ঢাকা ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বেচ্ছায়মৃত্যুর অনুমতি দিয়েছে ভারত

মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক:: নাগরিকদের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু (প্যাসিভ ইউথানেসিয়া) চাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল শুক্রবার এক আদেশে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কোনো ব্যক্তির লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যু ত্বরান্বিত করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা যাবে। জীবনসংকটে থাকা রোগীর ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে করা লিখিত আবেদনে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি জানাতে পারবেন, তিনি বেঁচে থাকতে চান নাকি মরে যেতে চান। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা বলেছেন, মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তির লিখিত ইচ্ছা আদালতের অনুমোদনক্রমে কার্যকর করা যাবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কীভাবে কার্যকর হবে—তার বিস্তারিত নির্দেশনাও শুক্রবারের রায়ে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তবে কোনো রোগীকে জোর করে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করানো হয়েছে কি না, তা কীভাবে আদালত যাচাই করবেন, সেটি স্পষ্ট হয়নি আদালতের রায়ে।

আদালত আরও বলেছেন, গুরুতর অসুস্থ ও জীবনসংকটে থাকা ব্যক্তির আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা আদালতে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করতে পারবেন। এরপর আদালতের নিয়োগ করা চিকিৎসকের একটি দল সিদ্ধান্ত নেবে, এর আদৌ প্রয়োজন আছে কি না।

পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কি?
জীবনসংকটে থাকা একজন রোগীর স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকর করা যায় দুটি উপায়ে। একটি হলো, রোগীকে জীবিত রাখতে যেসব জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা থেকে বিরত থাকবেন চিকিৎসকেরা। অন্যটি হলো, যে উপায়ে রোগী জীবিত আছেন, তা বন্ধ করে দেওয়া।
এ ক্ষেত্রে জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া যাবে। নল দিয়ে কৃত্রিমভাবে খাবার সরবরাহ করার প্রক্রিয়া বন্ধ করা যেতে পারে। আবার পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকরের জন্য জীবন রক্ষাকারী অস্ত্রোপচার না করা ও ওষুধ না দেওয়াও একটি পদ্ধতি।

স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আদালতে করা এই আবেদনে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সময় আবেদনকারীরা বলেছিলেন, যদি কোনো ব্যক্তি জীবনসংকটে থাকেন, তবে মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার তাঁর আছে।

আবেদনকারীদের প্রধান বিপুল মুদগাল বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী রায়। কারণ এটি এমন সময়ে ঘোষিত হয়েছে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষকে কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এটি করার জন্য হাসপাতালগুলো অনেক অর্থও কামাই করে।’

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের অক্টোবরে এক পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। তবে আদালত বলেছিলেন, কোনো রোগী যদি অত্যন্ত সংকটাপন্ন বা অপরিবর্তনীয় কোমায় চলে যান, সে ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সনদ পাওয়া সাপেক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

গত জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের এক নিঃসন্তান দম্পতি স্বেচ্ছামৃত্যুর (ইউথানেসিয়া) অনুমতি চেয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এ নিয়ে তখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ তোলপাড় হয়। ওই দম্পতি হলেন নারায়ণ লাবেতে (৮৬) ও ইরাবতী লাবেতে (৮০)। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজের কোনো কাজে আসছেন না—এই কারণ দেখিয়েছিলেন তাঁরা।

স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের আইন চালু আছে। সাধারণত অসুস্থতার কারণে জীবনসংকটে থাকা রোগীদের পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

স্বেচ্ছায়মৃত্যুর অনুমতি দিয়েছে ভারত

আপডেট টাইম ০৭:৩৯:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মার্চ ২০১৮

মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক:: নাগরিকদের পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু (প্যাসিভ ইউথানেসিয়া) চাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল শুক্রবার এক আদেশে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কোনো ব্যক্তির লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যু ত্বরান্বিত করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা যাবে। জীবনসংকটে থাকা রোগীর ক্ষেত্রেও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে করা লিখিত আবেদনে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি জানাতে পারবেন, তিনি বেঁচে থাকতে চান নাকি মরে যেতে চান। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা বলেছেন, মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং এ বিষয়ে কোনো ব্যক্তির লিখিত ইচ্ছা আদালতের অনুমোদনক্রমে কার্যকর করা যাবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কীভাবে কার্যকর হবে—তার বিস্তারিত নির্দেশনাও শুক্রবারের রায়ে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। তবে কোনো রোগীকে জোর করে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করানো হয়েছে কি না, তা কীভাবে আদালত যাচাই করবেন, সেটি স্পষ্ট হয়নি আদালতের রায়ে।

আদালত আরও বলেছেন, গুরুতর অসুস্থ ও জীবনসংকটে থাকা ব্যক্তির আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা আদালতে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করতে পারবেন। এরপর আদালতের নিয়োগ করা চিকিৎসকের একটি দল সিদ্ধান্ত নেবে, এর আদৌ প্রয়োজন আছে কি না।

পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কি?
জীবনসংকটে থাকা একজন রোগীর স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকর করা যায় দুটি উপায়ে। একটি হলো, রোগীকে জীবিত রাখতে যেসব জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা থেকে বিরত থাকবেন চিকিৎসকেরা। অন্যটি হলো, যে উপায়ে রোগী জীবিত আছেন, তা বন্ধ করে দেওয়া।
এ ক্ষেত্রে জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া যাবে। নল দিয়ে কৃত্রিমভাবে খাবার সরবরাহ করার প্রক্রিয়া বন্ধ করা যেতে পারে। আবার পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকরের জন্য জীবন রক্ষাকারী অস্ত্রোপচার না করা ও ওষুধ না দেওয়াও একটি পদ্ধতি।

স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আদালতে করা এই আবেদনে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সময় আবেদনকারীরা বলেছিলেন, যদি কোনো ব্যক্তি জীবনসংকটে থাকেন, তবে মর্যাদার সঙ্গে মৃত্যুর অধিকার তাঁর আছে।

আবেদনকারীদের প্রধান বিপুল মুদগাল বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী রায়। কারণ এটি এমন সময়ে ঘোষিত হয়েছে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষকে কৃত্রিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এটি করার জন্য হাসপাতালগুলো অনেক অর্থও কামাই করে।’

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের অক্টোবরে এক পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। তবে আদালত বলেছিলেন, কোনো রোগী যদি অত্যন্ত সংকটাপন্ন বা অপরিবর্তনীয় কোমায় চলে যান, সে ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সনদ পাওয়া সাপেক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

গত জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের এক নিঃসন্তান দম্পতি স্বেচ্ছামৃত্যুর (ইউথানেসিয়া) অনুমতি চেয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এ নিয়ে তখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বেশ তোলপাড় হয়। ওই দম্পতি হলেন নারায়ণ লাবেতে (৮৬) ও ইরাবতী লাবেতে (৮০)। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজের কোনো কাজে আসছেন না—এই কারণ দেখিয়েছিলেন তাঁরা।

স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের আইন চালু আছে। সাধারণত অসুস্থতার কারণে জীবনসংকটে থাকা রোগীদের পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।