ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওয়াশিংটনের বার্তা লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার

খবরটি ঠিক আকস্মিক নয়। তিন সপ্তাহ আগেই জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে। গুঞ্জন ছিল নানা রকম। বুধবার মধ্যরাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তা নিশ্চিত করেন। জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে নতুন মার্কিন ভিসা নীতির খবর। ছোট করে বললে যার মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে, গণতান্ত্রিক আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারাই বাধা হবে তারা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। কারা হতে পারেন তারা? সেটাও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ক্যাটাগরি দেখেই বুঝা যায়, এটি অত্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে বিপুল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তের মধ্যে কোনো কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। এরমধ্যে রয়েছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতায় বাধা দেয়া, রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার থেকে বিরত রাখা।  আপাত দৃষ্টিতে পুরো বিবৃতিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে মার্কিন কঠোর অবস্থানই স্পষ্ট হয়েছে। আমরা মাঝে-মধ্যেই এ শিরোনাম ব্যবহার করি। এক্ষেত্রেও এটা বলা চলে, মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। বাংলাদেশের নির্বাচনে আমেরিকা কী চায়, কীভাবে চায় তা যেন অনেকটাই স্পষ্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি আমরা নাইজেরিয়াতেও ভোট কেন্দ্রিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেখেছি। সেখানেও যারা অবাধ ভোটের পথে বাধা হয়েছেন তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। মার্কিন বিবৃতির আরেকটি অংশকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে এ ধরনের খোলামেলা কথা যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনও বলেনি। বিশেষত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কথা একেবারেই পরিষ্কার। বুধবার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি এবং আপনাদের দেশে গণতন্ত্রকে সহায়তার জন্য আমরা এই নীতি ঘোষণা করছি। বাংলাদেশে যদি কেউ জনগণের ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাদের এই বার্তা দেয়া হচ্ছে যে ওয়াশিংটন ঘটনার ওপর চোখ রাখছে, যাতে জনগণ ভরসা পায়। আমরা মনে করি, আইনের এই ধারা প্রয়োগের সামর্থের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে এমন সংকেত পাঠানোও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি, আর আমরা অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত।’গত কিছুদিন থেকে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর বক্তব্য দিয়ে আসছিলো। তবে মার্কিন ঘোষণার পর সে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসেনি। বরং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ও অবস্থানকে যাতে কেউ জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য মার্কিন সরকারের ভিসা নীতি আমাদের প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে পারে।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে প্রায় একই ধরনের সুর রয়েছে।

মার্কিন ঘোষণার নানারকম তাফসির হবে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আগামী নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের ওপর যে ওয়াশিংটন সবসময় খেয়াল রাখছে সর্বশেষ ঘোষণায় এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি সবার জন্যই বার্তা। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার জন্য ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে বাংলাদেশের নির্বাচন। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও স্পষ্ট হবে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ওয়াশিংটনের বার্তা লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার

আপডেট টাইম ০৩:৪০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

খবরটি ঠিক আকস্মিক নয়। তিন সপ্তাহ আগেই জানানো হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে। গুঞ্জন ছিল নানা রকম। বুধবার মধ্যরাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তা নিশ্চিত করেন। জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে নতুন মার্কিন ভিসা নীতির খবর। ছোট করে বললে যার মানে দাঁড়ায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে, গণতান্ত্রিক আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারাই বাধা হবে তারা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। কারা হতে পারেন তারা? সেটাও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ক্যাটাগরি দেখেই বুঝা যায়, এটি অত্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে বিপুল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তের মধ্যে কোনো কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। এরমধ্যে রয়েছে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং জনগণকে সংগঠিত হবার স্বাধীনতায় বাধা দেয়া, রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার থেকে বিরত রাখা।  আপাত দৃষ্টিতে পুরো বিবৃতিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে মার্কিন কঠোর অবস্থানই স্পষ্ট হয়েছে। আমরা মাঝে-মধ্যেই এ শিরোনাম ব্যবহার করি। এক্ষেত্রেও এটা বলা চলে, মেসেজ লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। বাংলাদেশের নির্বাচনে আমেরিকা কী চায়, কীভাবে চায় তা যেন অনেকটাই স্পষ্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি আমরা নাইজেরিয়াতেও ভোট কেন্দ্রিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেখেছি। সেখানেও যারা অবাধ ভোটের পথে বাধা হয়েছেন তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। মার্কিন বিবৃতির আরেকটি অংশকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে এ ধরনের খোলামেলা কথা যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনও বলেনি। বিশেষত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কথা একেবারেই পরিষ্কার। বুধবার রাতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি এবং আপনাদের দেশে গণতন্ত্রকে সহায়তার জন্য আমরা এই নীতি ঘোষণা করছি। বাংলাদেশে যদি কেউ জনগণের ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, তাদের এই বার্তা দেয়া হচ্ছে যে ওয়াশিংটন ঘটনার ওপর চোখ রাখছে, যাতে জনগণ ভরসা পায়। আমরা মনে করি, আইনের এই ধারা প্রয়োগের সামর্থের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে এমন সংকেত পাঠানোও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আছি, আর আমরা অ্যাকশন নিতে প্রস্তুত।’গত কিছুদিন থেকে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর বক্তব্য দিয়ে আসছিলো। তবে মার্কিন ঘোষণার পর সে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসেনি। বরং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ও অবস্থানকে যাতে কেউ জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য মার্কিন সরকারের ভিসা নীতি আমাদের প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে পারে।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে প্রায় একই ধরনের সুর রয়েছে।

মার্কিন ঘোষণার নানারকম তাফসির হবে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আগামী নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের ওপর যে ওয়াশিংটন সবসময় খেয়াল রাখছে সর্বশেষ ঘোষণায় এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি সবার জন্যই বার্তা। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার জন্য ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে বাংলাদেশের নির্বাচন। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও স্পষ্ট হবে।