টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর গুছিয়ে নিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপরই ভোটের আগে দেওয়া দূর্নীতি-অনিয়ম প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মন দিয়েছেন।ঘরের জঞ্জাল-আবর্জনা পরিস্কারের মাধ্যমেই দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ক্ষমতার শাখা প্রশাখায় বিচরণ করে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধভাবে সম্পদশালী হওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং দলের নিজস্ব অনুসন্ধান সেলের মাধ্যমে দূর্নীতিবাজ নেতাদের একটি তালিকা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। দলের বিতর্কিত এইসব নেতা বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশের পাশাপাশি তাদের গণভবনে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে যাদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, তাদেরকে আপাতত গণভবনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
অনিয়ম ও নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অব্যাহতি আগেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশাধিকার আরোপ করা হয়েছিল। এবার একই কারণে যুবলীগের বেশ কজন শীর্ষনেতার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সুর্নির্দিষ্ট দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ দু্’জন সংসদ সদস্যসহ এমপিসহ স্থানীয় সরকারের অন্তত ১৫ জন জনপ্রতিনিধির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন যে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, তাদেরও গণভবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে গণভবনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও গণভবনে প্রবেশে নিষিদ্ধের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপারে যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তার প্রমাণ হলো বিতর্কিতদের গণভবনে প্রবেশ করতে না দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, গণভবনে যদি এসব বিতর্কিতরা প্রবেশ করে তাহলে একটি ভুল বার্তা যেতে পারে এবং গণভবনে প্রবেশকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্ন মহলে তাদের অভিযোগের ব্যাপারে দেন দরবার করতে পারেন বলেই এরকম কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র আরও বলছে যে, যারা অভিযুক্ত হয়েছে শুধু তারাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে যারা অপকর্ম করেছে তাদের সুনির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। এই তালিকার মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আমলে নেওয়ার যোগ্য এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণও রয়েছে, সেগুলো যাচাই বাছাইয়ের পর তাঁদেরকেও গণভবনে নিষিদ্ধ করা হবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী এসমস্ত বিতর্কিতদের গণভবনে প্রবেশ করতে দিতে রাজী নন। সেজন্যই তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে, গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিতে চান। বার্তাটি হলো যারা বিতর্কিত, যারা অভিযুক্ত, যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। তাঁদেরকে কোনোরকম আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন যে, অতীতেও বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে কিন্তু সেই অভিযোগগুলোকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো অভিযোগ আড়াল করতে চান না। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আছে, তিনি যে দলেরই হোক না কেন- তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুর্নীতিকে কোনোরকম আশ্রয় প্রশ্রয় দেন না সে ব্যাপারে তিনি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাঁদেরকে শুধু আইনের মাধ্যমেই নয়, দলে এবং সামাজিকভাবে বয়কট করার নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এই নীতি থেকে সরে আসার কোনো কারণ নেই।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রথম শুদ্ধি অভিযানের কথা বলেন এবং ওইদিনই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেন। এরপর পরই তিনি যুবলীগের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন এবং যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের আগেই তাঁদেরকে গণভবনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
একটি সূত্র বলছে যে, গণভবনে নিষিদ্ধের তালিকায় এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন এবং এই তালিকা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।