একইসঙ্গে খসড়ায় ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে সরকারি দপ্তরসমূহ বেতন-ভাতা, পেনশন, অনুদান, বৃত্তি প্রদান করবে অনলাইন ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায়।
আর এই আইনের বিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করা যাবে বলেও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এসব লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল গভর্ন্যান্স আইন, ২০২০’- এর খসড়া তৈরি করে নাগরিকদের মতামত চেয়ে সম্প্রতি ওয়েবসাইটে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই খসড়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে দাপ্তরিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনায়ন এবং সেবা পদ্ধতি সহজিকরণে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনাকালে অনলাইনে হোম ওয়ার্ক এবং ভার্চুয়াল আদালতের আইনি কাঠামো প্রদানের পর নতুন আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
খসড়ায় ৬টি অধ্যায় রয়েছে, এর প্রথম অধ্যায়ে আইনের প্রয়োজনীতা ও পটভূমি এবং বিভিন্ন সজ্ঞা ও শব্দের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, ডিজিটাল গর্ভমেন্ট বলতে এমন কোনো পদ্ধতি, যার মাধ্যমে কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি কার্যক্রম সঠিক ও সুচারুরুপে সম্পাদন করা এবং সেবাসমূহ দ্রুত জনগণের নিকট পৌঁছানো যায়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত প্রয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো তথ্য-উপাত্ত হস্তাক্ষর বা মুদ্রাক্ষর অথবা কোনো উপায়ে লিখিত বা মুদ্রিত আকারে দাখিল করার কোনো শর্ত উল্লেখ থাকলেও তা ডিজিটাল উপায়ে দাখিল করা যাবে।
ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দলিল সম্পাদন, মূল দলিল বা সত্যায়িত অনুলিপি উপস্থাপন, চুক্তি সম্পাদন করা যাবে এবং ডিজিটাল রেজিস্টারে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যাবে।
সরকারি দপ্তরসমূহ অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন, ডিজিটাল নথি এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন ডাটাবেইজ, কনটেন্ট, সফটওয়্যারের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডার তৈরি ও পরিচালনা করতে পারবে। আর তথ্য যাচাইয়ে পারস্পারিক সহায়তার লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তঃচলমানতার ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনের খসড়ায় তৃতীয় অধ্যায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের কথা বলা হয়েছে। জনগণের নিকট তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। আর প্রত্যেক সরকারি দপ্তরে তথ্য ও সেবা সম্বলিত একটি বাতায়ন থাকবে, যা জাতীয় তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত থাকবে এবং দপ্তরসমূহ নিজ নিজ বাতায়নে তথ্য, উপাত্ত ও সেবা সন্নিবেশ এবং হালনাগাদ করবে।
সকল সরকারি দপ্তর কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রেশন এবং দাপ্তরিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে। পাশাপাশি কর্মচারীদের জন্য ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এই মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে সকল দাপ্তরিক যোগাযোগ হবে ডিজিটাল। সরকারি দপ্তরসমূহে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্ম সম্পাদনে সরকার সকল কর্মচারীকে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সনদ প্রদান করবে।
ডিজিটাল নথির মাধ্যমে কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সকল সরকারি দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন এবং নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি কর্মচারীগণ কর্মস্থলের বাইরে দেশে অথবা বিদেশে অবস্থানকালেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দাপ্তরিক কর্ম সম্পাদন করতে পারবেন।
অডিও ভিজ্যুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও কনফারেন্স বা সভা করা যাবে এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি, সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা করা যাবে। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ই-প্রশিক্ষনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়ায়।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে আইনের খসড়ায়।
চতুর্থ অধ্যায়ে ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থাপনায় সরকারি দপ্তরসমূহের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও, ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; যাতে প্রচলিত আইনের অধীন সরকারি দপ্তরসমূহে আদায়যোগ্য অর্থ ডিজিটাল পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। সরকারি দপ্তরসমূহ বেতন-ভাতা, পেনশন,আনুতোষিক, অনুদান, ক্ষতিপূরণ, বৃত্তি প্রদান করবে।
সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর পরিচয় নিশ্চিতকরণে সরকার নির্দেশিত পদ্ধতি এবং পরিচিতিজ্ঞাপক তথ্য উল্লেখ থাকবে। সেবা গ্রহণে নাগরিকদের যে কোনো অভিযোগ প্রতিকারের লক্ষ্যে সমন্বিত অনলাইন অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা তৈরি করবে।
পঞ্চম অধ্যায়ে তথ্যের নিরাপত্তায় সরকারি দপ্তরের তথ্য ভাণ্ডারের নিরাপত্তা রক্ষা এবং গোপনীয়তা রক্ষা এবং ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়মিত অডিটের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
আন্তঃদপ্তর সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে, ষষ্ট অধ্যায়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া, কোনো অস্পষ্টতা তৈরি হলে স্পষ্টীকরণ করতে পারবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আইনের বিদান প্রতিপালনে ব্যর্থতা নিয়ে বলা হয়েছে, এই আইনের বিধান বাস্তবায়নে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা যাবে।