স্টাফ রিপোর্টার::নারায়ণগঞ্জের এক কিশোরীকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামিকে মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে পুলিশ স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে বিচার বিভাগীয় তদন্তে উঠে এসেছে। যে কিশোরী অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছিল বলে দাবি করা হয়, ঘটনার ৪৯ দিন পর সেই কিশোরীই জীবিত ফিরে আসে। তারপর শুরু হয় চাঞ্চল্য। গঠন করা হয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। গতকাল নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনের মতামতে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ডে) থাকার সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে আসামিদের মারধর, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে বাধ্য করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের মতামতে আরো বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় সিআরপিসি’র ১৬৭ ধারা অনুযায়ী আসামিদের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর, ১৬৪ ধারা অনুসারে আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো অনিয়ম বিচারিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়নি।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন।
শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী শিশির মনির ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ১৪৪ ধারায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের সময় অনুসরণীয় ছয় দফার একটি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। ছয় দফা সুপারিশ হলো: ১. স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয়া। ২. স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পূর্বে আসামিকে তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দেয়া। ৩. স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার সময় অডিও-ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা। ৪. একাধিক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি একসঙ্গে লিপিবদ্ধ না করা। ৫. সন্দেহ দূরীকরণে আসামি স্বীকারোক্তি টাইপ না করে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক স্বহস্তে লেখা উচিত। ৬. ম্যাজিস্ট্রেট যেন আইনগত সমস্ত পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য যৌক্তিক সময় পান, সে ব্যাপারে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ঠা জুলাই ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে না পেয়ে থানায় প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পরে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ আবদুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরে গত ৯ই আগস্ট আদালতে জবানবন্দি দেন তারা। বলেন, ওই কিশোরীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার ৪৯ দিন পর গত ২৩শে আগস্ট ওই কিশোরী ফিরে আসে।
কিশোরীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির এবং মো. মিসবাহ উদ্দিন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৭শে আগস্ট আদালত আসামিদের জবানবন্দিসহ এ ঘটনায় করা অপহরণ মামলার সকল নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠাতে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর সেই প্রতিবেদন জমা দিলে গতকাল আদালতে দাখিল করা হয়।