ঢাকা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একজন ধর্ষিত হয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::ভারতের অপরাধের হিসেব রাখা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে ভারতের ভয়াবহ ধর্ষণ ও অপরাধের চিত্র। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের হিসেবে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টি ধর্ষণ হয়। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে বছরভর মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

ভারতে মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। এই হিসেবই বলে দিচ্ছে, ভারতে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে- ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর রাজ্য হলো রাজস্থান। সেখানে ২০১৯-এ পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।

ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থাও শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯-এ দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে আটজনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮’র তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।

ভারতে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ২০১৯-এ। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে আছে মধ্যপ্রদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।

দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯-এ ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮-র তুলনায় দলিত নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের গোড়ায় তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। হাথরাসে পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানো হয়। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভাদোইতে ১১ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মাথায় পাথর দিয়ে মারা হয়।

এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।

হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া সারা দেশে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডাতে তাদের আটকে দেয়া হয়।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়। তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। সব রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট বানানো হয়।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একজন ধর্ষিত হয়

আপডেট টাইম ০৭:৩১:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক::ভারতের অপরাধের হিসেব রাখা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে ভারতের ভয়াবহ ধর্ষণ ও অপরাধের চিত্র। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের হিসেবে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টি ধর্ষণ হয়। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে বছরভর মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

ভারতে মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। এই হিসেবই বলে দিচ্ছে, ভারতে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে- ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর রাজ্য হলো রাজস্থান। সেখানে ২০১৯-এ পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।

ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থাও শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯-এ দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে আটজনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮’র তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।

ভারতে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ২০১৯-এ। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে আছে মধ্যপ্রদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।

দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯-এ ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮-র তুলনায় দলিত নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের গোড়ায় তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। হাথরাসে পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানো হয়। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভাদোইতে ১১ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মাথায় পাথর দিয়ে মারা হয়।

এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।

হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া সারা দেশে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডাতে তাদের আটকে দেয়া হয়।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়। তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। সব রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট বানানো হয়।