ঢাকা ১১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা রুখতে ঐক্য জরুরি: ফখরুল খালেদার চিকিৎসায় সুবিধা দেওয়ায় কাতার ও যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ দিল বিএনপি চলচ্চিত্র তারকা প্রবীর মিত্রের শেষ বিদায়, ইসলামী রীতিতে দাফন ঠাকুরগাঁওয়ে ‘ইত্যাদি’ ধারন অনুষ্ঠানে ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত হাজীপুর কলেজে জীবন্ত গাছ কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, সভাপতি বলেছেন ব্যবস্থা নেয়া হবে ঠাকুরগাঁওয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত চাচাকে দেখতে যাবার পথে স্কুলশিক্ষিকা ভাস্তি মিনিবাস’র ধাক্কায় নিহত সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংবাদিক আব্দুর রহমান মারা গেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা হজরত সোলায়মান (আ.) ও রানি বিলকিসের ঘটনা

লিবিয়ায় অভিবাসী বন্দি শিবিরে বিভীষিকা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

৪ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার::ভয়-আতঙ্ক তাড়া করছে লিবিয়ায় থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশিকে। বিশেষ করে রাজধানী ত্রিপোলী এবং এর আশপাশের এলাকায় থাকা প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী প্রাণে বাঁচতে এখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তারা নিজ ঘরেও নিরাপদ নন। স্থানীয় সূত্র এবং বাংলাদেশ মিশনের বরাতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ত্রিপোলীর উপকণ্ঠে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটারের মধ্যে গত ক’দিন ধরে তুমূল যুদ্ধ চলছে বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে। গতকাল ত্রিপোলির বাইরে একটি অভিবাসী বন্দী শিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছেন। ত্রিপোলিতে প্রায় প্রতিদিনই সরকারপন্থী মিলিশিয়া ও দেশটির এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ সমর্থিত দেশটির সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সেরাজ অভিযোগ করেন, স্বনিয়ন্ত্রিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) ওই শিবিরে হামলা চালিয়েছে। তবে খলিফা হাফতার নেতৃত্বাধীন ওই বাহিনী এলএনএ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যে এলাকায় হামলাটি হয়েছে সেখানেই সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছেন তারা। পাল্টাপাল্টি এ অভিযোগের মধ্যে অভিবাসীদের প্রাণ যাচ্ছে।

মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই আফ্রিকা অঞ্চলের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তাতে কোন বাংলাদেশি রয়েছেন কি-না? সেটি খতিয়ে দেখতে ওই এলাকায় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রাপ্ত রিপোর্ট বলছে, এর আগে গত সোমবারও ওই এলাকায় বিমান হামলা হয়েছে। তাতে হতাহতের ঘটনা রয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধাবস্থায় দূতাবাসের তরফে বাংলাদেশিদের সময় সময় নোটিশ করা হচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির অবনতিতে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াও থমকে গেছে! তবে গত ক’দিনে শ’ খানেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পেয়েছেন। আরও কয়েক শ’ ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, এপ্রিলের সূচনাতে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সেখানে অতীব জরুরি সতর্কতা (স্টেট অব এলার্ট) ঘোষণা করে সরকার। এ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপোলী ও এর পার্শ্ববর্তী শহরসমূহে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে নোটিশ জারি করে বাংলাদেশ দূতাবাস।

সে সময় দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামপ্রতিক আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির কারণে লিবিয়ার সরকার অতীব জরুরি সতর্কতা ঘোষণা করেছে। স্ব-স্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ত্রিপোলী ও এর পার্শ্ববর্তী শহরসমূহে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা সীমিত করে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্কভাবে বাসায় অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দূতাবাস ওই সময়ই লিবিয়ায় থাকা প্রবাসীদের যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের হটলাইন নাম্বার +২১৮৯১৬৯৯৪২০৭ ও +২১৮৯১০০১৩৯৬৮ যোগাযোগ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করে। গতকাল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আগের সতর্কতা কেবল বলবৎই নয়, এখন এটি মানতে বাংলাদেশিদের মাঝে রীতিমত ক্যাম্পেইন চলছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থার মুখে ভয় ও আতঙ্কে দলে দলে দেশ ছাড়ছেন বিদেশীরা। মঙ্গলবার সকালে ২৯ বাংলাদেশীর একটি দল নিরাপদে ঢাকায় পৌছায়। তার্কিশ এয়ারে তারা ঢাকা পৌঁছান। সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে কেবল ত্রিপোলী থেকেই প্রায় ১০ হাজার অভিবাসী পালাচ্ছেন জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে।

ওই অভিবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ মানবপাচারের শিকার বা মানবপাচারকারীদের সহায়তায় ইউরোপ পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের লিবিয়া ছাড়ার কারণ হিসেবে ত্রিপোলীস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দর আলী গণমাধ্যমকে বলেন, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে গত একমাস ধরে যুদ্ধ চলছে। পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ অবস্থায় ভিন দেশি অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশিরাও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন, অনেকে এরইমধ্যে দেশে ফিরে গেছেন।

২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অপসারণ ও হত্যার পর থেকেই সংঘাতের কারণে বিভক্তি দেখা দেয়। কোন কর্তৃপক্ষই লিবিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। চরমভাবে অস্থিতিশীল দেশটির নিয়ন্ত্রণ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক এবং সামরিক গোষ্ঠীর হাতে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি প্রধানমন্ত্রীর সারাজের নেতৃত্বাধীন এবং অপরটি জেনারেল হাফতারের নিয়ন্ত্রণাধীন। গত এপ্রিলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে জেনারেল হাফতার। গত চার দশক ধরে লিবিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন জেনারেল হাফতার। ১৯৮০র দশকে মত বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনের আগ পর্যন্ত গাদ্দাফির কাছের মিত্র ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের আন্দোলনের পর দেশে ফিরে পূর্বাঞ্চলে নিজের শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলেন তিনি। সমর্থন পান ফ্রান্স, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের। গাদ্দাফি সংশ্লিষ্টতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ থাকার কারণে তার প্রতি মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে বেনগাজি এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে কথিত ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিতাড়ি করায় অনেকে তাকে কৃতিত্ব দেন।

লিবিয়ার অভিবাসী বন্দিশিবিরে ‘অকল্পনীয় বিভীষিকা’
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে লিবিয়ায় পলায়মান ১০ হাজারের বেশি অভিবাসীর মধ্যে বেশির ভাগের ভাগ্য নির্ধারিত হয় মানব পাচারকারীদের হাতে বা অন্ধকার বন্দিশিবিরে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আফ্রিকান নাগরিক। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আইপিএস।

খবরে বলা হয়,  ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সবচেয়ে বড় প্রস্থান পয়েন্ট হচ্ছে লিবিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল। একইসঙ্গে আধুনিক দাসত্বের সবচেয়ে বড় চর্চাও হয়ে থাকে সেখানে। কেউ আটক হন স্থলে, কেউ সমুদ্রে, কেউ আহত হন মিলিশিয়াদের হামলায় আর কেউ ফেঁসে যান মানব পাচারের জালে। সেখান থেকে অনেকের স্থান হয় বন্দিশিবিরে, যেখানে সম্ভাব্য সকল প্রকারের নির্যাতনের শিকার হয় তারা।

লিবিয়ায় জাতিসংঘের সহায়ক মিশনের (ইউএনএসএমআইএল) এক প্রতিবেদনে জানায়, অভিবাসীরা লিবিয়ার মাটিতে পা রাখা মাত্রই তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, অসদাচরণ, বাছবিচারহীন আটক, চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে, এসব বিষয়ে কোনো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ বন্দিশিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

‘আমি জানি না এই দুনিয়ায় আমার স্থান কোথায়!’
লিবিয়ার বন্দিশিবিরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেগুলো পাহারার দায়িত্বে থাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ড বা জিএনএ সরকার সমর্থনকারী মিলিশিয়ারা। প্রায় প্রতি বন্দিশিবিরেই অল্প জায়গায় আটকে রাখা হয় কয়েক শ’ অভিবাসীকে। তাদের দেয়া হয় না যথাযথ ভেন্টিলেশন বা বিশুদ্ধ পানি। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিছু শিবিরে টয়লেট ভরে মল উপচে পড়ছে। শিবিরের ভেতরেই কয়েকদিন ধরে পড়ে থাকছে আবর্জনা ও মল। সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির। এতে একাধিক রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে।

জিনতানে একটি শিবির পরিদর্শন শেষে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) কর্মীরা জানিয়েছেন, এ যেন কোনো বিপর্যয়। শত শত অভিবাসী মাত্র চারটি টয়লেট ব্যবহার করেন। টয়লেটগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। এগুলোতে নেই শাওয়ারের কোনো ব্যবস্থা। পানি সরবরাহের পরিমাণও স্বল্প।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) লিবিয়া সমন্বয়ক ড. হুসেইন হাসান বলেন, প্রায় ৩৪টি কেন্দ্রের বিভিন্ন অভিবাসী যক্ষ্মাসহ অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, এইচআইভি ও চর্ম রোগে ভুগছে। জানুয়ারিতে কেন্দ্রগুলোতে টিবি ক্যামেপইন চালানো হয়। তাতে যাদের যক্ষ্মা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের আলাদা কক্ষে না রেখে বাকি সবার সঙ্গেই রাখা হয়।

দ্য আইরিশ টাইমসে জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনতান বন্দিশিবিরের অন্তত ৮০ শতাংশ অভিবাসী যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। এমএফএফ জানায়, যক্ষ্মা ছাড়া আরো অনেক রোগে আক্রান্ত শিবিরের বন্দিরা। অনেকে অপুষ্টি, চর্মরোগ, আমাশয়, শ্বাসনালীতে সংক্রমণসহ নানা রোগে ভুগছেন। এর সঙ্গে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্দশা আরো বৃদ্ধি করছে। এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের একইসঙ্গে রাখা হচ্ছে।

আইপিএস জানায়, অভিবাসীদের এসব দুর্দশা থেকে রক্ষা করার কেউ নেই। স্থানীয় জনগণ ছাড়া বাইরের কারো সেখানে প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ। এমনকি প্রায়ই আটকে রাখা হয় মানবাধিকার কর্মীদেরও। একজন এরিত্রিয়ান শরণার্থী এমএফএফকে বলেছে, আমাদেরকে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আমি ফিরে যেতে পারছি না, আর অন্য কেউ আমাদের নিতেও চাইছে না। আমি জানি না, এই দুনিয়ায় আমার স্থান কোথায়।

আমরা মারা যাচ্ছি
মানব পাচারকারীদের দ্বারা শোষিত ও পণ্যদ্রব্যের মতো বিক্রি হয়ে নিজেদের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয়ে থাকেন এই অভিবাসীরা। ইউএনএসএমআইএল’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দি শিবিরগুলোতে অভিবাসীদের প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়। তাদেরকে নিয়মিত মারধর করা হয়, গরম লোহা দিয়ে গায়ে ছেঁকা দেয়া হয়। এমনকি বৈদ্যুতিক শকও বাদ দেয়া হয় না। নানা ধরনের অত্যাচারের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে থাকে পাচারকারীরা।

২০১১ সালে লিবিয়ার সামরিক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। এরপর দেশটির বিরোধী দল ও ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে লিবিয়ার শাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দেশটির তেলক্ষেত্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকে। এই সময় দেশজুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান থাকে। ফলে, লিবিয়ার সীমান্ত অঞ্চল ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে চোরচালান ও মানব পাচার ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ অভিবাসীই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। এই অঞ্চলটি লিবিয়ার সব থেকে বেশি অস্থিতিশীল। সেখান থেকে তাদেরকে ত্রিপলিতে নিয়ে আসা হয় এবং মাত্র কয়েক শ’ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধের মধ্যে অভিবাসীরা অসহায়ের মতো বাস করছে। প্রতিদিন সেখান থেকে পালাচ্ছেন অসংখ্য অভিবাসী।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মানব পাচারকারীদের হাতে বন্দি থাকা অবস্থায় অসংখ্য অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই গুলি খেয়ে কিংবা নির্যাতনের কারণে মারা গেছে। এ ছাড়া আছে, অনাহার ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু। ইউনিসেফকে এসব বন্দি  জানিয়েছে, আমরা মারা যাচ্ছি। আমরা পশুর মতো বাস করছি, তারা প্রতিদিন আমাদের ওপর অত্যাচার চালায়।

এত কিছুর পরও অনেক অভিবাসী পালাতে সক্ষম হয়। তারা লিবিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন ইউরোপীয় পেট্রোল জাহাজগুলো তাদেরকে তাড়া করে এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝ থেকে তাদেরকে আবার সেই লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে অক্সফাম ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

২০১৭ সালে ইতালির পার্লামেন্ট নতুন এক আইন পাস করে। এ আইন অনুযায়ী অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশ ঠেকাতে ইতালির নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরের অপরপাশে লিবিয়ার কোস্টগার্ডদের সাহায্য করার অনুমতি পায়। ২০১৪ সালের পর থেকে এই রুটে ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাসীর মৃত্যু হয়েছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা রুখতে ঐক্য জরুরি: ফখরুল

লিবিয়ায় অভিবাসী বন্দি শিবিরে বিভীষিকা বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

আপডেট টাইম ০৪:৫০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০১৯

৪ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার::ভয়-আতঙ্ক তাড়া করছে লিবিয়ায় থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশিকে। বিশেষ করে রাজধানী ত্রিপোলী এবং এর আশপাশের এলাকায় থাকা প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী প্রাণে বাঁচতে এখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তারা নিজ ঘরেও নিরাপদ নন। স্থানীয় সূত্র এবং বাংলাদেশ মিশনের বরাতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ত্রিপোলীর উপকণ্ঠে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটারের মধ্যে গত ক’দিন ধরে তুমূল যুদ্ধ চলছে বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে। গতকাল ত্রিপোলির বাইরে একটি অভিবাসী বন্দী শিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছেন। ত্রিপোলিতে প্রায় প্রতিদিনই সরকারপন্থী মিলিশিয়া ও দেশটির এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ সমর্থিত দেশটির সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সেরাজ অভিযোগ করেন, স্বনিয়ন্ত্রিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) ওই শিবিরে হামলা চালিয়েছে। তবে খলিফা হাফতার নেতৃত্বাধীন ওই বাহিনী এলএনএ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যে এলাকায় হামলাটি হয়েছে সেখানেই সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছেন তারা। পাল্টাপাল্টি এ অভিযোগের মধ্যে অভিবাসীদের প্রাণ যাচ্ছে।

মঙ্গলবারের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই আফ্রিকা অঞ্চলের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তাতে কোন বাংলাদেশি রয়েছেন কি-না? সেটি খতিয়ে দেখতে ওই এলাকায় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রাপ্ত রিপোর্ট বলছে, এর আগে গত সোমবারও ওই এলাকায় বিমান হামলা হয়েছে। তাতে হতাহতের ঘটনা রয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধাবস্থায় দূতাবাসের তরফে বাংলাদেশিদের সময় সময় নোটিশ করা হচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির অবনতিতে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াও থমকে গেছে! তবে গত ক’দিনে শ’ খানেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে পেয়েছেন। আরও কয়েক শ’ ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, এপ্রিলের সূচনাতে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে সেখানে অতীব জরুরি সতর্কতা (স্টেট অব এলার্ট) ঘোষণা করে সরকার। এ অবস্থায় লিবিয়ার ত্রিপোলী ও এর পার্শ্ববর্তী শহরসমূহে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে নোটিশ জারি করে বাংলাদেশ দূতাবাস।

সে সময় দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামপ্রতিক আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির কারণে লিবিয়ার সরকার অতীব জরুরি সতর্কতা ঘোষণা করেছে। স্ব-স্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ত্রিপোলী ও এর পার্শ্ববর্তী শহরসমূহে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা সীমিত করে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্কভাবে বাসায় অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দূতাবাস ওই সময়ই লিবিয়ায় থাকা প্রবাসীদের যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের হটলাইন নাম্বার +২১৮৯১৬৯৯৪২০৭ ও +২১৮৯১০০১৩৯৬৮ যোগাযোগ করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করে। গতকাল এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আগের সতর্কতা কেবল বলবৎই নয়, এখন এটি মানতে বাংলাদেশিদের মাঝে রীতিমত ক্যাম্পেইন চলছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থার মুখে ভয় ও আতঙ্কে দলে দলে দেশ ছাড়ছেন বিদেশীরা। মঙ্গলবার সকালে ২৯ বাংলাদেশীর একটি দল নিরাপদে ঢাকায় পৌছায়। তার্কিশ এয়ারে তারা ঢাকা পৌঁছান। সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে কেবল ত্রিপোলী থেকেই প্রায় ১০ হাজার অভিবাসী পালাচ্ছেন জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে।

ওই অভিবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ মানবপাচারের শিকার বা মানবপাচারকারীদের সহায়তায় ইউরোপ পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের লিবিয়া ছাড়ার কারণ হিসেবে ত্রিপোলীস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সেকান্দর আলী গণমাধ্যমকে বলেন, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে গত একমাস ধরে যুদ্ধ চলছে। পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ অবস্থায় ভিন দেশি অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশিরাও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন, অনেকে এরইমধ্যে দেশে ফিরে গেছেন।

২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অপসারণ ও হত্যার পর থেকেই সংঘাতের কারণে বিভক্তি দেখা দেয়। কোন কর্তৃপক্ষই লিবিয়ার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। চরমভাবে অস্থিতিশীল দেশটির নিয়ন্ত্রণ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক এবং সামরিক গোষ্ঠীর হাতে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি প্রধানমন্ত্রীর সারাজের নেতৃত্বাধীন এবং অপরটি জেনারেল হাফতারের নিয়ন্ত্রণাধীন। গত এপ্রিলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে জেনারেল হাফতার। গত চার দশক ধরে লিবিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন জেনারেল হাফতার। ১৯৮০র দশকে মত বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনের আগ পর্যন্ত গাদ্দাফির কাছের মিত্র ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের আন্দোলনের পর দেশে ফিরে পূর্বাঞ্চলে নিজের শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলেন তিনি। সমর্থন পান ফ্রান্স, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের। গাদ্দাফি সংশ্লিষ্টতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ থাকার কারণে তার প্রতি মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে বেনগাজি এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে কথিত ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিতাড়ি করায় অনেকে তাকে কৃতিত্ব দেন।

লিবিয়ার অভিবাসী বন্দিশিবিরে ‘অকল্পনীয় বিভীষিকা’
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে লিবিয়ায় পলায়মান ১০ হাজারের বেশি অভিবাসীর মধ্যে বেশির ভাগের ভাগ্য নির্ধারিত হয় মানব পাচারকারীদের হাতে বা অন্ধকার বন্দিশিবিরে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আফ্রিকান নাগরিক। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আইপিএস।

খবরে বলা হয়,  ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সবচেয়ে বড় প্রস্থান পয়েন্ট হচ্ছে লিবিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল। একইসঙ্গে আধুনিক দাসত্বের সবচেয়ে বড় চর্চাও হয়ে থাকে সেখানে। কেউ আটক হন স্থলে, কেউ সমুদ্রে, কেউ আহত হন মিলিশিয়াদের হামলায় আর কেউ ফেঁসে যান মানব পাচারের জালে। সেখান থেকে অনেকের স্থান হয় বন্দিশিবিরে, যেখানে সম্ভাব্য সকল প্রকারের নির্যাতনের শিকার হয় তারা।

লিবিয়ায় জাতিসংঘের সহায়ক মিশনের (ইউএনএসএমআইএল) এক প্রতিবেদনে জানায়, অভিবাসীরা লিবিয়ার মাটিতে পা রাখা মাত্রই তারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, অসদাচরণ, বাছবিচারহীন আটক, চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তবে, এসব বিষয়ে কোনো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ বন্দিশিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

‘আমি জানি না এই দুনিয়ায় আমার স্থান কোথায়!’
লিবিয়ার বন্দিশিবিরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেগুলো পাহারার দায়িত্বে থাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ড বা জিএনএ সরকার সমর্থনকারী মিলিশিয়ারা। প্রায় প্রতি বন্দিশিবিরেই অল্প জায়গায় আটকে রাখা হয় কয়েক শ’ অভিবাসীকে। তাদের দেয়া হয় না যথাযথ ভেন্টিলেশন বা বিশুদ্ধ পানি। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিছু শিবিরে টয়লেট ভরে মল উপচে পড়ছে। শিবিরের ভেতরেই কয়েকদিন ধরে পড়ে থাকছে আবর্জনা ও মল। সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির। এতে একাধিক রোগ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে।

জিনতানে একটি শিবির পরিদর্শন শেষে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) কর্মীরা জানিয়েছেন, এ যেন কোনো বিপর্যয়। শত শত অভিবাসী মাত্র চারটি টয়লেট ব্যবহার করেন। টয়লেটগুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। এগুলোতে নেই শাওয়ারের কোনো ব্যবস্থা। পানি সরবরাহের পরিমাণও স্বল্প।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) লিবিয়া সমন্বয়ক ড. হুসেইন হাসান বলেন, প্রায় ৩৪টি কেন্দ্রের বিভিন্ন অভিবাসী যক্ষ্মাসহ অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, এইচআইভি ও চর্ম রোগে ভুগছে। জানুয়ারিতে কেন্দ্রগুলোতে টিবি ক্যামেপইন চালানো হয়। তাতে যাদের যক্ষ্মা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের আলাদা কক্ষে না রেখে বাকি সবার সঙ্গেই রাখা হয়।

দ্য আইরিশ টাইমসে জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনতান বন্দিশিবিরের অন্তত ৮০ শতাংশ অভিবাসী যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। এমএফএফ জানায়, যক্ষ্মা ছাড়া আরো অনেক রোগে আক্রান্ত শিবিরের বন্দিরা। অনেকে অপুষ্টি, চর্মরোগ, আমাশয়, শ্বাসনালীতে সংক্রমণসহ নানা রোগে ভুগছেন। এর সঙ্গে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্দশা আরো বৃদ্ধি করছে। এরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের একইসঙ্গে রাখা হচ্ছে।

আইপিএস জানায়, অভিবাসীদের এসব দুর্দশা থেকে রক্ষা করার কেউ নেই। স্থানীয় জনগণ ছাড়া বাইরের কারো সেখানে প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ। এমনকি প্রায়ই আটকে রাখা হয় মানবাধিকার কর্মীদেরও। একজন এরিত্রিয়ান শরণার্থী এমএফএফকে বলেছে, আমাদেরকে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আমি ফিরে যেতে পারছি না, আর অন্য কেউ আমাদের নিতেও চাইছে না। আমি জানি না, এই দুনিয়ায় আমার স্থান কোথায়।

আমরা মারা যাচ্ছি
মানব পাচারকারীদের দ্বারা শোষিত ও পণ্যদ্রব্যের মতো বিক্রি হয়ে নিজেদের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয়ে থাকেন এই অভিবাসীরা। ইউএনএসএমআইএল’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দি শিবিরগুলোতে অভিবাসীদের প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়। তাদেরকে নিয়মিত মারধর করা হয়, গরম লোহা দিয়ে গায়ে ছেঁকা দেয়া হয়। এমনকি বৈদ্যুতিক শকও বাদ দেয়া হয় না। নানা ধরনের অত্যাচারের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে থাকে পাচারকারীরা।

২০১১ সালে লিবিয়ার সামরিক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। এরপর দেশটির বিরোধী দল ও ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে লিবিয়ার শাসন নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দেশটির তেলক্ষেত্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকে। এই সময় দেশজুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান থাকে। ফলে, লিবিয়ার সীমান্ত অঞ্চল ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে চোরচালান ও মানব পাচার ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ অভিবাসীই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। এই অঞ্চলটি লিবিয়ার সব থেকে বেশি অস্থিতিশীল। সেখান থেকে তাদেরকে ত্রিপলিতে নিয়ে আসা হয় এবং মাত্র কয়েক শ’ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা ও যুদ্ধের মধ্যে অভিবাসীরা অসহায়ের মতো বাস করছে। প্রতিদিন সেখান থেকে পালাচ্ছেন অসংখ্য অভিবাসী।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মানব পাচারকারীদের হাতে বন্দি থাকা অবস্থায় অসংখ্য অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই গুলি খেয়ে কিংবা নির্যাতনের কারণে মারা গেছে। এ ছাড়া আছে, অনাহার ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু। ইউনিসেফকে এসব বন্দি  জানিয়েছে, আমরা মারা যাচ্ছি। আমরা পশুর মতো বাস করছি, তারা প্রতিদিন আমাদের ওপর অত্যাচার চালায়।

এত কিছুর পরও অনেক অভিবাসী পালাতে সক্ষম হয়। তারা লিবিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় উপকূল দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন ইউরোপীয় পেট্রোল জাহাজগুলো তাদেরকে তাড়া করে এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝ থেকে তাদেরকে আবার সেই লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ ধরনের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে অক্সফাম ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

২০১৭ সালে ইতালির পার্লামেন্ট নতুন এক আইন পাস করে। এ আইন অনুযায়ী অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশ ঠেকাতে ইতালির নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরের অপরপাশে লিবিয়ার কোস্টগার্ডদের সাহায্য করার অনুমতি পায়। ২০১৪ সালের পর থেকে এই রুটে ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাসীর মৃত্যু হয়েছে।