়া দিনমজুররা কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারী বর্ষণের ফলে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বৃষ্টিতে অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের অসংখ্য স্থানের ঢালাই উঠে গিয়ে গভীর গর্ত তৈরি হওয়ায় তা যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব গর্তের কারণে এরইমাঝে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং অসংখ্য মোটরযানের যান্ত্রিক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, গত তিন দিনে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে সবজি, নিচু এলাকার ধানক্ষেত ডুবে গেছে, মাটিতে শুয়ে পড়েছে আখ ক্ষেত। এতে কৃষকের ক্ষতি ছাড়াও জেলার একমাত্র ভারী শিল্প ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

প্রবল বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, জেলার টাঙ্গন, নাগর ও বুজরুক নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে যেকোনও সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

শনিবার জেলা সদরে ৮৬ মিলি মিটার ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৭০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার খালপাড়া, নিশ্চিন্তপুর ডিসি বস্তি, মুন্সিপাড়া, কলেজপাড়া, নয়াবস্তি শেনুয়াপাড়া এবং সদর উপজেলার সালন্দর, বরুনাগাঁও এবং কুমারপাড়া।

এছাড়া রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব আহমেদ জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার জন্য আমন খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।  পোকা দমনের জন্য ‘সিস্টেমেটিক ইন্সেক্টিসাইড’ কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডিসি বস্তিসহ টাঙ্গন নদীর কাছে বসবাসকারী মানুষজনকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার তাদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ইউএনও, ঠাকুরগাঁও সদর এবং সংশ্লিষ্ট মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, নদীবর্তী কয়েকটি নিচু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে। বাসিন্দাদের উদ্ধার করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বন্যার কবলে পড়া পরিবারের তালিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ১২ লাখ টাকা ইউএনওদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ত্রাণের ইউনিটগুলোকে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

পীরগঞ্জে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ভ্যান চালকের চালকের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা

ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত

আপডেট টাইম ০৪:২৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি::গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সকাল ও দুপুরে গ্রামেগঞ্জে এমনকি শহরের পথে ঘাটে মানুষের জনসমাগম ছিল খুবই কম। রবিবার বেলা ১২টার পর কিছুক্ষণের জন্য রোদ উঠলেও ইতিমধ্যেই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ সময়ের বৃষ্টিকে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে শহরে ডুবে গেছে বড়মাঠের সবজি বাজার, পথ ঘাট, নিম্ন এলাকার বাড়িঘর, ট্রেজারি অফিসে যাওয়ার জনবহুল সড়কসহ অন্যান্য সড়ক। এছাড়া দিনমজুররা কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারী বর্ষণের ফলে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এছাড়া বৃষ্টিতে অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের অসংখ্য স্থানের ঢালাই উঠে গিয়ে গভীর গর্ত তৈরি হওয়ায় তা যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব গর্তের কারণে এরইমাঝে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং অসংখ্য মোটরযানের যান্ত্রিক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, গত তিন দিনে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে সবজি, নিচু এলাকার ধানক্ষেত ডুবে গেছে, মাটিতে শুয়ে পড়েছে আখ ক্ষেত। এতে কৃষকের ক্ষতি ছাড়াও জেলার একমাত্র ভারী শিল্প ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

প্রবল বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত।

ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, জেলার টাঙ্গন, নাগর ও বুজরুক নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে যেকোনও সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

শনিবার জেলা সদরে ৮৬ মিলি মিটার ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৭০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার খালপাড়া, নিশ্চিন্তপুর ডিসি বস্তি, মুন্সিপাড়া, কলেজপাড়া, নয়াবস্তি শেনুয়াপাড়া এবং সদর উপজেলার সালন্দর, বরুনাগাঁও এবং কুমারপাড়া।

এছাড়া রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব আহমেদ জানান, অবিরাম বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার জন্য আমন খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।  পোকা দমনের জন্য ‘সিস্টেমেটিক ইন্সেক্টিসাইড’ কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নদী-নালার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডিসি বস্তিসহ টাঙ্গন নদীর কাছে বসবাসকারী মানুষজনকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শনিবার তাদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ইউএনও, ঠাকুরগাঁও সদর এবং সংশ্লিষ্ট মহিলা কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, নদীবর্তী কয়েকটি নিচু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে। বাসিন্দাদের উদ্ধার করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বন্যার কবলে পড়া পরিবারের তালিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ১২ লাখ টাকা ইউএনওদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ত্রাণের ইউনিটগুলোকে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।