ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২২ দিনেও উদ্ধার হয়নি স্কুলছাত্রী, তাবিজ-কবজের পরামর্শ এসআইয়ের

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের বাদিয়াপাড়া  গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী অপহরণের ২২ দিনেও উদ্ধার হয়নি। গত ২৭ জুন ২০১৮ইং তারিখে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়। বান্ধবী জান্নাতি বেগমের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য তার বাসায় যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ।

অপহৃতার মা মলুদা বেগম জানান, ‘আসামিরা উল্টো তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। থানায় দুই বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও আসামিদের গ্রেফতার কিংবা মেয়েকে উদ্ধারের কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুলিশ।’

অবশেষে এ ঘটনায় গত ১৪ই জুলাই শনিবার রাতে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা জামান ববি ইত্তেফাককে জানান, এর আগেও সেখানকার চার পাঁচটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের আর পাওয়া যায়নি। এটা মানবপাচার হতে পারে।

তিনি জানান, গত ২৭ জুন এক স্কুলছাত্রী (১২) স্কুল ড্রেস পরে তার বান্ধবী জান্নাতি বেগমের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য তার বাসায় যায়। এরপর সেখানে জান্নাতি বেগমের দুলাভাই আসাদ কৌশলে তাদের দুইজনকে নিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বিকেলে জান্নাতি বেগম ফিরে এলেও অপরজন ফিরে না আসায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।

এলাকাবাসীর চাপে জান্নাতির বাবা সুলতান, দুলাভাই আসাদসহ স্বজনরা স্বীকার করে যে, ওই ছাত্রীকে দুইজন অপরিচিত লোকের হাতে তারা তুলে দিয়েছে। পরে এ ঘটনা নিয়ে অপহৃতার মা কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি রেকর্ড করে।

রংপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ উদ্ধারের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ৫ জুলাই কোতয়ালী থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোতয়ালী থানার এসআই আরিফ মামলাটি রেকর্ড না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। সে উল্টো অপহৃতার মাসহ স্বজনদের ডেকে থানায় নিয়ে মামলা না করার পরামর্শ দেয়। আসামিদের পাশে বসিয়ে ওই ছাত্রীর স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি দেয়। থানায় বসে আসামিদের সঙ্গে গল্প গুজব করে।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্বজনরা এসআই আরিফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের তাবিজ কবজ করে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা করার পরামর্শ দেন। কোন উপায় না দেখে স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় এসে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি সরাসরি ওসি বাবুল হোসেনকে ফোন করেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান।

এর প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি অপহৃতার স্বজনদের নিয়ে কোতয়ালী থানায় যান। ওসির কক্ষে গিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানতে চান কেন এখনও মামলা হলো না? কেন আসামিদের গ্রেফতার করে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হচ্ছে না?

নাসিমা জামান ববি জানান, তিনি এসআই আরিফের বিরুদ্ধে অপহরণকারীদের পক্ষ নেওয়া, নিজের কক্ষে তাদের সঙ্গে গল্প করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে ওসি বাবুল হোসেন এসআই আরিফকে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। ওসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওসির চেম্বারে ঢুকেই এসআই আরিফ অপহৃতার মামা আলমগীরকে পেটাতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলে তাকেও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন পুলিশের ওই এসআই। এ ঘটনা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ববির সঙ্গে এসআই আরিফের বাক-বিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে কোতয়ালী থানায় শত শত মানুষ ভিড় জমায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বাসায় চলে আসেন।

তবে, রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি বাবুল মিয়া অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিযোগ এবং অপহৃতের স্বজনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে এসআই আরিফ ইত্তেফাককে বলেন, পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝি। ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য তথ্য সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই স্কুলছাত্রী অপহরণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ৯ দিন পর পুলিশ মামলা রেকর্ড করে।

বিশেষ করে ওসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের  উপস্থিতিতে এসআই আরিফ কর্তৃক অপহৃতার মামাকে পেটানোর ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

২২ দিনেও উদ্ধার হয়নি স্কুলছাত্রী, তাবিজ-কবজের পরামর্শ এসআইয়ের

আপডেট টাইম ১২:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই ২০১৮

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের বাদিয়াপাড়া  গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী অপহরণের ২২ দিনেও উদ্ধার হয়নি। গত ২৭ জুন ২০১৮ইং তারিখে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়। বান্ধবী জান্নাতি বেগমের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য তার বাসায় যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ।

অপহৃতার মা মলুদা বেগম জানান, ‘আসামিরা উল্টো তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। থানায় দুই বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও আসামিদের গ্রেফতার কিংবা মেয়েকে উদ্ধারের কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুলিশ।’

অবশেষে এ ঘটনায় গত ১৪ই জুলাই শনিবার রাতে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা জামান ববি ইত্তেফাককে জানান, এর আগেও সেখানকার চার পাঁচটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের আর পাওয়া যায়নি। এটা মানবপাচার হতে পারে।

তিনি জানান, গত ২৭ জুন এক স্কুলছাত্রী (১২) স্কুল ড্রেস পরে তার বান্ধবী জান্নাতি বেগমের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য তার বাসায় যায়। এরপর সেখানে জান্নাতি বেগমের দুলাভাই আসাদ কৌশলে তাদের দুইজনকে নিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বিকেলে জান্নাতি বেগম ফিরে এলেও অপরজন ফিরে না আসায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।

এলাকাবাসীর চাপে জান্নাতির বাবা সুলতান, দুলাভাই আসাদসহ স্বজনরা স্বীকার করে যে, ওই ছাত্রীকে দুইজন অপরিচিত লোকের হাতে তারা তুলে দিয়েছে। পরে এ ঘটনা নিয়ে অপহৃতার মা কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি রেকর্ড করে।

রংপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ উদ্ধারের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ৫ জুলাই কোতয়ালী থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোতয়ালী থানার এসআই আরিফ মামলাটি রেকর্ড না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। সে উল্টো অপহৃতার মাসহ স্বজনদের ডেকে থানায় নিয়ে মামলা না করার পরামর্শ দেয়। আসামিদের পাশে বসিয়ে ওই ছাত্রীর স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি দেয়। থানায় বসে আসামিদের সঙ্গে গল্প গুজব করে।

বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্বজনরা এসআই আরিফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের তাবিজ কবজ করে মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা করার পরামর্শ দেন। কোন উপায় না দেখে স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় এসে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি সরাসরি ওসি বাবুল হোসেনকে ফোন করেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান।

এর প্রেক্ষিতে গত ১৩ জুলাই শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি অপহৃতার স্বজনদের নিয়ে কোতয়ালী থানায় যান। ওসির কক্ষে গিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানতে চান কেন এখনও মামলা হলো না? কেন আসামিদের গ্রেফতার করে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হচ্ছে না?

নাসিমা জামান ববি জানান, তিনি এসআই আরিফের বিরুদ্ধে অপহরণকারীদের পক্ষ নেওয়া, নিজের কক্ষে তাদের সঙ্গে গল্প করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে ওসি বাবুল হোসেন এসআই আরিফকে তার কক্ষে ডেকে পাঠান। ওসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওসির চেম্বারে ঢুকেই এসআই আরিফ অপহৃতার মামা আলমগীরকে পেটাতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলে তাকেও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন পুলিশের ওই এসআই। এ ঘটনা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ববির সঙ্গে এসআই আরিফের বাক-বিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে কোতয়ালী থানায় শত শত মানুষ ভিড় জমায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বাসায় চলে আসেন।

তবে, রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি বাবুল মিয়া অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিযোগ এবং অপহৃতের স্বজনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে এসআই আরিফ ইত্তেফাককে বলেন, পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝি। ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য তথ্য সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই স্কুলছাত্রী অপহরণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ৯ দিন পর পুলিশ মামলা রেকর্ড করে।

বিশেষ করে ওসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের  উপস্থিতিতে এসআই আরিফ কর্তৃক অপহৃতার মামাকে পেটানোর ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।