আজম রেহমান,ঠাকুরগাঁও:: প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৯ ও ২০২২ এ শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত উপজেলা হরিপুরের চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ২ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য প্রকাশের পর প্রশংসায় ভাসছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগামী ১২ মার্চ ঢাকা’র ওসমানি স্মৃতি মলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৯ ও ২০২২ প্রদান করা হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দুরে হরিপুর উপজেলার ভারতসীমান্তবর্তী চরভিটা গ্রাম। সে গ্রামে ২০০১ সালে ৪০ জন ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে এরফান আলী নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেন চরভিটা বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি গ্রামবাসিদের সহযোগিতায় বাড়ি প্রতি একমুঠো চাল সংগ্রহ করে চালু করেন মিড-ডে মিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হয়। এরই মধ্যে জেলা পর্যায় তিন বার এবং বিভাগীয় পর্যায় দুইবার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বিদ্যালয়ে আসলে দেখে যেন মনে হবে শিক্ষার এক মনোরম পরিবেশ। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা নিচ্ছে আগ্রহ ভরে।
শিক্ষার্থীরা বলেন বিদ্যালয়ে আমরা সকালে আসি এবং ছুটি শেষে বিকালে যাই। দুপুরে আমরা এখানেই খাই। এই বিদ্যালয়ে ছবির মাধ্যমে শিখতে পারি। দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি আছে। ইংরেজি বাংলায় লিখা আছে। যা থেকে আমরা শিখতে পারি। খেলার সুন্দর পরিবেশ আছে। স্যারেরা আদর করে শিখিয়ে দেয়। খেলতে খেলতে শিখতে পারি।
ব্রাম্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে ভাবে জানান দিয়েছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। প্রত্যেক বিদ্যালয় যদি এভাবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে কোন শিশুই ঝড়ে পড়বে না। প্রতিটি শিশুই স্কুল মুখি হবে এবং শিক্ষার মান উন্নত হবে। প্রধানমন্ত্রীর যে ভিশন, মান সম্মত শিক্ষা অর্জনে এই মডেলকে গ্রহণ করে আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে পারবো।
চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরফান আলী বলেন ২০০১ সালে ৪০ জন ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কোন শিশুই বাদ পড়বে না শিক্ষা থেকে। গ্রামের কোমলমতি শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে স্কুল স্থাপন করি। শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গ্রামবাসির সহযোগিতায় মিড-ডে মিল চালু করি, এতে আমরা সফল হয়েছি। এক সময় গ্রামের অনেকেই উপহাস করতো। আমি এক সময় চা-পরটার দোকান করতাম। কিন্তু স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেগে ছিলাম। আন্তরিকতা থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব।
হরিপুর উপজেলা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, আমরা কখনো প্রত্যাশা করিনি। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হবে বিদ্যালয়টি। এ জন্য প্রধান শিক্ষক যেমন দাবীদার তেমনি দাবিদার এলাকাবাসি।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম শরীফুল হক বলেন শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ শিক্ষা পদক-২০২২ অর্জন করায় স্কুল কৃর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন। বিদ্যালয়টি উন্নয়নে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ সকলে সহযোগিতা করে আসছেন। বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। স্কুলটির বাউন্ডারি নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কথা জানান তিনি।