ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজার পীরগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রিরুদ্ধে এবার শিক্ষকদের ১২ দফা অভিযোগ

আ’লীগ নিজেরাই সরকারের পতন ঘটাবে: ড. রেজা কিবরিয়া

সারাদিন ডেস্ক::একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যতোটা সক্রিয় ছিল, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে ঠিক ততোটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। জোটের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ এনে পুনরায় একটি নির্বাচনের দাবি জানানো হলেও গত ১০ মাসেও তাদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচি দেখা যায়নি। উল্টো জোটের অন্যতম শরীক বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিয়েছেন।

সম্প্রতি হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেছে ঐক্যফ্রন্ট। বিশেষ করে আবরার হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে এই জোটের রাজনীতিতে নতুন করে জোয়ার এসেছে। জনসমাবেশ, গণসাক্ষর অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি তারা হাতে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে সরকারের পদত্যাগও চাইছেন।

ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা এবং দেশের সম-সাময়িক বেশকিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জোটের অন্যতম নেতা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদি ড. রেজা কিবরিয়া। বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সজিব খান

দীর্ঘদিন ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় ছিলো। হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছে। আমরা দেখলাম আপনার জাতীয় সরকার গঠনসহ তিনদফা দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিগুলো আপনারা সরকারের কাছ থেকে কিভাবে আদায় করবেন?

দেখুন ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় বিভিন্ন কারণে। আপনারা দেখতে পারছেন বড় একটা দলের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এভাবে সরকার চেষ্টা করছে বিরোধীদল দমন করতে। আবরারের মতো ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা করছে। কিন্তু নিষ্ক্রিয় বলা ঠিক না। আমরা আমাদের কাজ করছি। অনেকসময় আপনারা দেখতে পারছেন, অনেকসময় দেখতে পারছেন না। আমরা সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের এই দাবিগুলো জনগণের কাছে। এই দাবিগুলো সরকারের কাছে না। জনগণ এটা দিবে। আর আন্দোলন করা খুব কঠিন। তবে আমি নিশ্চিত যে একটা দল এই সরকারের পতন ঘটাবে এবং সেই দলের নাম হলো আওয়ামী লীগ। তারা নিজেরাই প্রত্যেক জায়গায় অদক্ষতা দেখিয়ে এমন একটা অবস্থায় দেশকে নিয়ে যাবে যে তারাই একদিন ঠিক করবে যা লুট করার হয়েছে, আমরা এখন যাই এবং সেইদিন খুব বেশি দূরে নেই।

এর আগে লুট করলেও এইভাবে কেউ দেশটাকে লুট করেনি। যেই লোকগুলোকে বলা হয় স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ। সেইলোকগুলোকে এখন মানুষ সম্মানের সঙ্গে দেখে। কারণ তুলনামূলকভাবে সেই লোকটিকে এখন আর অত খারাপ লাগে না। আমি উনাকে চিনতাম, এখন ইতিহাসে উনার পজিশনটা একটু উজ্জল হচ্ছে এদের তুলনায়। এখন যারা আছে তাদের তুলনায় মোটামুটি সব সরকার আইয়ুব খাঁনের সরকার পর্যন্ত যে সরকার আসছে মানে স্বাধীনতার পর তুলনামূলকভাবে এটাই সবচেয়ে ঘৃনিত সরকার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এদের নাম সর্বঘৃনিত সরকার হিসেবে থাকবে। আমি আশা করি এ ধরনের সরকার আর কোনোদিন আসবে না।

আপনারা সরকারকে পদত্যাগ করে, নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন।

আমরা নতুন নির্বাচন চাচ্ছি না। আমরা একটা নির্বাচন চাচ্ছি। কিন্তু আমাদের নির্বাচনের যেই সংজ্ঞা। আর এই সরকারের সংজ্ঞা এক নয়। আমি মনে করি নির্বাচন হলো- যেখানে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক একটা ভোট দিবে। ইউনিফর্ম পড়ে তিন হাজার বা দুই হাজার ভোট দিবে গভীর রাতে ওটাকে আমরা নির্বাচন বলি না। সুতরাং আমরা সুষ্ঠু একটা নির্বাচন চাই, এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই এবং এই পুরো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করে নতুন লোকদের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। যাদের সাহস আছে এবং দেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করার মতো মানসিকতা আছে। ওই ধরনের লোক দরকার।

আমরা একটা নির্বাচন চাই, কারণ এটা একটা অনির্বাচিত সরকার। একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাদের নিজেদের আত্মসম্মানবোধের বিরাট ঘাটতি, তাদের সাহসেরও একটা ঘাটতি আছে। জনগণ তাদের পেছনে নেই এবং এই কারণে তারা ব্যাংকিং খাত, কৃষি খাত শিক্ষা খাত কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে পারেনি।

ঐক্যফ্রন্টে মাঝে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন। তো ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা কেমন, কতোটা সংঘবদ্ধ?

অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে মতবিরোধ থাকে এবং যিনি ছিলেন উনি চলে যাওয়াতে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো অসন্তোষ নেই। কারণ উনি কোনো ভ্যালু অ্যাড করেননি। বরং উনি কিছু কথা বলেছেন যেগুলো আমাদের ঐক্যফ্রন্টের বাহিরে। বর্তমানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে যে দলগুলো এখন আছে আমাদের কোঅর্ডিনেশন খুব ভালো এবং আমাদের আন্ডার্স্ট্যার্ন্ডি খুব স্ট্রং। চারজন শক্তিশালী আর পাঁচজনের বিরোধীতার মধ্যে চারজন শক্তিশালীর ঐক্য বেশি মূল্যবান।

কিছুদিন আগেও গুঞ্জন ছিলো ঐক্যফ্রন্ট যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার আপনারা সরব হলেন। ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যত কী, এটা কি থাকবে?

আমার এবং আমাদের দলের বিশ্বাস যে ঐক্যফ্রন্ট থাকা দরকার। জনগণের কাছে জিজ্ঞাস করেন তারাও ‘ঐক্য’ চায়। সরকারি দল বিভিন্ন কায়দায় ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে এমন লোক আছে যারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করে। এগুলো চলে, এটা বাংলাদেশের রাজনীতি। তবে এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ঐক্যফ্রন্টের যারা মূল নেতা আছেন তারা ঐক্যটাকে ধরে রাখতে চায় এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। ঐক্য ভেঙে যাচ্ছে এ ধরনের গুজব ছড়াবে। একজন চলে গেলো। তো কি? এটা জাতীয় ঐক্য। এই অবৈধ সরকার দেশের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে না। এটা সবাই জানে। এখন এদেরকে সরানোর জন্য ঐক্য যে দরকার সেটার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপির বিশ দলীয় জোটের মধ্যে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কর্ণেল অলি আহমদ মুক্তমঞ্চ গড়ে তুলেছেন। উনি জোটের সবশেষ বৈঠকেও উপস্থিত হননি। এই বিষয়গুলো কিভাবে দেখছেন?

সব দলের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের মানুষকে ব্যবহার করছে ঐক্য ভাঙার জন্য, বিভিন্ন দলের। এমনকি যাদের ডানপন্থি মনে করেন তাদেরকেও ব্যবহার করছে।

আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন কর্ণেল অলি আহমেদকে সরকার ব্যবহার করছে?

না আমি উনার সম্মন্ধে কোনো কিছু বলবো না। আমি জানি না। আমি জানি যে উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, উনি দেশের জন্য উনার মতো কাজ করতে উনি মনে করেন এই লাইনটা ঠিক। আমরা যারা ঐক্যফ্রন্টে আছি, আমরা মনে করি যে একসঙ্গে থাকাটাই সঠিক কৌশল। উনি বিশ্বাস করেন উনাদের আন্দোলনে। কিন্তু উনারা বিএনপি যে সারাদেশে আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। এটা সম্মন্ধে আমার এবং সবার সন্দেহ আছে। তারা পারলে করুক। এটা ভালো। কিন্তু তাদের যেই যুক্তি, আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। তারা চেষ্টা করুক। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী একটা অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এটাই আমার বিশ্বাস।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভুল সিদ্ধান্তগুলো কী ছিলো যার কারণে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে যতোটা আশাবাদি ছিলো তার কিছুই হলো না?

একটা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা, আমার মনে হয় না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে নেতৃবৃন্ধ কি করেছেন এটা নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা কী পেয়েছি নির্বাচন থেকে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সারা দেশ-বিদেশ আন্তর্জাতিক মহল সবাই এখন জানে যে, আওয়ামী লীগ শুধু চোর না, তারা ভোট চোর। আওয়ামী লীগকে উন্মচিত করতে আমরা কেউ পারিনি । কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই যে তারা এটা করতে পেরেছেন। তারা তাদের মুখোশটা খুলে দেখিয়েছে যে তারা কী ধরনের অগণতান্ত্রিক, ভোটচোর দল। আমি মনে করি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

২০১৮ সালের এই ঘটনার পর দেশের যেকোনো মানুষকে আপনি জিজ্ঞাস করেন। তারা বলবে, হ্যাঁ এরা ভোট চোর। আওয়ামী লীগারই বলবে তারা ভোট চোর এবং আওয়ামী লীগের লোক আমার কাছ এসেছে তারা তাদের ভোট দিতে পারেনি। পুলিশ তাদের বের করে দিয়েছে। সুতরাং ঐক্যফ্রন্ট যে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এটা এতো সহজ না। অগণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থার মধ্যে, অগণতান্ত্রিক একটা সংস্কৃতি এবং একটা দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে, তাদের অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করার পক্ষে যে গভীর ষড়যন্ত্র এটাকে এতো সহজে উৎখাত করা সম্ভব না। এর জন্য আমাদের অনেককিছু করতে হবে ।

গত নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর নেতাদের বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিলো। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আপনারা আগামী নির্বাচনে তাদের সঙ্গে না রাখার বিষয়ে বিএনপিকে কোনো প্রস্তাব দেবেন কিনা?

জামায়াত ইসলামী নামে এখন আর কোনো বৈধ দল নেই। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা যেহেতু দেশের নাগরিক, তারা তো কোথাও না কোথাও যাবে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা, জামায়াত এ দেশে কখনো গঠনমূলক ভূমিকা রাখেনি। ভবিষ্যতেও তারা এটা করবে না এবং জামায়াতে যারা ছিলো তাদের নিজেদের চিন্তাধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের স্বাধীন দেশের যেই ভিত্তি, মৌলিক যে বিষয়গুলো। যেই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা লড়াই করেছি ওটাতে যদি তারা বিশ্বাস না করে। তারা এই দেশের জন্য কোনো ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে না। সুতরাং তাদের কোনো ভালো ভূমিকা হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

আর জামায়াত ইসলামীর নেতাদের নির্বাচনে প্রার্থীতা দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তখন ঘটনাগুলি খুব দ্রুত ঘটছিলো একদিন-দুদিনের মধ্যে। কারণ সরকার ইচ্ছা করে সময়টা এতো কমিয়েছিল যে, ১০ তারিখ প্রতীক দেওয়া, নির্বাচন ৩০ তারিখ। এটা যদি সময় নিয়ে হতো অবশ্যই আমরা আপত্তি করতাম এবং আমি বলছি, জামায়াত ইসলামীর এদেশের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই। জামায়াতের লোকদের আমি বলবো, আপনারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার যেই মৌলিক আদর্শ এগুলো বুঝতে চেষ্টা করেন, সম্মান করেন। তারপর অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আপনাদের অধিকার আছে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার।

আপনারা সরকারের পদত্যাগ চান। কিন্তু বর্তমান সরকারের মেয়াদের দশমাস পেরিয়ে গেলেও আপনারা জোরদার কোনো আন্দোলন করতে পারেননি। সরকার টিকে যাচ্ছে এবং গেছে। আপনারা কি সরকারের পুরো মেয়াদ পযর্ন্ত অপেক্ষা করবেন?

একজন মানুষ যখন ৩০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দেয় এবং সে দশ তলা পার হয়। তখন সে ভাবে, ভালোই তো চলছে, একটু ঠান্ডা লাগছে বাতাসের জন্য, কিন্তু ভালোই তো। এরকম এই সরকারটা। দশ মাসে ১০ তলা পার হয়ে গেছে কোনো অসুবিধা তো হচ্ছে না। কিন্তু এটা দীর্ঘস্থায়ী না এবং খুব তাড়াতাড়ি তাদের পতন দেখছি সরকারের গাফিলতির জন্যে। ব্যাংকিং খাত, অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে, শেয়ার মার্কেট ছোট্ট একটা সমস্যা এর তুলনায়। আমি সরকারকে বলবো, ব্যাংকিং খাতকে ধংস করা বুদ্ধিমানের কাজ না এবং যারা এখন এটা পরিচালনা করছে তাদের ব্যাংকিংক খাতকে রক্ষা করার দক্ষতা, ক্ষমতা ও মেধা নেই। সুতরাং এই সরকারের খুব তাড়াতাড়ি পতন ঘটবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের কোনো কাজের জন্য হয়তো না। সরকারের গাফিলতির জন্য এই সরকারের পতন হবে এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে। আমি অর্থনীতিবিদ হিসেবেও বলছি, এভাবে চলতে পারে না। এক কোটি ৮০ লাখ পরিবার আমাদের কৃষিখাতের উপর নির্ভরশীল। তাদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য নিয়ে, ধানের দাম নিয়ে সরকার যে তামাশা করেছে সেটা তারা বুঝেছে। এটার প্রতিফলন তারা ভোটের সময় দেখাবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে?

আমাদের অনেক দাবির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি। কারণ আমাদের একটা বড় দলের নেত্রী এবং একটা সম্মানী মানুষ, একজন বীর উত্তমের বিধবা স্ত্রী। যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি অনেক ধরনের বাজে কথা তারা বলে। সেই লোকগুলো এই ভদ্র মহিলাকে জেলে রেখেছেন, এই বয়সী একটা অসুস্থ মানুষকে। আমি মনে করি, এই দাবিটা ঐক্যফ্রন্টের না, বিএনপির না। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এটা জনগণের দাবি। এইসব প্যারল-ট্যারল বাজে কথা। ভুয়া একটা মামলায় উনাকে কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। উনার নিশর্ত মুক্তি আমি চাই। আমি মনে করি জনগণও সেটা চায়।

সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

এটা একটা তামাশা, মানুষকে দেখানোর জন্য। শুদ্ধ মানুষকে দিয়ে শুদ্ধি করা যায়। যারা এখন শুদ্ধি করছে তাদের গত দশ-এগারো বছরের কাজ যদি দেখেন, বুঝবেন যে এটা একটা তামাশা। চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণীর নেতাদের ধরা হলো। টেলিভিশনে দেখে বুঝেই যাচ্ছে তারা বলছে, আমাদেরকে কেনো। আমাদের অনেক উপরে যারা চুরি করছে তাদের নিয়ে কারো আপত্তি নেই। আমরা কি দোষ করেছি, আমরা ক্যাসিনো চালিয়েছি, আমরা একটু টর্চার সেল করেছি। সবাই তো করছে।

পুলিশ স্টেশনের পাশে পাঁচ বছর ধরে ক্যাসিনো চলছে এটা কী করে হয়। কেউ জানে না। এক্ষেত্রে সরকার দুইটা জিনিস বলতে পারে। প্রথমটা হলো- তারা এতোদিন বিষয়টা জানতো না, মাত্র জানতে পেরেছে এবং দ্বিতীয়টা হলো সরকারের সবাই এর সঙ্গে জড়িত। প্রথম ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তবে তোমরা বাবা পদত্যাগ করো, কালকেই পদত্যাগ করো। তোমরা অপদার্থ, অযোগ্য, ব্যর্থ। তোমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করো। ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই এরা কী করছিলো? এটা তারা সবাই জানতো। কিন্তু কিছু করেনি এটাও একটা অপরাধ। আর যদি আমরা জানতাম না, আমরা বুঝিনি, আমরা উদ্বোধন করেছি ক্যাসিনো, কিন্তু এটা যে ক্যাসিনো আমি জানতাম না- এ ধরনের কথা শোনা যায়। তো তোমাকে সরকার থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তুমি প্রকৃতপক্ষে অযোগ্য। জনগণও বুঝে আমরা জানতাম না- এটা কোনো বাহান না।

দুই নম্বর হলো- শেয়ার মার্কেট কেলেংকারিতে যারা জড়িত। যারা ব্যাংক লুট করেছে, যারা এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নাই। আর এই বেচারা দুইশ-তিনশ কোটি টাকা চুরি করেছে। সে অবাক যে, এই ছোটো অপরাধের জন্য যারা তার চেয়ে বড় অপরাধী তারা এসে তাকে ধরাচ্ছে। এটা একটা হইচই তৈরি করা। এটার কোনো ভ্যালু নাই। এই তামাশা আমি বিশ্বাস করবো যখন রাঘব-বোয়ালদের ধরা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটার মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি অনেকে বেড়েছে। আমাদের সবার প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি আরও বাড়ুক। তাদের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোকজন যদি ধরা পড়ে তখন আমরা সবাই বুঝবো যে, আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি সত্যি বাড়ছে এবং তারা তাদের পুরনো আদর্শে ফেরত যাচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে বিএনপি সেগুলোকে দেশবিরোধী চুক্তি আখ্যা দিয়েছে। আপনারা এ বিষয়ে কী মনে করছেন?

সংবিধানের ১৪৫ ধারায় দেখবেন যে কোনো চুক্তি অর্নিবাচিত সংসদ হলেও যারা সংসদে বসে তাদের রিভিউয়ের পর চুক্তিটা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখনো এটা হয়নি। আমি আশা করি, যেগুলো তারা জনগণ বিরোধী মনে করেন, তারা এটার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নেবেন।

সরকারের চুক্তিগুলো পত্রপত্রিকায় যা দেখেছি এগুলোতে কিছু সংযুক্তি থাকে। এগুলো না দেখে আসলে বুঝা যায় না। এগুলো আমাদের দেখাচ্ছে না। এটা একটা দুশ্চিন্তার কারণ। আমি একই পয়েন্ট ফেরত আসছি। একটা অনির্বাচিত, অবৈধ সরকার এই দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না এবং করছে না। আপনারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেখেন এই সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে একেবারে ব্যর্থ। আমাদের কোনো বন্ধু নাই যে আমাদের জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে শক্তিশালী একটা অবস্থান নিবে। আমরা যাদের বন্ধু বলি তারাও চুপ হয়ে আছে। আমি মনে করি, পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমার, ভারত বা যেকোনো দেশ বলেন এই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ এবং ব্যর্থতার কারণ হলো তাদের অদক্ষতা। আর এইসব চুক্তিগুলো অবশ্যই ভালভাবে দেখতে হবে, এগুলো নিয়ে স্ট্যাডি করতে হবে। ৫৪ নদীর মধ্যে একটা নদীর ব্যাপারে চুক্তি আছে যেটা কেউ মানে না। বাকি ৫৩ টাতে কোনো চুক্তিই নাই। যেটা আছে সেটাও কেউ মানে না। সুতরাং এটা খুব দুশ্চিন্তার কারণ। কিন্তু দোষটা কার। আমার দেশের স্বার্থের জন্য যাদের লড়াই করার কথা, তারা করেনি। কেনো করেনি, কেনো করছে না সেটাই হলো বড় প্রশ্ন।

আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা পরবর্তীতে যাতে না ঘটে এজন্য করণীয় কী? বুয়েটে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হলো। এটাই কি সমাধান?

আমাদের শিক্ষাখাতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একটা খুবই আপত্তিকর কথা বলেছেন যে, ‘এটা তো র্যা গিং, র্যা গিং সবসময় হয়।’ এখন আপনারা সবাই ভালো করে বুঝেছেন যে এটা র্যা গিং না। এটা একটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। দুঃখজনক হলো প্রত্যেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি দেখা দিয়েছে। দলীয়করণ- এটা শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় এবং মনে করে যে শিক্ষকরা, প্রোভোস্টরা, উপচার্য তাদের ছেলে-মেয়ের নিরাপত্তার দিকে কিছুটা খেয়াল করবে। কারণ পুলিশ সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারে না। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব হলো শিক্ষকদের ওপর এবং সেই দলীয় শিক্ষকরা যদি দলীয় প্রভাবে নিষ্কর্ম হয়, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। আমি মনে করি তাদের ওখানে থাকার কোনো অধিকার নাই। সেই ভিসির পরেরদিন পদত্যাগ করা উচিত। অবশ্য উনি নাকি জানতেন না এটাও তো একটা ত্রুটি, উনি কন্ট্রোল করতে পারেননি এ ধরনের একটা ঘটনা। আর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছিলো তারা কি এসব জানতেন না, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছে। তাদের কাজ কি শুধু বিরোধী দলকে দমন করা।

প্রত্যেক হলে নাকি এ ধরনের টর্চার সেল আছে। বাইরে থেকে কেউ আসলে তারা একটা সিট পাবে না যদি ছাত্রলীগের ছেলেদের সাথে আলোচনা না করে। এরকম আগেও হয়েছে। কিন্তু এটা লোকের কাছে অসহ্য, অগ্রহণযোগ্য। গণফোরাম ক্ষমতায় আসলে আমরা এটা ভাঙবো। হলগুলো থাকবে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে, কোনো ছাত্র নেতার নিয়ন্ত্রণে না। ছাত্রনেতার অধীনে কোনো হল থাকবে না।

আর আবরার হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তারা নিশ্চয়ই কারো প্রভাবে, কারো আদেশে এটা করেছে। তারা কারা, পৃষ্ঠপোষকরা কে। একজন বলেছেন যে, উপরের হুকুম অমান্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরাই শিকার হয়ে যাবো। আমার কথা হচ্ছে কারা এই নির্দেশ দিলো তাদেরকে বের করা হোক। আর ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ আসল যেই প্রভাবটা পড়ছে সেটা ঠিক করতে হবে। আপনি ছায়াটা নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু আসল সমস্যাটা যে দাঁড়িয়ে আছে আপনি সেটার কিছু করছেন না। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা আমি মনে করি এটা কোনো উপকারী পদক্ষেপ না। আসল সমস্যার সমাধান হলে ছাত্ররাজনীতি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

এ বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলবো না। আমরা আগামী ২২ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জনসমাবেশের ডাক দিয়েছি সেখানে ড. কামাল হোসেন পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। আর আমরা একটা গণস্বাক্ষর অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছি। আমার আব্বা মারা যাওয়ার সময় এটা করেছিলাম। আবরার হত্যার প্রতিবাদে আমরা সেরকম একটা গণসাক্ষর অভিযান আজ থেকে দেশে-বিদেশে শুরু করছি। দেড় মিটার বা আড়াই মিটার কাপরের ওপর সবাই সাক্ষর করবে লাল কালি দিয়ে এবং কথাটা হবে ‘আমরা আবরার হত্যার বিচার করাবো, এটাই আমাদের শপথ’। আমি আমার বাবার হত্যায় বিচার পাইনি, আমরা এই ছেলেটার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি মনে করি এজন্য আমাদের সবার একটা শপথ নেওয়া দরকার। আমরা এটা নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে চাচ্ছি। গণফোরামের ওয়েবসাইটে এর ফরমেট এবং বিস্তারিত দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ডিসেম্বরে আমরা ঢাকায় এটার বড় ধরনের একটা প্রদর্শনী করবো।

এই হত্যাকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আইনমন্ত্রীও বলেছেন কাউকে ক্ষমা করা হবে না। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। তারপরেও আপনারা এ ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছেন। আপনাদের কি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই?

আস্থা নেই। আস্থা থাকার কোনো কারণও নেই। কারণ হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার চেয়ে বেশি তদন্তকারীদের রিপোর্টের ওপরে বিচারটা নির্ভর করে। বিচারকরা কাজ করে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী। একটা মিথ্যা এবং সাজানো তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার পর বিচারকদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। আপনি বিশ্বজিৎ হত্যার ব্যাপারে কি খুব বেশি আস্থা রাখতে পেরেছেন। এই সরকারের নীতিটা হলো এই হত্যা নিয়ে কিছুদিন হইচই হবে, কয়েকদিন পর আরও একটা হত্যা হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সাগর-রুনি হত্যা, রিফাত হত্যা, নুসরাত হত্যার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সবাই চুপ হয়ে যায়। কয়েকবছর চলে যায় তারপর যারা জড়িত ছিলো তারা পার পেয়ে যায়। আপনাকে দেখতে হবে এরা (সরকার) আগে কী করেছে, তারপর এদেরকে যাচাই করবেন। তাদের কথায় আর কাজে কোনো মিল নেই। সুতরাং এই সরকারের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। এই যে উনিশ বিশজন আসামী এরা কেউ বিচারাধীন হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান

আ’লীগ নিজেরাই সরকারের পতন ঘটাবে: ড. রেজা কিবরিয়া

আপডেট টাইম ০৩:১৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

সারাদিন ডেস্ক::একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যতোটা সক্রিয় ছিল, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে ঠিক ততোটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। জোটের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ এনে পুনরায় একটি নির্বাচনের দাবি জানানো হলেও গত ১০ মাসেও তাদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচি দেখা যায়নি। উল্টো জোটের অন্যতম শরীক বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিয়েছেন।

সম্প্রতি হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেছে ঐক্যফ্রন্ট। বিশেষ করে আবরার হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে এই জোটের রাজনীতিতে নতুন করে জোয়ার এসেছে। জনসমাবেশ, গণসাক্ষর অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি তারা হাতে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে সরকারের পদত্যাগও চাইছেন।

ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা এবং দেশের সম-সাময়িক বেশকিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জোটের অন্যতম নেতা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদি ড. রেজা কিবরিয়া। বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সজিব খান

দীর্ঘদিন ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় ছিলো। হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছে। আমরা দেখলাম আপনার জাতীয় সরকার গঠনসহ তিনদফা দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিগুলো আপনারা সরকারের কাছ থেকে কিভাবে আদায় করবেন?

দেখুন ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় বিভিন্ন কারণে। আপনারা দেখতে পারছেন বড় একটা দলের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এভাবে সরকার চেষ্টা করছে বিরোধীদল দমন করতে। আবরারের মতো ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা করছে। কিন্তু নিষ্ক্রিয় বলা ঠিক না। আমরা আমাদের কাজ করছি। অনেকসময় আপনারা দেখতে পারছেন, অনেকসময় দেখতে পারছেন না। আমরা সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের এই দাবিগুলো জনগণের কাছে। এই দাবিগুলো সরকারের কাছে না। জনগণ এটা দিবে। আর আন্দোলন করা খুব কঠিন। তবে আমি নিশ্চিত যে একটা দল এই সরকারের পতন ঘটাবে এবং সেই দলের নাম হলো আওয়ামী লীগ। তারা নিজেরাই প্রত্যেক জায়গায় অদক্ষতা দেখিয়ে এমন একটা অবস্থায় দেশকে নিয়ে যাবে যে তারাই একদিন ঠিক করবে যা লুট করার হয়েছে, আমরা এখন যাই এবং সেইদিন খুব বেশি দূরে নেই।

এর আগে লুট করলেও এইভাবে কেউ দেশটাকে লুট করেনি। যেই লোকগুলোকে বলা হয় স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ। সেইলোকগুলোকে এখন মানুষ সম্মানের সঙ্গে দেখে। কারণ তুলনামূলকভাবে সেই লোকটিকে এখন আর অত খারাপ লাগে না। আমি উনাকে চিনতাম, এখন ইতিহাসে উনার পজিশনটা একটু উজ্জল হচ্ছে এদের তুলনায়। এখন যারা আছে তাদের তুলনায় মোটামুটি সব সরকার আইয়ুব খাঁনের সরকার পর্যন্ত যে সরকার আসছে মানে স্বাধীনতার পর তুলনামূলকভাবে এটাই সবচেয়ে ঘৃনিত সরকার এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এদের নাম সর্বঘৃনিত সরকার হিসেবে থাকবে। আমি আশা করি এ ধরনের সরকার আর কোনোদিন আসবে না।

আপনারা সরকারকে পদত্যাগ করে, নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন।

আমরা নতুন নির্বাচন চাচ্ছি না। আমরা একটা নির্বাচন চাচ্ছি। কিন্তু আমাদের নির্বাচনের যেই সংজ্ঞা। আর এই সরকারের সংজ্ঞা এক নয়। আমি মনে করি নির্বাচন হলো- যেখানে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক একটা ভোট দিবে। ইউনিফর্ম পড়ে তিন হাজার বা দুই হাজার ভোট দিবে গভীর রাতে ওটাকে আমরা নির্বাচন বলি না। সুতরাং আমরা সুষ্ঠু একটা নির্বাচন চাই, এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চাই এবং এই পুরো নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করে নতুন লোকদের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। যাদের সাহস আছে এবং দেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করার মতো মানসিকতা আছে। ওই ধরনের লোক দরকার।

আমরা একটা নির্বাচন চাই, কারণ এটা একটা অনির্বাচিত সরকার। একটা অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকার ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাদের নিজেদের আত্মসম্মানবোধের বিরাট ঘাটতি, তাদের সাহসেরও একটা ঘাটতি আছে। জনগণ তাদের পেছনে নেই এবং এই কারণে তারা ব্যাংকিং খাত, কৃষি খাত শিক্ষা খাত কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে পারেনি।

ঐক্যফ্রন্টে মাঝে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন। তো ঐক্যফ্রন্টের বর্তমান অবস্থা কেমন, কতোটা সংঘবদ্ধ?

অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে মতবিরোধ থাকে এবং যিনি ছিলেন উনি চলে যাওয়াতে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো অসন্তোষ নেই। কারণ উনি কোনো ভ্যালু অ্যাড করেননি। বরং উনি কিছু কথা বলেছেন যেগুলো আমাদের ঐক্যফ্রন্টের বাহিরে। বর্তমানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে যে দলগুলো এখন আছে আমাদের কোঅর্ডিনেশন খুব ভালো এবং আমাদের আন্ডার্স্ট্যার্ন্ডি খুব স্ট্রং। চারজন শক্তিশালী আর পাঁচজনের বিরোধীতার মধ্যে চারজন শক্তিশালীর ঐক্য বেশি মূল্যবান।

কিছুদিন আগেও গুঞ্জন ছিলো ঐক্যফ্রন্ট যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার আপনারা সরব হলেন। ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যত কী, এটা কি থাকবে?

আমার এবং আমাদের দলের বিশ্বাস যে ঐক্যফ্রন্ট থাকা দরকার। জনগণের কাছে জিজ্ঞাস করেন তারাও ‘ঐক্য’ চায়। সরকারি দল বিভিন্ন কায়দায় ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন দলের মধ্যে এমন লোক আছে যারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করে। এগুলো চলে, এটা বাংলাদেশের রাজনীতি। তবে এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ঐক্যফ্রন্টের যারা মূল নেতা আছেন তারা ঐক্যটাকে ধরে রাখতে চায় এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। ঐক্য ভেঙে যাচ্ছে এ ধরনের গুজব ছড়াবে। একজন চলে গেলো। তো কি? এটা জাতীয় ঐক্য। এই অবৈধ সরকার দেশের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করছে না। এটা সবাই জানে। এখন এদেরকে সরানোর জন্য ঐক্য যে দরকার সেটার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বিএনপির বিশ দলীয় জোটের মধ্যে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কর্ণেল অলি আহমদ মুক্তমঞ্চ গড়ে তুলেছেন। উনি জোটের সবশেষ বৈঠকেও উপস্থিত হননি। এই বিষয়গুলো কিভাবে দেখছেন?

সব দলের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের মানুষকে ব্যবহার করছে ঐক্য ভাঙার জন্য, বিভিন্ন দলের। এমনকি যাদের ডানপন্থি মনে করেন তাদেরকেও ব্যবহার করছে।

আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন কর্ণেল অলি আহমেদকে সরকার ব্যবহার করছে?

না আমি উনার সম্মন্ধে কোনো কিছু বলবো না। আমি জানি না। আমি জানি যে উনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, উনি দেশের জন্য উনার মতো কাজ করতে উনি মনে করেন এই লাইনটা ঠিক। আমরা যারা ঐক্যফ্রন্টে আছি, আমরা মনে করি যে একসঙ্গে থাকাটাই সঠিক কৌশল। উনি বিশ্বাস করেন উনাদের আন্দোলনে। কিন্তু উনারা বিএনপি যে সারাদেশে আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। এটা সম্মন্ধে আমার এবং সবার সন্দেহ আছে। তারা পারলে করুক। এটা ভালো। কিন্তু তাদের যেই যুক্তি, আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। তারা চেষ্টা করুক। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী একটা অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এটাই আমার বিশ্বাস।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভুল সিদ্ধান্তগুলো কী ছিলো যার কারণে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে যতোটা আশাবাদি ছিলো তার কিছুই হলো না?

একটা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা, আমার মনে হয় না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে নেতৃবৃন্ধ কি করেছেন এটা নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা কী পেয়েছি নির্বাচন থেকে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সারা দেশ-বিদেশ আন্তর্জাতিক মহল সবাই এখন জানে যে, আওয়ামী লীগ শুধু চোর না, তারা ভোট চোর। আওয়ামী লীগকে উন্মচিত করতে আমরা কেউ পারিনি । কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই যে তারা এটা করতে পেরেছেন। তারা তাদের মুখোশটা খুলে দেখিয়েছে যে তারা কী ধরনের অগণতান্ত্রিক, ভোটচোর দল। আমি মনে করি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

২০১৮ সালের এই ঘটনার পর দেশের যেকোনো মানুষকে আপনি জিজ্ঞাস করেন। তারা বলবে, হ্যাঁ এরা ভোট চোর। আওয়ামী লীগারই বলবে তারা ভোট চোর এবং আওয়ামী লীগের লোক আমার কাছ এসেছে তারা তাদের ভোট দিতে পারেনি। পুলিশ তাদের বের করে দিয়েছে। সুতরাং ঐক্যফ্রন্ট যে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এটা এতো সহজ না। অগণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থার মধ্যে, অগণতান্ত্রিক একটা সংস্কৃতি এবং একটা দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে, তাদের অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করার পক্ষে যে গভীর ষড়যন্ত্র এটাকে এতো সহজে উৎখাত করা সম্ভব না। এর জন্য আমাদের অনেককিছু করতে হবে ।

গত নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর নেতাদের বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিলো। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আপনারা আগামী নির্বাচনে তাদের সঙ্গে না রাখার বিষয়ে বিএনপিকে কোনো প্রস্তাব দেবেন কিনা?

জামায়াত ইসলামী নামে এখন আর কোনো বৈধ দল নেই। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা যেহেতু দেশের নাগরিক, তারা তো কোথাও না কোথাও যাবে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা, জামায়াত এ দেশে কখনো গঠনমূলক ভূমিকা রাখেনি। ভবিষ্যতেও তারা এটা করবে না এবং জামায়াতে যারা ছিলো তাদের নিজেদের চিন্তাধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের স্বাধীন দেশের যেই ভিত্তি, মৌলিক যে বিষয়গুলো। যেই আদর্শের ভিত্তিতে আমরা লড়াই করেছি ওটাতে যদি তারা বিশ্বাস না করে। তারা এই দেশের জন্য কোনো ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে না। সুতরাং তাদের কোনো ভালো ভূমিকা হতে পারে বলে আমি মনে করি না।

আর জামায়াত ইসলামীর নেতাদের নির্বাচনে প্রার্থীতা দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক। তখন ঘটনাগুলি খুব দ্রুত ঘটছিলো একদিন-দুদিনের মধ্যে। কারণ সরকার ইচ্ছা করে সময়টা এতো কমিয়েছিল যে, ১০ তারিখ প্রতীক দেওয়া, নির্বাচন ৩০ তারিখ। এটা যদি সময় নিয়ে হতো অবশ্যই আমরা আপত্তি করতাম এবং আমি বলছি, জামায়াত ইসলামীর এদেশের রাজনীতিতে কোনো স্থান নেই। জামায়াতের লোকদের আমি বলবো, আপনারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার যেই মৌলিক আদর্শ এগুলো বুঝতে চেষ্টা করেন, সম্মান করেন। তারপর অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আপনাদের অধিকার আছে রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার।

আপনারা সরকারের পদত্যাগ চান। কিন্তু বর্তমান সরকারের মেয়াদের দশমাস পেরিয়ে গেলেও আপনারা জোরদার কোনো আন্দোলন করতে পারেননি। সরকার টিকে যাচ্ছে এবং গেছে। আপনারা কি সরকারের পুরো মেয়াদ পযর্ন্ত অপেক্ষা করবেন?

একজন মানুষ যখন ৩০ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ দেয় এবং সে দশ তলা পার হয়। তখন সে ভাবে, ভালোই তো চলছে, একটু ঠান্ডা লাগছে বাতাসের জন্য, কিন্তু ভালোই তো। এরকম এই সরকারটা। দশ মাসে ১০ তলা পার হয়ে গেছে কোনো অসুবিধা তো হচ্ছে না। কিন্তু এটা দীর্ঘস্থায়ী না এবং খুব তাড়াতাড়ি তাদের পতন দেখছি সরকারের গাফিলতির জন্যে। ব্যাংকিং খাত, অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে, শেয়ার মার্কেট ছোট্ট একটা সমস্যা এর তুলনায়। আমি সরকারকে বলবো, ব্যাংকিং খাতকে ধংস করা বুদ্ধিমানের কাজ না এবং যারা এখন এটা পরিচালনা করছে তাদের ব্যাংকিংক খাতকে রক্ষা করার দক্ষতা, ক্ষমতা ও মেধা নেই। সুতরাং এই সরকারের খুব তাড়াতাড়ি পতন ঘটবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের কোনো কাজের জন্য হয়তো না। সরকারের গাফিলতির জন্য এই সরকারের পতন হবে এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি হবে। আমি অর্থনীতিবিদ হিসেবেও বলছি, এভাবে চলতে পারে না। এক কোটি ৮০ লাখ পরিবার আমাদের কৃষিখাতের উপর নির্ভরশীল। তাদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য নিয়ে, ধানের দাম নিয়ে সরকার যে তামাশা করেছে সেটা তারা বুঝেছে। এটার প্রতিফলন তারা ভোটের সময় দেখাবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে?

আমাদের অনেক দাবির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি। কারণ আমাদের একটা বড় দলের নেত্রী এবং একটা সম্মানী মানুষ, একজন বীর উত্তমের বিধবা স্ত্রী। যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি অনেক ধরনের বাজে কথা তারা বলে। সেই লোকগুলো এই ভদ্র মহিলাকে জেলে রেখেছেন, এই বয়সী একটা অসুস্থ মানুষকে। আমি মনে করি, এই দাবিটা ঐক্যফ্রন্টের না, বিএনপির না। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এটা জনগণের দাবি। এইসব প্যারল-ট্যারল বাজে কথা। ভুয়া একটা মামলায় উনাকে কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। উনার নিশর্ত মুক্তি আমি চাই। আমি মনে করি জনগণও সেটা চায়।

সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

এটা একটা তামাশা, মানুষকে দেখানোর জন্য। শুদ্ধ মানুষকে দিয়ে শুদ্ধি করা যায়। যারা এখন শুদ্ধি করছে তাদের গত দশ-এগারো বছরের কাজ যদি দেখেন, বুঝবেন যে এটা একটা তামাশা। চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণীর নেতাদের ধরা হলো। টেলিভিশনে দেখে বুঝেই যাচ্ছে তারা বলছে, আমাদেরকে কেনো। আমাদের অনেক উপরে যারা চুরি করছে তাদের নিয়ে কারো আপত্তি নেই। আমরা কি দোষ করেছি, আমরা ক্যাসিনো চালিয়েছি, আমরা একটু টর্চার সেল করেছি। সবাই তো করছে।

পুলিশ স্টেশনের পাশে পাঁচ বছর ধরে ক্যাসিনো চলছে এটা কী করে হয়। কেউ জানে না। এক্ষেত্রে সরকার দুইটা জিনিস বলতে পারে। প্রথমটা হলো- তারা এতোদিন বিষয়টা জানতো না, মাত্র জানতে পেরেছে এবং দ্বিতীয়টা হলো সরকারের সবাই এর সঙ্গে জড়িত। প্রথম ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তবে তোমরা বাবা পদত্যাগ করো, কালকেই পদত্যাগ করো। তোমরা অপদার্থ, অযোগ্য, ব্যর্থ। তোমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করো। ডিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই এরা কী করছিলো? এটা তারা সবাই জানতো। কিন্তু কিছু করেনি এটাও একটা অপরাধ। আর যদি আমরা জানতাম না, আমরা বুঝিনি, আমরা উদ্বোধন করেছি ক্যাসিনো, কিন্তু এটা যে ক্যাসিনো আমি জানতাম না- এ ধরনের কথা শোনা যায়। তো তোমাকে সরকার থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তুমি প্রকৃতপক্ষে অযোগ্য। জনগণও বুঝে আমরা জানতাম না- এটা কোনো বাহান না।

দুই নম্বর হলো- শেয়ার মার্কেট কেলেংকারিতে যারা জড়িত। যারা ব্যাংক লুট করেছে, যারা এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নাই। আর এই বেচারা দুইশ-তিনশ কোটি টাকা চুরি করেছে। সে অবাক যে, এই ছোটো অপরাধের জন্য যারা তার চেয়ে বড় অপরাধী তারা এসে তাকে ধরাচ্ছে। এটা একটা হইচই তৈরি করা। এটার কোনো ভ্যালু নাই। এই তামাশা আমি বিশ্বাস করবো যখন রাঘব-বোয়ালদের ধরা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটার মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি অনেকে বেড়েছে। আমাদের সবার প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি আরও বাড়ুক। তাদের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোকজন যদি ধরা পড়ে তখন আমরা সবাই বুঝবো যে, আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি সত্যি বাড়ছে এবং তারা তাদের পুরনো আদর্শে ফেরত যাচ্ছে।

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে বিএনপি সেগুলোকে দেশবিরোধী চুক্তি আখ্যা দিয়েছে। আপনারা এ বিষয়ে কী মনে করছেন?

সংবিধানের ১৪৫ ধারায় দেখবেন যে কোনো চুক্তি অর্নিবাচিত সংসদ হলেও যারা সংসদে বসে তাদের রিভিউয়ের পর চুক্তিটা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখনো এটা হয়নি। আমি আশা করি, যেগুলো তারা জনগণ বিরোধী মনে করেন, তারা এটার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নেবেন।

সরকারের চুক্তিগুলো পত্রপত্রিকায় যা দেখেছি এগুলোতে কিছু সংযুক্তি থাকে। এগুলো না দেখে আসলে বুঝা যায় না। এগুলো আমাদের দেখাচ্ছে না। এটা একটা দুশ্চিন্তার কারণ। আমি একই পয়েন্ট ফেরত আসছি। একটা অনির্বাচিত, অবৈধ সরকার এই দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না এবং করছে না। আপনারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেখেন এই সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে একেবারে ব্যর্থ। আমাদের কোনো বন্ধু নাই যে আমাদের জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে শক্তিশালী একটা অবস্থান নিবে। আমরা যাদের বন্ধু বলি তারাও চুপ হয়ে আছে। আমি মনে করি, পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমার, ভারত বা যেকোনো দেশ বলেন এই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ এবং ব্যর্থতার কারণ হলো তাদের অদক্ষতা। আর এইসব চুক্তিগুলো অবশ্যই ভালভাবে দেখতে হবে, এগুলো নিয়ে স্ট্যাডি করতে হবে। ৫৪ নদীর মধ্যে একটা নদীর ব্যাপারে চুক্তি আছে যেটা কেউ মানে না। বাকি ৫৩ টাতে কোনো চুক্তিই নাই। যেটা আছে সেটাও কেউ মানে না। সুতরাং এটা খুব দুশ্চিন্তার কারণ। কিন্তু দোষটা কার। আমার দেশের স্বার্থের জন্য যাদের লড়াই করার কথা, তারা করেনি। কেনো করেনি, কেনো করছে না সেটাই হলো বড় প্রশ্ন।

আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা পরবর্তীতে যাতে না ঘটে এজন্য করণীয় কী? বুয়েটে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হলো। এটাই কি সমাধান?

আমাদের শিক্ষাখাতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একটা খুবই আপত্তিকর কথা বলেছেন যে, ‘এটা তো র্যা গিং, র্যা গিং সবসময় হয়।’ এখন আপনারা সবাই ভালো করে বুঝেছেন যে এটা র্যা গিং না। এটা একটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। দুঃখজনক হলো প্রত্যেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি দেখা দিয়েছে। দলীয়করণ- এটা শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় এবং মনে করে যে শিক্ষকরা, প্রোভোস্টরা, উপচার্য তাদের ছেলে-মেয়ের নিরাপত্তার দিকে কিছুটা খেয়াল করবে। কারণ পুলিশ সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারে না। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব হলো শিক্ষকদের ওপর এবং সেই দলীয় শিক্ষকরা যদি দলীয় প্রভাবে নিষ্কর্ম হয়, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। আমি মনে করি তাদের ওখানে থাকার কোনো অধিকার নাই। সেই ভিসির পরেরদিন পদত্যাগ করা উচিত। অবশ্য উনি নাকি জানতেন না এটাও তো একটা ত্রুটি, উনি কন্ট্রোল করতে পারেননি এ ধরনের একটা ঘটনা। আর আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছিলো তারা কি এসব জানতেন না, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছে। তাদের কাজ কি শুধু বিরোধী দলকে দমন করা।

প্রত্যেক হলে নাকি এ ধরনের টর্চার সেল আছে। বাইরে থেকে কেউ আসলে তারা একটা সিট পাবে না যদি ছাত্রলীগের ছেলেদের সাথে আলোচনা না করে। এরকম আগেও হয়েছে। কিন্তু এটা লোকের কাছে অসহ্য, অগ্রহণযোগ্য। গণফোরাম ক্ষমতায় আসলে আমরা এটা ভাঙবো। হলগুলো থাকবে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে, কোনো ছাত্র নেতার নিয়ন্ত্রণে না। ছাত্রনেতার অধীনে কোনো হল থাকবে না।

আর আবরার হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তারা নিশ্চয়ই কারো প্রভাবে, কারো আদেশে এটা করেছে। তারা কারা, পৃষ্ঠপোষকরা কে। একজন বলেছেন যে, উপরের হুকুম অমান্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরাই শিকার হয়ে যাবো। আমার কথা হচ্ছে কারা এই নির্দেশ দিলো তাদেরকে বের করা হোক। আর ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ আসল যেই প্রভাবটা পড়ছে সেটা ঠিক করতে হবে। আপনি ছায়াটা নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু আসল সমস্যাটা যে দাঁড়িয়ে আছে আপনি সেটার কিছু করছেন না। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা আমি মনে করি এটা কোনো উপকারী পদক্ষেপ না। আসল সমস্যার সমাধান হলে ছাত্ররাজনীতি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

এ বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলবো না। আমরা আগামী ২২ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জনসমাবেশের ডাক দিয়েছি সেখানে ড. কামাল হোসেন পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। আর আমরা একটা গণস্বাক্ষর অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছি। আমার আব্বা মারা যাওয়ার সময় এটা করেছিলাম। আবরার হত্যার প্রতিবাদে আমরা সেরকম একটা গণসাক্ষর অভিযান আজ থেকে দেশে-বিদেশে শুরু করছি। দেড় মিটার বা আড়াই মিটার কাপরের ওপর সবাই সাক্ষর করবে লাল কালি দিয়ে এবং কথাটা হবে ‘আমরা আবরার হত্যার বিচার করাবো, এটাই আমাদের শপথ’। আমি আমার বাবার হত্যায় বিচার পাইনি, আমরা এই ছেলেটার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি মনে করি এজন্য আমাদের সবার একটা শপথ নেওয়া দরকার। আমরা এটা নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে চাচ্ছি। গণফোরামের ওয়েবসাইটে এর ফরমেট এবং বিস্তারিত দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ডিসেম্বরে আমরা ঢাকায় এটার বড় ধরনের একটা প্রদর্শনী করবো।

এই হত্যাকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আইনমন্ত্রীও বলেছেন কাউকে ক্ষমা করা হবে না। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। তারপরেও আপনারা এ ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছেন। আপনাদের কি বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা নেই?

আস্থা নেই। আস্থা থাকার কোনো কারণও নেই। কারণ হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার চেয়ে বেশি তদন্তকারীদের রিপোর্টের ওপরে বিচারটা নির্ভর করে। বিচারকরা কাজ করে তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী। একটা মিথ্যা এবং সাজানো তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার পর বিচারকদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। আপনি বিশ্বজিৎ হত্যার ব্যাপারে কি খুব বেশি আস্থা রাখতে পেরেছেন। এই সরকারের নীতিটা হলো এই হত্যা নিয়ে কিছুদিন হইচই হবে, কয়েকদিন পর আরও একটা হত্যা হবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সাগর-রুনি হত্যা, রিফাত হত্যা, নুসরাত হত্যার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। সবাই চুপ হয়ে যায়। কয়েকবছর চলে যায় তারপর যারা জড়িত ছিলো তারা পার পেয়ে যায়। আপনাকে দেখতে হবে এরা (সরকার) আগে কী করেছে, তারপর এদেরকে যাচাই করবেন। তাদের কথায় আর কাজে কোনো মিল নেই। সুতরাং এই সরকারের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। এই যে উনিশ বিশজন আসামী এরা কেউ বিচারাধীন হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।