বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আইএসের পক্ষ থেকে আসা আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে। কমপক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে
এসব শিবির থেকে প্রতিদিন তাদের অনেকে পালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে সরকার আবার এসব ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে।
সব রোহিঙ্গাই ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী নন। যেহেতু মিয়ানমারে তাদের ফেরা অনিশ্চিত তাই তাদের অনেকে নিত্যদিনের খরচ মেটানোর জন্য উপার্জন করতে ক্যাম্প ছেড়ে যায়। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় না। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে তারা উন্নত জীবন খোঁজে।
ব্যাপক অর্থে রোহিঙ্গারা দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপ যুক্ত বাংলাদেশে ইসলামপন্থি উগ্রবাদী গ্রুপগুলোর সঙ্গে। অন্য গ্রুপটি যুক্ত আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে। এই গ্রুপগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্টপোষকতা করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এর ফলে রোহিঙ্গা যুবকরা ইসলামপন্থি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। সীমান্তের উভয় পাশ থেকে স্থল ও জলসীমানা অতিক্রম করা খুব সহজ। পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক ইসলামপন্থি উগ্রবাদী আছেন, যারা বাংলাদেশের উগ্রবাদীদের থেকে অনেক বেশি শক্তি ধারণ করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামিকে ফাঁসি দেয়ার পর দেশের ভিতরে কেউই নিজামির পক্ষে কোনো র্যালি বের করার সাহস দেখান নি। কিন্তু কলকাতায় মুসলিম উগ্রপন্থিরা নিজামির পক্ষে র্যালি করেছেন। কলকাতা ছাড়া এমন র্যালি হয়েছে শুধু পাকিস্তানের ইসলামাবাদে।
সরকারি সূত্রগুলো এ বিষয়ে অবহিত যে, বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে মুসলিমদের একটি অংশ উগ্রপন্থি হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশী কিছু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যতদিন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশী ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ হয়ে থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ ও ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে, দিনের বেলায় ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীরা ঢাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা করেছে এবং তার দায় স্বীকার করেছে আইএস। দৃশ্যত এমন হামলা অত্যন্ত পরিকল্পিত। এ বিষয়ে তদন্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ এবং তারা দেখতে পেয়েছে যে, বোমা হামলার ওই সময়ে ওই এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা কার্যকর ছিল না। এতে প্রকাশ পায়, সন্ত্রাসীরা কতটা সুসংগঠিত।
দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বাংলাদেশ। কিন্তু কখনোই স্বীকার করে নি যে, দেশের ভিতরে সক্রিয় রয়েছে আইএস। এমনকি হলি আর্টিজান ক্যাফেতে নৃশংস হামলার পরও সরকার স্বীকার করেনি যে, ওই হামলা করেছিল আইএস। পক্ষান্তরে তারা এটি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যে, এ হামলা চালিয়েছে দেশের ভিতর বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীরা। জনগণ সরকারের কথা বিশ্বাস করেছিল। কারণ, বাংলাদেশে অনেক ইসলামপন্থি উগ্রবাদী গ্রুপ আছে। কিন্তু পুলিশের ওপর সর্বশেষ দুটি হামলার পর আইএসের দাবি উড়িয়ে দেয় নি সরকার। পুলিশ প্রশাসনও আইএসের হুমকির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু গ্রুপের সঙ্গে আইএসের যোগসূত্র আছে। যদিও এর পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই, তবু বলা হয় মিয়ানমারের আরসা হলো পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সৃষ্টি। তাদের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার কিছু সন্ত্রাসীর যোগসূত্র আছে।
বাংলাদেশ এখন ভারতের নিকটতম এক বন্ধু। এখানে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। যদি একটি নিকটতম বন্ধু বাংলাদেশ স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে সুস্থ দেশ হয় তাহলে তাতে ভারত শক্তিশালী হবে।
যেসব দেশ আইএস সৃষ্টি করেছে এবং আইএসআই’কে অর্থায়ন করে তারা চায় না বাংলাদেশ ও ভারত স্থিতিশীল থাকুক। তারা আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দেয়ার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতকে অস্থিতিশীলই করতে চায় না, একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ও বঙ্গোপসাগরে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের জন্য একটি ‘বাফার’ এলাকা তৈরি করতে চায়। তাই আইএস এবং রোহিঙ্গা সমস্যাকে মোকাবিলা করতে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের লেখা এই প্রতিবেদনটি সাউথ এশিয়া মনিটর থেকে অনূদিত)